এসো খড়ে সুঁই খুঁজি

Custom Search

Tuesday, December 19, 2017

Tyrannosaurus rex

Tyrannosaurus rex ছিলো ভূমিতে বসবাসকারী বড় শিকারি ডাইনোসর। Jurassic Park চলচ্চিত্র দেখে আমাদের ধারণা হয়ে থাকতে পারে যে (আমিও তাই জানতাম) ওরা অনেক দৌড়াতে পারতো, শিকার ও চলাচলের জন্য। তবে নতুন গবেষণা মতে, তারা দৌড়াতে পারতো না, দৌড়ানোর চেষ্টা করলে বরং তাদের পায়ের হাড় ভেঙে যেতো।
অর্থাৎ ফলাফল মতে তারা উচ্চ গতির অভিযানকারী শিকারী ছিলো না, এবং সম্ভবত এটি অ্যামবুশের মাধ্যমে অথবা ধীরে ধীরে অন্যান্য কম-অ্যাথলেটিক ডাইনোসরগুলির সাথে হালকা ধাওয়া করে শিকারকে হত্যা করতো।
ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই ৭ টন ডাইনোসরের বিভিন্ন গতি এবং চলাচলে তার কঙ্কালের উপর লোড হিসাব করার জন্য একটি বিস্তারিত শারীরিক কম্পিউটার মডেল তৈরি করেন। তারা দেখেন যে দৌড়ানো, অর্থাৎ ভূমি থেকে একই সাথে দুটি পা উপরে তুলে দ্রুত চলাচল করতে গেলে তাদের হাড় ভেঙে যেত। PeerJ নামক উন্মুক্ত গবেষণা জার্নালে গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে।




Saturday, December 2, 2017

দূরবীন: প্রবাসে ও দেশে বর্ণবাদের স্বরূপ

প্রবাস জীবনে প্রথম কয়েক বছরের সংগ্রাম হচ্ছে একটি অচেনা দেশে কিংবা সংস্কৃতিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া। নিজেকে নিজে আবিষ্কারের সংগ্রাম ও পেরে ওঠার গল্প। সবাই যে পেরে ওঠে,তা নয়। তাই ২৬ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেও কোনো বৃদ্ধ চলে যান পার্কে কিংবা মন খুলে কথা বলতে চলে যান বাঙালি এলাকায়। হয়তো ঘুরে-ফিরে মানুষ নিজের অস্তিত্বকে খোঁজেন। মাটি, দেশ, সংস্কৃতি বা মূল্যবোধ ইত্যাদি ভারি শব্দগুলোর পাল্লায় নিজেকে মেপে দেখতে চান। সবার জন্য যে এই মানিয়ে নেওয়া সহজ তা নয়। যে দেশে বা সংস্কৃতিতে এসে পা দিলেন- অভিবাসীদের প্রতি তাদের মনোভাব ও আচরণ কেমন, তা অনেকভাবে প্রভাবিত করে। যেমন- আপনি হয়তো চাকরি খুঁজছেন এবং কোনও কোম্পানির প্রার্থীনির্বাচক হয়তো একজন বর্ণবাদী লোক। তাহলে আপনার চাকরি পাওয়া কঠিন হবে, খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হবে।

সবচেয়ে ছোট বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি: স্পেইসস্যুট


সবচেয়ে ছোট বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি


বিক্রির জন্য: স্পেইসস্যুট। ছোট ফুটো আছে। একবার পরিহিত। সস্তা।

মূল:

by Seth Chambers
For sale: spacesuit.
Small leak.
Worn once.
Cheap.

Wednesday, November 29, 2017

উদ্বেগ কমানো গান: Marconi Union এর Weightless


আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি অনুভব করে নানাবিধ চাপের কারণে, অশান্তি অনিশ্চয়তার কারণে। স্ট্রেস হৃদরোগ, স্থূলতা, বিষণ্নতা, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, হাঁপানি ইত্যাদি স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বাড়ায় বা বৃদ্ধি করে। হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ডের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিস, আলঝেইমার ইত্যাদির চেয়ে কাজের চাপে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। এবং টিকে থাকা ও শান্তি স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অনেকে বিভিন্ন ধরণের কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন, ধ্যান করা, লেখালেখি করা, ছবি আঁকা, ব্যায়াম করা ইত্যাদি। অনেকে গান ও সংগীত চর্চা করেন কিংবা শুনেন।

সংগীত যে অনুভূতির পরিবর্তন করে এটি নতুন কিছু নয়। গানের সাথে আমরা নাচি, উত্তেজনা অনুভব করি, বিষণ্ন-ও হই। পৃথিবীর প্রতিটি সংস্কৃতিতে সংগীত রয়েছে, তাই ধরে নেয়া যায় যে সংগীতের প্রভাব অনুভূতি ও আচরণের উপর অনেক বেশি। কিন্তু কথা হচ্ছে যে সংগীত কি উদ্বেগ কমানোর পন্থা হতে পারে?

পারে।

ইউকে (UK) এর মাইন্ডল্যাব ইন্টারন্যাশনাল গবেষণাসংস্থার এক গবেষণা মতে সংগীত উদ্বেগ কমাতে পারে, প্রায় ৬৫%! গবেষণাটির জন্য গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের কিছু পাজল বা ধাঁধা সমাধান করতে দেন এবং তাগিদ দিতে থাকেন দ্রুত সমাধান করা জন্য; ফলে অংশগ্রহণকারীরা স্ট্রেস ও উদ্বেগ অনুভব করেন। তারা ধাঁধা সমাধানের সময়ে বিভিন্ন ধরণের গান ও সংগীত শুনতে থাকে। গবেষকরা এই সময় তাদের বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা যেমন, রক্তচাপ, হৃদকম্পনের হার, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ করে।

দেখা যায় যে বিভিন্ন ধরণের গান ও সংগীত অংশগ্রহণকারীদের উদ্বেগ কমায় বিভিন্ন হারে। তবে, বিশেষত, Marconi Union এর Weightless গানটি শোনার ফলে অংশগ্রহণকারীদের সামগ্রিক উদ্বেগ প্রায় ৬৫% কমে গিয়েছিলো এবং তাদের শারীরবৃত্তীয় অবস্থার হার ৩৫% কমেছিলো।

মূলত, Marconi Union তাদের গানটি তৈরি করেছিলো শব্দ থেরাপিস্টদের (sound therapist) সহায়তা নিয়ে। কৌশলে হারমোনি, রিদম, বেইস ইত্যাদির সম্বন্বয় এমনভাবে করা হয়েছিলো যে শুনলে শ্রবণকারীর হৃদস্পন্দন হ্রাস, রক্তচাপ কমে এবং স্ট্রেস হরমোন কোর্টিসল (cortisol) হ্রাস পায়।

এছাড়া, নিচের গানগুলো-ও উদ্বেগ হ্রাসের ক্ষেত্রে সহায়ক:
10. "We Can Fly," by Rue du Soleil (Café Del Mar)
9. "Canzonetta Sull'aria," by Mozart
8. "Someone Like You," by Adele
7. "Pure Shores," by All Saints
6. "Please Don't Go," by Barcelona
5. "Strawberry Swing," by Coldplay
4. "Watermark," by Enya
3. "Mellomaniac (Chill Out Mix)," by DJ Shah
2. "Electra," by Airstream
1. "Weightless," by Marconi Union


Wednesday, May 24, 2017

অষ্টম অধ্যায়: গ্র্যান্ড ডিজাইন বা মহিমান্বিত নকশা (The Grand Design)

অষ্টম অধ্যায়গ্র্যান্ড ডিজাইন বা মহিমান্বিত নকশা (The Grand Design)
এই বইটিতে আমরা বর্ণনা করেছি কীভাবে সূর্য চাঁদ অন্যান্য গ্রহ এবং জ্যোতিষ্কদের গতির নিয়মানুবর্তিতা আমাদের বুঝতে সাহায্য করেছে যে তারা অলৌকিক কোনো কিছুর খেয়ালপনা কিংবা ঈশ্বর বা দেবদেবীদের মর্জির উপর নির্ভরশীল নয়, বরং সুনির্দিষ্ট কিছু সূত্রের কারণে আবর্তিত হচ্ছে। প্রথমদিকে এইরকম সূত্রের অস্তিত্বের দেখা মিলেছিলো জ্যোতির্বিদ্যায় (অথবা জ্যোতিষশাস্ত্রে, যেটিকে জ্যোতির্বিদ্যার মতো প্রায় একই ব্যাপার বলে মনে করা হতো)। পৃথিবীতে বিদ্যমান বস্তুসমূহের মতিগতি এতোই জটিল যে এবং সেগুলো এতো সব বল দ্বারা প্রভাবিত যে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন বা সূত্র উপলব্ধি করতে পারা অসম্ভব ছিলো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে, জ্যোতির্বিদ্যা ছাড়া-ও বিভিন্ন কর্মপরিধিতে নতুন সূত্রাবলি আবিস্কৃত হয়েছিলো এবং এটি একসময় আমাদের বৈজ্ঞানিক নিশ্চয়তাবাদে পৌঁছাতে সাহায্য করে অর্থাৎ এমন কিছু সূত্রাবলি আছে যে কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মহাবিশ্বের সুনির্দিষ্ট অবস্থা জানা গেলে পরবর্তী সময়ে মহাবিশ্ব কীভাবে বিকশিত হবে সেটি নির্ণয় করা যাবে। এই সূত্রাবলি সকল সময়ে এবং সকল ক্ষেত্রে বলবৎ হওয়ার মতো হতে হবে; অন্যথায় এগুলো সূত্র হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এই ব্যাপারে কোনো ব্যতিক্রম বা অলৈৌকিকতা গ্রহণযোগ্য নয়। ঈশ্বর কিংবা দেবদেবীরা মহাবিশ্বের চলমান প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারবেন না।

Thursday, May 18, 2017

মহিমান্বিত নকশা (The Grand Design): পর্ব-৭ - প্রতীয়মান অলৌকিকতা (Apparent Miracle)

সপ্তম অধ্যায়প্রতীয়মান অলৌকিকতা (Apparent Miracle)
চৈনিকদের মাঝে প্রচলিত গল্প মতে সাঁই ডায়নাস্টি (খ্রিষ্টপূর্ব ২২০৫-১৭৮২) স্থিতিকালের একসময় আমাদের মহাজাগতিক পরিবেশ হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলো। আকাশে দশটি সূর্য আবির্ভূত হয়েছিলো। পৃথিবীর মানুষজন ভীষণ তাপের কারণে ভুগতে লাগলো, তাই সম্রাট এক বিখ্যাত তীরন্দাজকে হুকুম দিয়েছিলেন বাড়তি সূর্যগুলোকে কতল করার জন্য। তীরন্দাজকে এমন একটি ঔষধের বড়ি দিয়ে পুরষ্কৃত করা হয়েছিলো যেটি খেলে সে অমরত্ব লাভ করবে, কিন্তু তার স্ত্রী বড়িটি চুরি করে। সেই অপরাধে স্ত্রীকে চাঁদে নির্বাসিত করা হয়েছিলো।

Tuesday, May 16, 2017

13 Reasons Why ও কপিক্যাট আত্মহত্যা

নেটফ্লিক্সের সিরিজ 13 Reasons Why নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। সিরিজটির মূল কাহিনি হচ্ছে যে উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করে এবং ১৩টি টেপ রেখে যায় তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে একেক ব্যক্তির অবদান সম্পর্কে- একেকটি পর্ব একেকটি টেপ নিয়ে, যেখানে আত্মহত্যার পেছনে একেকজনের প্রভাব চিত্রিত হয়েছে। শেষ পর্বে এসে আত্মহত্যাকে ভয়ানকভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে, খানিকটা গ্লোরিফাই-ও করা হয়েছে।
সিরিজটি নিয়ে একেকজনের একেক অভিমত; কেউ বলছেন যে বেশ ভালোভাবে একটি কিশোরীর মানসিক অবস্থা এবং কেনো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আত্মহত্যাপ্রবণতা নিয়ে কথা বলা দরকার, বিশেষ করে যাদের বয়েস ১৫-২৪ তাদের মাঝে আত্মহত্যাপ্রবণতা অনেক; কারণ, এই বয়েসসীমাটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ, মানুষের মস্তিষ্ক পুরোপুরি বিকশিত হতে প্রায় ২৫ বছর লাগে, ফলে এই বয়েসসীমার অনেকের ইনহিভিশন কম থাকে, এছাড়া চিন্তাচেতনা, দূরদর্শীতা, বুদ্ধির ধার ইত্যাদি একজন পূর্ণবয়ষ্কের মতো নয়। অন্যান্য বয়েসসীমার তুলনায় এই বয়েসসীমার ব্যক্তিদের মাঝে আত্মহত্যার হার এমনিতেই বেশি। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা দরকার যে সিরিজটি আত্মহত্যার মতো সংবেদনশীল ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা, সচেতনতার পথ খুলে দিলে-ও এটি কিন্তু এই ধারণা-ও তুলে ধরে যে আত্মহত্যা সমস্যার সাথে মোকাবেলার করার একটি উপায় (হয়তোবা শেষ উপায়), অথচ আত্মহত্যা কখনোই সমস্যা মোকাবেলার উপায় নয়।
আপনি ভাবতে পারেন যে আরে সিরিজ দেখে তো আমি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে যাবো না, কিংবা কোনো কিশোরকিশোর হবে না। তবে মনে রাখা দরকার যে আত্মহত্যার ব্যাপারটি ছোঁয়াচে রূপ নিতে পারে, অনেক সময় দেখা যায় যে একেকটি অঞ্চলে একেক সময়ে গুচ্ছ গুচ্ছ আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, একেকজনের দেখাদেখি আরেকজন করার সাহস পায়, যেটাকে কপিক্যাট আত্মহত্যা (copycat suicide) বলতে পারেন। যেমন- নির্ভানা (Nirvana) ব্যান্ডের গায়ক কার্ট কোবেইন (Kurt Cobain) আত্মহত্যা করেছিলো তখন আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের কিশোরকিশোরীদের (বিশেষ করে তার ভক্ত ও তার এলাকার) মাঝে আত্মহত্যার হার বেড়ে গিয়েছিলো; এটি তুলে ধরে যে মানুষ আত্মহত্যা করা শিখে, এবং একেকজনের আত্মহত্যা অন্যজনকে উদ্বুদ্ধ করে। ঠিক তেমনি নেটফ্লিক্সের সিরিজ কিশোরকিশোরিদের মাঝে আত্মহত্যাকে লঘু ব্যাপার হিসেবে তুলে ধরতে পারে, যেহেতু একটি মেসেজ নেয়ার প্রবণতা একেকজনের কাছে একেক রকম, তাই নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না একেকজন কিশোরকিশোরীর মনে প্রভাব কেমন হবে; ঝুঁকিপূর্ণ কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
নাটক, বইপত্তুর, অর্থাৎ শিল্প বা শিল্পকর্মের প্রভাবে আত্মহত্যার ঘটনা কিন্তু নতুন কিছু নয়। যেমন, ১৭৭৪ সালে জোহান উলফগ্যাং ভন গেইথের উপন্যাসে, The Sorrows of Young Werther, নায়ক ওয়ার্থারের বন্ধু আলবার্টের সাথে বিয়ে হয়ে যায় তার প্রেমিকা শার্লোটের, হৃদ্ঘটিত ব্যথাবেদনা সহ্য না করতে পেরে আলবার্টের পিস্তল দিয়ে নিজেকে নিজে মেরে ফেল। পরে সেইসময়ে ইউরোপে অনেক যুবক আত্মহত্যা করেছিলো, যারা ওয়ার্থারের মতো পোশাক পরে এবং একই ধরণের পিস্তল ব্যবহার করেছিলো আত্মহত্যার জন্য। অনেকের শবদেহের পাশে উপন্যাসটি আত্মহত্যার পাতাটি খোলা অবস্থায় পাওয়া-ও যায়! অর্থাৎ, ভালো শিল্প বাস্তব ও কল্পনার জগৎটাকে ধোঁয়াশা করে তুলতে পারে; বিশেষ করে মানসিকভাবে (ও শারীরিকভাবে) দুর্বলদের ক্ষেত্রে)। আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করা অন্যতম গবেষক ডেইভিড ফিলিপস ওয়ার্থার প্রভাব (The Werther Effect) শব্দগুচ্ছ উদ্ভাবন করেন এই ধরণের কপিক্যাট আত্মহত্যার জন্য। তার গবেষণার অন্যতম একটি সুপারিশ হচ্ছে যে আত্মহত্যাস-সংক্রান্ত ঘটনাবলি যেনো সংবাদপত্রের সামনের পৃষ্ঠায় না ছাপানো হয়।
আরেকটি ঘটনার কথা বললে সংবাদপত্র ও এইসব মাধ্যমের প্রভাব ভালোভাবে তুলে ধরা যাবে। ১৯৮০ সালের দিকে ভিয়েনাতে পাতালরেলে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়ে যায়, সংবাদপত্রগুলো-ও নিয়মিত ফলা করে এই ব্যাপারে রিপোর্ট করতে থাকলো। পরে শহরের প্রধান সংবাদপত্রগুলো সিদ্ধান্ত নেয় যে আত্মহত্যার ঘটনা আর ছাপাবে না। দেখা গেলো যে আত্মহত্যার ঘটনা কমে আসে। অর্থাৎ, আমরা যেসব মিডিয়া ব্যবহার (ও গলদ্গরণ) করি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সেগুলোর প্রভাব অনেক।
সেলেব্রেটি বা তারকাদের আত্মহত্যার ঘটনা যে সাধারণ জনসাধারণের মাঝে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় সেটির আরেকটি নির্দশন হচ্ছে যে মেরিলিন মনরোর মৃত্যুতে ৩০ বছর বয়েসী নারীদের মাঝে আত্মহত্যার ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিলো। আমাদের দেশে-ও এই ধরণের উদাহরণ আছে, একটু ব্যতিক্রম যদিও। হুমায়ূন আহমেদের বাকের ভাইয়ের কথা মনে আছে? যদি-ও বাকের ভাই আত্মহত্যা করে নি, বরং তার ফাঁসি দেয়া হচ্ছিলো এবং সেই ফাঁসির বিরুদ্ধে জনগণের মিছিল, নাটকের শ্যুটিং বন্ধ করা এইসব ঘটনা নির্দেশ করে কীভাবে কাল্পনিক চরিত্রের সাথে বাস্তবের মানুষগুলো মেলবন্ধন খুঁজে নিতে পারে; এবং সেই ক্ষেত্রে এইসব সাদৃশ্য মানুষকে নানাবিধ সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত করতে পারে।
যাইহোক, টিভি এবং চলচ্চিত্রে আত্মহত্যার কল্পিত চিত্রকলার প্রভাব কী সেটি নিয়ে গবেষণার অনেক জটিল। কিছু কিছু গবেষণা সাধারণ জনগণের উপর আত্মহত্যা চিত্রায়নের প্রভাব ফেলে-ও কিছু কিছু গবেষণা তেমন কোনো প্রভাব পায় নি। তবে এটি নিশ্চিত যে কপিক্যাট আত্মহত্যা সত্য, এবং আমাদের উচিত ওয়ার্থার প্রভাব সম্পর্কে সচেতন থাকা।
ইতিমধ্যে কানাডার কিছু ইস্কুল বোর্ড নেটফ্লিক্সের এই সিরিজ সম্পর্কে অভিভাবক ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের সতর্ক করে দিয়েছে, বিশেষ করে সিরিজটির গ্রাফিক উপাদান (যার প্রভাব কম বয়েসীদের উপর বেশি) ও আত্মহত্যাকে বেশি মাত্রায় ফুটিয়ে তোলার কারণে। যেমন, সিরিজটাতে আত্মহত্যা-সংক্রান্ত ব্যাপারকে গ্ল্যামোরাইজেশন করা হয়েছে, একই সাথে পেশাদারি লোকদের কাছ থেকে (যেমন- মনোবিজ্ঞানী, মনোচিকিৎসক, কিংবা ডাক্তারদের) প্রয়োজনে সাহায্য ও পরামর্শ চাওয়ার ব্যাপারটিকে নেতিবাচকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, ফলে অপ্রাপ্তবয়ষ্করা প্রয়োজনের সময়ে সাহায্য ও পরামর্শ চাওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ করতে পারে।
অন্টারিওর একটি ইস্কুল বোর্ড অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন যেনো তারা সন্তানদের (বয়েস ১৮ এর কম) সাথে এক সাথে সিরিজটি দেখেন, ফলে সন্তানদের কোনো প্রশ্ন কিংবা জিজ্ঞাসা থাকলে যেনো সেগুলো উত্তর দেয়া যায়।
সবচেয়ে বড় কথা, আপনার সন্তান কিংবা কিশোর বয়েসী ভাইবোনদের সাথে আত্মহত্যা নিয়ে কথা বলতে পারে, জিজ্ঞেস করতে পারেন অথবা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন তাদের মাঝে আত্মহত্যাপ্রবণতা আছে কিনা; অধিকাংশ আত্মহত্যার আগেই আত্মহত্যাকারী প্রচুর আলামত দেখায় (যেমন- বন্ধুবান্ধবদের পরিকল্পনা-সংক্রান্ত ব্যাপারে প্রশ্ন করা, জিনিসপত্র জোগাড় করা)। মনে রাখা দরকার যে মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে খোলামেলা আলোচনার দরকার অনেক বেশি, অনেক সময় আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছুর সমাধান পাওয়া যায়, অথবা, কথা বলার মানুষ পেলে অনেকের ভার লাগব হয়।
এর মানে এই না যে এই ধরণের সিরিজ দেখা বন্ধ করে দেয়া উচিত। বরং এই ধরণের সিরিজ দেখার ফলে যেসব জিজ্ঞাসা জন্মে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার, সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। একটা ব্যাপার নেটফ্লিক্স সিরিজটা কৃতিত্বের দাবিদার। বুলিং, ধর্ষণ, আত্মহত্যা ইত্যাদি ব্যাপারে আলোচনাকে সামনে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছে, অনেকে এই ব্যাপারে কথা বলছে, যা একদিকে সচেতনা সৃষ্টির প্রথম ধাপ।


মহিমান্বিত নকশা (The Grand Design): পর্ব-৬ - আমাদের মহাবিশ্ব নির্বাচন (Choosing Our Universe)

মধ্য আফ্রিকার বশঙ্গো জাতির মতে, আদিতে কেবল ছিলো অন্ধকার, জল, এবং মহান দেবতা সুম্বা। একদিন পেটের ব্যথায় কাতর হয়ে সুম্বা সূর্যকে বমি করে উগলে দিয়েছিলেন। সেই সময় সূর্য কিছু পানি শুকিয়ে ফেলে, ফলে স্থলভাগের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সুম্বা তখনো ব্যথায় কাতর ছিলেন, এবং আরো বমি করলেন। ফলে চাঁদ, নক্ষত্র, এবং পরে অন্যান্য প্রাণী: চিতাবাঘ, কুমির কচ্ছপ এবং সবশেষে মানুষের আবির্ভাব হয়েছিলো। মধ্য আমেরিকা এবং মেক্সিকোর মায়ানদের মাঝে-ও একই গল্প প্রচলিত আছে- আদিতে ছিলো সমুদ্দুর, আকাশ এবং স্রষ্টা। মায়ান কিংবদন্তী মতে, স্রষ্টা অখুশি ছিলেন কারণ তার গুণকীর্তন করার মতো কেউ ছিলো না, তাই তিনি পৃথিবী, পাহাড়-পর্বত, গাছগাছালি এবং অধিকাংশ জীবজন্তুর সৃষ্টি করলেন। কিন্তু জীবজন্তুরা কথা বলতে পারতো না বিধায় তিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথমে তিনি কাদা ও মাটি দিয়ে মানুষ বানিয়েছিলেন, কিন্তু তারা কেবল প্রলাপ বকতো। তিনি তাদের লুপ্ত করে ফেললেন, এবং আবার বানানোর চেষ্টা করলেন, এইবার কাঠ থেকে মানুষ সৃষ্টি করলেন। কিন্তু সেই মানুষগুলো হলো একঘেয়ে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলবেন, কিন্তু তারা বনের দিকে পালিয়ে গেলো, পথিমধ্যে ক্ষয়ক্ষতির ফলে তাদের রূপের কিছুটা পরিবর্তন ঘটার কারণে আমরা আজকাল যেটিকে বানর বলে জানি সেটির সৃষ্টি হলো। ওই চরম ব্যর্থতার পরে, স্রষ্টা একটি কার্যকরী সূত্রের নাগাল ফেলেন, এবং প্রথম মানুষ সৃষ্টি করলেন সাদা ও হলুদ ভুট্টা থেকে। আজকাল আমরা ভুট্টা থেকে ইথানল তৈরি করি, কিন্তু এখন পর্যন্ত স্রষ্টার মানুষ সৃষ্টির কৃতিত্বের মতন কিছু মেলাতে পারি নি।

Wednesday, May 3, 2017

একজন কাসেম বিন আবুবাকার, পেডোফিলিয়া, ও বাঙলাদেশের মিডিয়া

কাসেম বিন আবুবাকার 'লেখক' হিসেবে যাই হোক না কেনো, তার বক্তব্য ও লেখনী পড়ে মনে হয় লোকটি একজন পার্ভাট, সম্ভবত একজন পেডোফাইল (pedophile)। উচিত তাকে আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা, সাইকোলজিক্যাল টেস্ট করা (পেডোফিলিয়ার জন্য), এবং তার মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

তিনি মিডিয়ায় যে বক্তব্য দিয়েছেন- শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া তার এক ছাত্রীর প্রেমে পড়া এবং তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, এটি পেডোফিলিয়ার লক্ষণ। তার প্রচুর লেখনীতে-ও এইসব উপাদান আছে (যেমন- ছোট মেয়ে লজিং মাস্টারের প্রেমে পড়ে এবং পরে তাদের মাঝে প্রেম হয় ইত্যাদি)। অন্য কোনো দেশ হলে (যেসব দেশে ধর্ষণ, নারী ও শিশু অধিকার, এবং শিশুদের প্রতি যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে যথেষ্ট আইন আছে এবং তা প্রয়োগ করা হয়) এতোদিনে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। অথচ আমাদের দেশে অনেকে ব্যাপারটাতে "রোমান্টিকতা" খুঁজে পাচ্ছেন, মিডিয়া এই পার্ভাটকে মাথায় তুলছে, সাক্ষাৎকার নিচ্ছে।

Thursday, April 20, 2017

Wallingford Back Mine – Mulgrave et Derry, Canada

Wallingford Back Mine – Mulgrave et Derry, Canada এটি হচ্ছে কানাডার ক্যুবেক প্রদেশে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত খনির ভেতরে, বর্তমানে জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া। বাইরে বনাঞ্চল, লেক আছে; সাঁতার ও হাইকিং ইত্যাদির ব্যবস্থা আছে। দারুণ জায়গা। সামারে ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত জায়গা।সামারে ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত জায়গা। "What was once the largest mine in North America has left behind a hollow hill filled with bright blue waters. ... The Waillingford-Back Mine is located north of Buckingham, Quebec. From Buckingham, take highway 309 for approximately 13 kilometers to Chemin de la mine." http://ift.tt/2pWhVsC

Monday, April 10, 2017

অটিজম: কিছু কারণ, কিছু ভুল ধারণা ও কিছু করণীয়

অটিজম: কিছু কারণ, কিছু ভুল ধারণা ও কিছু করণীয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনবক্সে একজন লিংক শেয়ার করে অভিমত জানতে চাওয়ায় উইমেন-চ্যাপ্টারে অটিজম নিয়ে প্রকাশিত লেখাটি পড়লাম। এক কথায় বলতে গেলে লেখাটি ভুলে ভরা এবং বিভ্রান্ত-সৃষ্টিকারী অটিজমের মতো একটি জটিল জেনেটিক-নিউরোবায়োলজিক্যাল-সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারকে শুধুমাত্র "অপুষ্টিজনিত" রোগ বা সমস্যা হিসেবে বর্ণনা করা ও চিকিৎসা-উপদেশ দেয়া জ্ঞানের অপরিপক্কতা, এবং অটিস্টিক শিশু ও তাদের অভিভাবকের জন্য বিভ্রান্ত-সৃষ্টিকারী ও অপমানসূচক।

অটিজমের অনেক কারণ আছে, নিত্যনতুন গবেষণায় আরো অনেক কারণ ও ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। কিন্তু অটিজম শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত কোনো ডিসঅর্ডার নয়।

পুষ্টির ব্যাপারটি এতোই মৌলিক যে আপনি ইচ্ছে করলে সব রোগের সাথে পুষ্টির সম্পর্ক খুঁজে পাবেন। কারণ শরীর ও মস্তিষ্কের যাবতীয় জৈবরাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজন জ্বালানি বা পুষ্টি। তবে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে যে অপুষ্টিজনিত চিহ্ন চোখে পড়ে সেগুলো রোগের কারণ নয়, বরং "ফলাফল" বা কনসিকিউয়েন্স। একটি উদাহরণ বা উপমা দিয়ে বুঝাই। যেমন ধরেন ভাইরাসের আক্রমণে আপনার হেপাটাইটিস এ হয়েছে, ফলে জ্বর, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদির কারণে আপনি শুকিয়ে গেলেন, খাদ্যে রুচি পান না, এবং স্বাভাবিকভাবে আপনার শরীরের পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেবে। এখন আপনি হেপাটাইটিস এ হওয়ার জন্য কি অপুষ্টিকে দায়ী করবেন? না, বরং ভাইরাসকে। অপুষ্টিজনিত চিহ্ন ও লক্ষণগুলো রোগের ফলাফল বা রোগের কারণে সৃষ্টি, রোগ সৃষ্টির কারণ নয়। অটিজমের ক্ষেত্রে-ও তাই। তবে পুষ্টিকর খাবার খেলে যেমন সব রোগের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়, পুষ্টিকর খাবার খেলে অটিস্টিক শিশুদের-ও উপকার হবে।

প্রতিদিনের সাধারণ কাজগুলো, যেমন, হাত দিয়ে কিছু খাওয়া, জুতোর ফিতে লাগানো, ইত্যাদি ব্যাপারগুলো আপনার আমার কাছে সহজ মনে হলে-ও অটিস্টিক শিশুদের জন্য এই কাজগুলো-ও বিশাল যুদ্ধজয়ের মতন। অনেক শিশু নিজের মতো করে অন্যান্য "স্বাভাবিক শিশুদের মতো খায় না, অনেক অভিভাবকরা-ও বাচ্চাদের পুষ্টির ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন না, ফলে অটিস্টিক শিশুরা প্রায় পুষ্টিহীনতায় ভুগে। তবে শুধুমাত্র পুষ্টিহীনতা অটিজম সৃষ্টি করে না, অটিজমের লক্ষণ ও অবস্থাকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে

পুষ্টিহীনতা অটিজম সৃষ্টিতে প্রভাব রাখতে পারে যদি এই পুষ্টিহীনতা ক্রিটিক্যাল পিরিয়ডে হয়ে থাকে। যেমন গর্ভকালীন সময়ে ও শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক বছরে। তবে গর্ভকালীন ও জন্ম-পরবর্তী প্রথম কয়েক বছরে যখন মস্তিষ্ক ও শরীরের বিকাশ দ্রুত গতিতে ঘটে তখন পুষ্টিহীনতায় ভুগলে শুধুমাত্র অটিজম না আরো অসংখ্য শারীরিক ও মানসিক রোগ ও ডিসঅর্ডার হতে পারে। পুষ্টিহীনতা কখনোই ভালো নয়, কিন্তু পুষ্টিহীনতা অটিজমের একমাত্র ও প্রধান কারণ নয় (যেটি শাহমিকার লেখায় দাবি করা হয়েছে)। পুষ্টিহীনতা বড়জোর অনেকগুলোর একটি কারণ কিংবা প্রভাবক হতে পারে (এই বিষয়ে পরবর্তীতে লিখছি)। আপনার শিশু যদি স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করে এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে তবে হঠাৎ পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার অটিজম হবে না, হওয়ার সম্ভাবনা ১% এর চেয়ে-ও কম। তবে পুষ্টিহীনতা অন্য অনেক রোগ হতে পারে।

অটিজমের সাথে পুষ্টিহীনতার সম্পর্ক আছে? আছে, তবে এটি কজ-এন্ড-ইফেক্ট (cause-and-effect) বা কারণ-ফলাফল ধরণের সম্পর্ক নয়, বরং কোরিলেশনাল। যেমন ধরুন, আমি এবং আপনি মানুষ (তাই আমাদের মধ্যে কোরিলেশন আছে), কিন্তু আমি আপনার জীবনকে পরিবর্তন করছি না আমূলভাবে, অর্থাৎ আমি কার্যকরী কারণ নই। কিছু কিছু গবেষণা অটিজমের সাথে পুষ্টিহীনতার সম্পর্ক খুঁজে পায় বা পাচ্ছে, এইসব গবেষণার অন্যতম ক্রটি হচ্ছে যে এগুলো অন্যান্য কারণগুলোকে (যেমন, বায়োলজিক্যাল কিংবা সাইকোলজিক্যাল) কন্ট্রোল না করেই উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, ফলে ফলাফল বড় আকারে দেখায়, কিন্তু বাস্তুবিকভাবে অন্যান্য কারণগুলোর প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে ধরলে পুষ্টিহীনতার প্রভাব ততো থাকে না। আর এই পুষ্টিহীনতা ক্রিটিক্যাল সময়ে হতে হয় (যেমন- গর্ভকালীন কিংবা জন্মের প্রথম কয়েক বছরে)।

অটিজম আসলে কী?

অটিজম হচ্ছে মূলত নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার, অর্থাৎ মস্তিষ্কের বিকাশ বয়স অনুসারে স্বাভাবিকভাবে হয় না, ফলে আচরণগত ও চিন্তাগত সমস্যা ও লক্ষণ দেখা দেয়। পৃথিবীতে ২০১৩ সালে প্রায় ২১.৭ মিলিয়ন মানুষ (শিশু ও পূর্ণবয়ষ্ক) অটিজম ও অটিজম-সংক্রান্ত ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গেছেআমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৮ জন শিশুর ১ জন অটিজম বা এই ঘরনার রোগে ভুগে। আরেক তুলনায় এই সংখ্যা অনেক বেশি, মূলত নিত্য নতুন গবেষণার ফলে দ্রুত ও দক্ষতার সাথে ডিসঅর্ডারটি সনাক্ত করতে পারা ও অভিভাবকের মাঝে এর সম্পর্কে সচেতনতার কারণে এই সংখ্যা পূর্বের তুলনায় বেশি।

এই ডিসঅর্ডারে ভোগা শিশুদের লক্ষণ দেখা দেয় জন্মের পরের প্রথম তিন বছরের মাঝেই। অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের মতো তাদের মোটর বিকাশ (যেমন, হাঁটা চলা করতে না পারা, বা বয়েসের তুলনায় দেরিতে করা) বাঁধাগ্রস্ত হয়। ভাষিক দক্ষতা রপ্ত হয় না, যেমন কথা বলতে পারে না সঠিকভাবে, বাক্য-গঠন কিংবা শব্দ গঠন করতে পারে না, শব্দের উচ্চারণ সঠিক হয় না, অনেক ক্ষেত্রে এই বাক্য ও শব্দ বারবার বলতে থাকে। কেউ কিছু বললে সেটি সহজে বুঝতে পারে না, যেমন কেউ কৌতুক করলে সেটিকে আক্ষরিক অর্থে নেয়, কৌতুক হিসেবে নয়। অন্যের ইনটেনশন কী তা অনুধাবন করতে পারে না, যেমন ধরুন আমি আর আপনি টেবিলের এই পাশে ও ওপাশে বসে আছি এবং আমাদের মাঝখানে টেবিলের উপর খাতা-কলম রাখা কিন্তু আমার নাগালের বাইরে। আমি খাতা-কলম নেয়ার জন্য হাত বাড়ালে কিন্তু নাগাল না পেলে অনেক স্বাভাবিক শিশুই সাহায্য করার জন্য খাতা-কলম আমার দিকে ঠেলে দেবে। অটিস্টিক শিশুরা এই ব্যাপারটি বুঝতে পারে না, বুঝতে কষ্ট নয়, অর্থাৎ তারা আমি কী চাইছি, কী করতে চাইছি এইসব সামাজিক কিউ সম্পর্কে ধারণা কম রাখে। মনোবিজ্ঞানে এই ব্যাপারটিকে বলে থিউরি অফ মাইন্ড (theory of mind), অর্থাৎ আমি যেভাবে চিন্তা ও কাজ করি সেই ধারার মতো অন্য কেউ চিন্তা ও কাজ না করতে পারে, অন্যের ইনটেনশন কী তা বুঝে উঠতে পারা এইসব। অটিস্টিক শিশুদের এইসব সামাজিক আচরণে সমস্যা পেতে হয়। অধিকাংশ শিশু একই কাজ বারবার করে (যেমন, কোনো খেলনা বা সামগ্রীকে একইভাবে বারবার ঘোরানো), অনেকে নিজের ক্ষতি-ও করে (যেমন- হাত পা কাটা, কিংবা মাথা দেয়ালে বাড়ি মারা ইত্যাদি)। শুধু তাই নয়, তারা তাদের মনোভাব প্রকাশ করতে পারে না বা প্রকাশ করতে বেগ পেতে হয় (ভাষিক জ্ঞান কম থাকায় ও মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকায়), যেমন ঠাণ্ডা লাগলে শিশু মুখ ফুটে না-ও বলতে পারে যে তার ঠাণ্ডা লাগছে। অধিকাংশের আচরণে কঠোর মনোভাব বা রিজিড ভাব থাকে, মানে একবার মাথায় যা আসে তাই নিয়ে থাকা, অর্থাৎ আচরণে ফ্লেক্সিবিলিটি না থাকা। অর্থাৎ সামাজিক, ভাষিক, চিন্তামূলক ও আচরণগত অনেক আচরণের সমষ্টি হচ্ছে অটিজম। একেক শিশুর মাঝে আচরণে এইসব অস্বাভাবিকতা কম বা বেশি পরিমাণে বা মাত্রায় থাকে, এই জন্যই এটি একটি স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, অর্থাৎ, মনে করুন যে ০ থেকে ১০০ পর্যন্ত দাগাঙ্কিত একটি স্কেল, একেক জনের আচরণের মাত্রা ০ থেকে ১০০ মাঝে একেক অংশে পড়ে; অর্থাৎ কারো ৫ হলে সে ততো বেশি অটিস্টিক নয়, আবার কারো ৮৫ হলে তার অনেক অটিস্টিক লক্ষণ আছে, এইরকম।

অটিজম ও অন্যান্য অনেক সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার হচ্ছে বায়োসাইকোসোশ্যাল (biopsychosocial) অসংখ্য কারণে সৃষ্টি। একেকজনের ক্ষেত্রে মূল কারণ একেক রকম হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি বা দুটি নয়- অনেকগুলো কারণ অথবা ফ্যাক্টরের সমষ্টি ও তাদের মিথস্ক্রিয়ার কারণে রোগের লক্ষণ দেখা দেয় বা ডিসঅর্ডার সৃষ্টি হয়অটিজমের ক্ষেত্রে জেনেটিক, ডেভেলপমেন্টাল (গর্ভকালীন ও নবজাতক সময়কালীন), পারিবারিক ও সামাজিক কারণ-ও আছে। তাই অটিজমকে শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা দূরদর্শীতা ও জ্ঞানের অভাব। আমি এই লেখায় একেকটি ক্যাটেগরির (জেনেটিক, ডেভেলপমেন্টাল, পারিবারিক ও সামাজিক একেকটি কারণ নিয়ে কথা বলবো সংক্ষেপে, তবে এই কারণগুলোই শেষ ও একমাত্র প্রধান কারণ নয়

জেনেটিক: অনেক অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রোমোজোমাল আবনরমালিটি (chromosomal abnormalities) দেখা যায়২, ৩যেমন অনেক অস্টিস্টিক শিশুদের (বিশেষত ছেলেদের) এক্স ক্রোমোজোম পুরোপুরি কপি হয় নি নিষেকের পরে ক্রোমোজোম সৃষ্টির সময় কিংবা কিছু অংশ বাদ পড়েছে বা "ভেঙে" গেছে। ছেলেদের মেয়েদের তুলনায় অটিজম ৪-৫ গুণ বেশি হয়, এর পেছনে অন্যতম কারণের একটি হচ্ছে ক্রোমোজোমে ক্রুটি। আমরা জানি যে পুরুষ বা ছেলে শিশুদের এক্স ক্রোমোজোম একটি মাত্র হয়ে থাকে (মায়ের কাছ থেকে পাওয়া), ফলে এই একমাত্র ক্রোমোজোমে সমস্যা থাকলে জিন এক্সপ্রেশনের সময় সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে মেয়েদের দুটো এক্স ক্রোমোসোম থাকে, ফলে একটিতে সমস্যা থাকলে অন্যটি ভালো হলে প্রভাব অতো ভয়াবহ বা নাজুক হয় না। এছাড়া অন্যান্য অনেক জেনেটিক কারণ আছে, যেমন, অনেক জিন একেকটি ক্রোমোজোমে যেখানে থাকার কথা সেখানে থাকে না, অন্যত্র স্থানান্তর করে; এছাড়া অনেক জিনে ক্রটি পাওয়া যায় (যেমন, জিনের এক্সপ্রেশনে গণ্ডগোল, প্রোটিন সংশ্লেষণে সমস্যা ইত্যাদি; এইসব কাজ শারীরবৃত্তীয় কাজের ও আচরণের "স্বাভাবিক বিকাশের" জন্য প্রয়োজন। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা এপিজেনেটিক কারণ-ও (অর্থাৎ জিনে সমস্যা না হলে জিনের প্রকাশে সমস্যা দেখা দেয়) তুলে ধরছে

নিউরোবায়োলজিক্যাল বা নিউরোসাইকোলজিক্যাল বা নিউরোডেভেলপমেন্টাল: অটিস্টিক শিশুদের মস্তিষ্কের আকার সাধারণত সাধারণ শিশুদের তুলনায় অনেক বড় হয়ে থাকে এবং স্নায়ুকোষগুলোর মাঝে অস্বাভাবিক রকমের বেশি সংযোগ লক্ষ্য করা যায়টার একটি বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা আছে। যাকগে, ভ্রুণের যখন প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রাইমিস্টারে মস্তিষ্কের গঠন ও সংযোগ সৃষ্টি হয় তখন অনেক অপ্রয়োজনীয় সংযোগ সৃষ্টি হয় (ব্যাপারটি অনেকটা এইরকম, বাড়ির সবগুলো পাইপের সাথে অন্যান্য পাইপের সংযোগ দেয়া হয়, পরে এই সব সংযোগের মধ্যে যেগুলো কাজে লাগে ও বেশি ব্যবহৃত হয় সেগুলো রাখা হয় এবং বাকিগুলোকে জ্বালানি ও স্নায়ুবিক যোগাযোগ দ্রুত করার জন্য বাতিল করা হয়। ব্যাপারটিকে স্নায়ুসন্ধিক ছাঁট বা সিন্যাপ্টিক প্রুনিং (synaptic pruning) বলা হয়। অটিস্টিক শিশুদের ক্ষেত্রে এই স্নায়ুসন্ধিক প্রুনিং ঘটে না বা খুব কম হয়ফলে তাদের মস্তিষ্ক বড় হলে-ও স্বাভাবিক আচরণের ও দক্ষতার জন্য প্রয়োজনীয় সংযোগ (মস্তিষ্কের এক অংশের সাথে অন্য অংশের) সৃষ্টি হয় না, কিংবা সৃষ্ট সংযোগগুলো দ্রুততর ও এফিশিয়েন্ট নয়এছাড়া তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে গঠনে-ও ভিন্নতা চোখে পড়ে১০যেহেতু মস্তিষ্ক মানুষ ও প্রাণীদের যাবতীয় আচরণ সৃষ্টি করে তাই মস্তিষ্কের অস্বাভাবিকতার কারণে আচরণে ভিন্নতা আসবে এটা হচ্ছে নিউরোবায়োলজিক্যাল কারণগুলোর অন্যতম।

পারিবারিক ও সামাজিক: আধুনিক কিছু সাইকোলজিক্যাল গবেষণা মতে অটিজম ৩-৬ মাসের বয়েসের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে-ও চিহ্নিত করা যায়। যেমন মস্তিষ্কের গঠন ও শিশুদের চোখের দৃষ্টি লক্ষ্য করে১১আমরা যখন কারো সাথে কথা বলি কিংবা কোনো কিছুতে ব্যাপাক আগ্রহ পাই তখন সেই ব্যাক্তির চোখের দিকে তাকাই। অটিস্টিক শিশুরা এটি করে না। চোখের দৃষ্টির এই ভিন্নতাকে ভিত্তি করে কিছু ডায়াগনস্টিক টুলস সৃষ্টি হচ্ছে। যাহোক, অটিজম যদি খুব অল্প বয়েসে শনাক্ত করা যায় তবে দ্রুত ইন্টারভিন করা যাবে (যখন মস্তিষ্ক বিকশিত হচ্ছে দ্রুত বেগে), ফলে মাত্রা কমানো যেতে পারে। অটিস্টিক শিশুরা দেরিতে কথা বলা শিখে, উচ্চারণে ক্রটি থাকে, একই বাক্য বা শব্দ বার বার বলে (একই আচরণ-ও বারবার করে), অনেকের সাইকোমোটর ফাংশনালিটিতে অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে। তাই যতো দ্রুত চিহ্নিত করা যায় ততো ভালো। যেহেতু অনেক অভিভাবক (বিশেষত আমাদের দেশের) মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখেন না ফলে তারা অনেক ব্যাপার অবহেলা করেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুতর অবস্থায় পৌঁছলে তখন তেমন কিছু করার থাকে না। আর অনেক পরিবার ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুদের মধ্যে জেন্ডার-অনুযায়ী আচরণ প্রত্যাশা করে, যেমন ছেলেরা একটু চঞ্চল হবে উশৃঙ্খল হবে কিন্তু মেয়েরা শান্ত লাজুক হবে এইরকম। ছেলেদের ক্ষেত্রে অটিজম বেশি সনাক্তের একটি কারণ এটি-ও। ছেলে শিশুর অস্বাভাবিকতা অভিভাবকদের দ্রুত চোখে পড়ে, মেয়েদের নয়। 

উপরে যে জেনেটিক, নিউরোবায়োলজিক্যাল কারণগুলো বললাম তার পেছনে কিন্তু ব্যক্তির পারিবারিক সামাজিক পরিবেশ প্রভাব রাখে। দরিদ্র বৈষম্য ভরা পরিবেশে বড় হলে কিংবা সেসব স্থানে যথেষ্ট শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই সেখানকার নারী-পুরুষদের স্বাস্থা (মানসিক ও শারীরিক) ভঙ্গুর হয়, ফলে প্রজন্মান্তরে এগুলো শিশুদের মাঝে-ও ছড়ায়। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে শারীরিক স্বাস্থের মতো জোর দেয়া।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে অতিরিক্ত বুদ্ধিমান নারী-পুরুষদের (দুজনেই অতিরিক্ত বুদ্ধিমান
হলে, বিশেষত অটিস্টিক ছেলে শিশুদের বাবা১২) সন্তানের মাঝে অটিজম বেশি হয়ে থাকে১৩ (এটার বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হচ্ছে যে অটিজম হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার সর্বোচ্চ বা উৎকর্ষতা বিপথে যাওয়া)আবার সন্তান জন্মদানের সময়ে বাবা মার বয়েস কতো তা-ও প্রভাব রাখে, বেশি বয়েস হলে পুরুষদের শুক্রাণুর মান ও নারীদের হরমোন ও গর্ভধারণ ও প্রসবজনিত জটিলতা-ও প্রভাব রাখতে পারে বলে মনে করা হয়১৪এখানে একটি ব্যাপার আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, বাবা-মা অতিরিক্ত বুদ্ধিমান হলে কিংবা বেশি বয়েসের হলেই যে শিশুর অটিজম হবে এমন কোনো পাথরে-খোদাই করা নিশ্চয়তা নেয়, বরং এইসব ফ্যাক্টরগুলো প্রভাব রাখে বা ঝুঁকি বাড়ায়।

মনোবিজ্ঞানে একটি ডিসঅর্ডার কীভাবে সৃষ্টি হয় বা আবির্ভূত হয় সেটি ব্যাখ্যা করার জন্য অন্যতম থিউরি হচ্ছে পীড়া-পূর্বঝুঁকি অনুজ্ঞা (stress-diathesis hypothesis)এই তত্ত্ব মতে একজনের পূর্ব কিছু ঝুঁকি থাকে এবং সামাজিক কিংবা অন্যান্য পীড়া বা কারণে এই ঝুঁকি বেড়ে গিয়ে ডিসঅর্ডার সৃষ্টি হয়। যেমন, মনে করুন একটি ভ্রুণের জেনেটিক ঝুঁকি আছে (এক্স ক্রোমোজোম ভঙ্গুরতা), এবং গর্ভকালীন সময়ে সেই ভ্রুণের মা অ্যালকোহল কিংবা অন্য কোনো মাদক গ্রহণ করলো কিংবা কোনো জটিলতায় ভুগলো, ফলে শিশুটি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক গুণ বেশি ঝুঁকি নিয়ে (অটিজমের) জন্ম নিলো। জন্মের পরে বাবা-মা অথবা অভিভাবকের অজ্ঞতা বা অবহেলার কারণে সঠিক গুরুতর সময়ে ইন্টারভিন করা গেলো না, ফলে এই অতিরিক্ত ঝুঁকি ও পীড়ার কারণে শিশুটি পুরো অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ করতে লাগলো, এবং এতো বেশি পরে চিকিৎসার জন্য যাওয়া হলো যে তেমন কিছু করার নেই।

শুধু ঝুঁকি থাকলেই যে রোগ হবে এমন নয়। পরিবেশ ও সমাজের অন্যান্য কারণের প্রভাবের উপর নির্ভর করে এই ঝুঁকি বাড়ে এবং সীমা অতিক্রম করলে ডিসঅর্ডারের লক্ষণ প্রকাশিত হয়।


মোটের কথা হচ্ছে অটিজম একটি কারণে ঘটে না
, ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি-ও ধরো-তক্তা-মারো-পেরেক টাইপের এক রকম নয় আপনার শিশুর যদি অটিস্টিক লক্ষণ আছে বলে মনে করেন তবে বিশেষজ্ঞদের সাথে যোগাযোগ করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজন শিশু বা ব্যক্তির রিস্ক ফ্যাক্টর ও প্রোটেকটিভ ফ্যাক্টর, জেনেটিক-নিউরোসাইকোলজিক্যাল কারণ ও অবস্থা পূর্ণভাবে বিশ্লেষণ করে কেইস-বাই-কেইস চিকিৎসা হয়। এই বিষয়ে পরে আরো বিস্তারিত লিখবো ধারাবাহিকভাবে

অটিস্টিক ছেলেমেয়েদের অভিভাবকদের জন্য বাঙলায় নুশেরা তাজরীনের একটি চমৎকার বই আছে, ২০১১ সালে তাম্রলিপি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, নাম হচ্ছে "শিশুর অটিজম তথ্য ও ব্যবহারিক সহায়িতা"। এই বিষয়টি অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়। এটি ব্যবহারিক সহায়িতা।

আপনার শিশুর মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করলে সাইকোলজিস্ট কিংবা নিউরোসাইকোলজিস্টদের পরামর্শ নিন। ডাক্তারদের মাঝে যেমন বিশেষজ্ঞের ভাগ আছে তেমনি সাইকোলজিস্টদের মাঝে-ও ভাগ আছে, একেকজন একেক ধরণের ডিসঅর্ডারে দক্ষ। এমন কারো কাছে যান যার অটিস্টিক রোগীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।

অটিজমের জন্য জৈবিক চিকিৎসা-ও (যেমন- ওষুধ সেবন) আছে। যেমন- এন্টিসাইকোটিক মেডিকেশন haloperidol এবং risperidone ব্যবহৃত হয় শিশুর মারাত্মক বিধ্বংসী আচরণ (হাত-পা কেটে নিজের ক্ষতি করা, অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ) কমানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এইসব ড্রাগে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে যে অনেক সময় হিতে-বিপরীত হতে পারে। এছাড়া, কোনো ড্রাগই আচরণে আমূল পরিবর্তন আনে না, শুধুমাত্র মাত্রা কমায়। অনেক ক্ষেত্রে সেরোটোনিন রি-আপটেক ব্লকার (serotonin reuptake blocker) ধরণের এন্টিড্রিপেরেসান্ট ব্যবহার করা হয় শিশুর পুনঃপুনঃ আচরণ (বারবার একই জিনিস করা) কমানোর জন্য। এছাড়া, রিটালিন (Ritalin), যা মূলত এডিএসডি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেটিও মনোযোগহীনতা ও উচ্চ মাত্রা কার্যকলাপ কমানোর ক্ষেত্রে ফল দেয়। তবে এখন পর্যন্ত এমন কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয় নি যেটি শিশুর সামাজিক আচরণকে উন্নত করবে, যেটি কিনা অটিস্টিক শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

কী ধরণের চিকিৎসা হবে তা নির্ভর করে সর্ব-পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে (রোগীর অবস্থা, পরিবেশের অবস্থা ইত্যাদি) প্রাপ্ত ফলাফলের উপর। সাইকোথেরাপি করলে শিশু অনেক কিছু শিখতে পারে যা পরবর্তীকালে অন্যান্য ক্ষেত্রে-ও কাজে লাগতে পারে।

অটিজম সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা আছে যে ভ্যাকসিনের সাথে এর সম্পর্ক আছে, এটি ডাহা ভুল কথা। ভ্যাকসিন কখনোই অটিজম সৃষ্টি করে না, কিংবা অটিজমের মাত্রাকে বৃদ্ধি করে না১৫। ভ্যাকসিনের ফলে বরং শিশুর শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

সব কথা শেষ কথা হচ্ছে, বেশি বেশি জানুন, সচেতন হোন, এবং কোনো জ্ঞানই শেষ নয়। কোনো কিছুতে সন্দেহ হলে যাচাই করুন। এবং মনে রাখুন যে স্বাস্থ্য দুই প্রকার- মানসিক ও শারীরিক; এবং দুই ধরণের স্বাস্থ্যই পরষ্পরের সাথে জড়িত। আপনার আমার সচেতনতাই নিজেদের ও পরবর্তীদের প্রজন্মের জীবনকে শুভ করে তুলবে।

(দোহাই: বলার অপেক্ষা রাখে না লেখাটি অসমাপ্ত। পরবর্তীতে এই বিষয়ে আরো বিস্তারিতভাবে লিখবো। আপাতত উল্লেখিত লেখাটির ভুল ধরিয়ে দিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এই লেখা প্রাথমিকভাবে লেখা।)

তথ্যসূত্র
১। Vos, T., Barber, R. M., Bell, B., Bertozzi-Villa, A., Biryukov, S., Bolliger, I., ... & Duan, L. (2015). Global, regional, and national incidence, prevalence, and years lived with disability for 301 acute and chronic diseases and injuries in 188 countries, 1990-2013: a systematic analysis for the Global Burden of Disease Study 2013. The Lancet, 386(9995), 743.
২। Skuse, D. H. (2000). Imprinting, the X-chromosome, and the male brain: explaining sex differences in the liability to autism. Pediatric Research, 47(1), 9-9.
৩। Jamain, S., Quach, H., Betancur, C., Råstam, M., Colineaux, C., Gillberg, I. C., ... & Bourgeron, T. (2003). Mutations of the X-linked genes encoding neuroligins NLGN3 and NLGN4 are associated with autism. Nature genetics, 34(1), 27-29.
৪। Alarcón, M., Abrahams, B. S., Stone, J. L., Duvall, J. A., Perederiy, J. V., Bomar, J. M., ... & Nelson, S. F. (2008). Linkage, association, and gene-expression analyses identify CNTNAP2 as an autism-susceptibility gene. The American Journal of Human Genetics, 82(1), 150-159.
৫। Kelleher, R. J., & Bear, M. F. (2008). The autistic neuron: troubled translation?. Cell, 135(3), 401-406.
৬। Schanen, N. C. (2006). Epigenetics of autism spectrum disorders. Human molecular genetics, 15(suppl 2), R138-R150.
৭। Fein, D. (2011). The neuropsychology of autism. Oxford University Press.
৮। Rogers, S. J. (1998). Neuropsychology of autism in young children and its implications for early intervention. Developmental Disabilities Research Reviews, 4(2), 104-112.
৯। Courchesne, E. (2004). Brain development in autism: early overgrowth followed by premature arrest of growth. Mental retardation and developmental disabilities research reviews, 10(2), 106-111.
১০। NicklJockschat, T., Habel, U., Maria Michel, T., Manning, J., Laird, A. R., Fox, P. T., ... & Eickhoff, S. B. (2012). Brain structure anomalies in autism spectrum disordera metaanalysis of VBM studies using anatomic likelihood estimation. Human brain mapping, 33(6), 1470-1489.
১১। Boraston, Z., & Blakemore, S. J. (2007). The application of eyetracking technology in the study of autism. The Journal of physiology, 581(3), 893-898.
১২। Happé, F., Frith, U., & Briskman, J. (2001). Exploring the cognitive phenotype of autism: weak central coherence in parents and siblings of children with autism: I. Experimental tests. The Journal of Child Psychology and Psychiatry and Allied Disciplines, 42(3), 299-307.
১৩। Crespi, B. J. (2016). Autism As a Disorder of High Intelligence. Frontiers in Neuroscience, 10.
১৪। Durkin, M. S., Maenner, M. J., Newschaffer, C. J., Lee, L. C., Cunniff, C. M., Daniels, J. L., ... & Schieve, L. A. (2008). Advanced parental age and the risk of autism spectrum disorder. American Journal of Epidemiology, 168(11), 1268-1276.

১৫। Stehr-Green, P., Tull, P., Stellfeld, M., Mortenson, P. B., & Simpson, D. (2003). Autism and thimerosal-containing vaccines: lack of consistent evidence for an association. American journal of preventive medicine, 25(2), 101-106.

Wednesday, March 1, 2017

দুরবিন: একজন মন্ট্রিয়েলারের চোখে কয়েক ছত্র লন্ডন



সপ্তাহ খানেক আগে নিউরোসায়েন্সের একটি কনফারেন্সে লন্ডন (ইউকে) যাওয়া হলো। দেশে যাওয়া কিংবা আসার পথে লন্ডনে ট্রানজিট হলেও, কখনো বেড়ানো কিংবা অন্যান্য কাজে যাওয়া হয়নি।

যদিও কনফারেন্সটি ছিলো সেমিস্টারের মাঝখানে তাই বেশিদিন থাকা সম্ভব ছিলো না, কিন্তু গেলাম। গত শতাব্দীর চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে মনোবিজ্ঞানে বিহেইভিয়ারিজম দৃষ্টিভঙ্গি রাশিয়া ও পরে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হলেও যুক্তরাজ্যে ষাট থেকে আশির দশকে মনোবিজ্ঞানের, বিশেষ করে বিহেইভিয়ারিজমের প্রচুর আলোড়িত গবেষণা হয়।

কী নিয়ে মাতামাতি...

13 Reasons Why (1) ADHD (1) Alzheimer's disease (1) Antibiotic Resistance (1) Anxiety (1) Autism (1) Brexit (1) Brief Answers to the Big Questions (10) Britain (1) Bruce Peninsula (1) Cades Cove Scenic Drive (1) Canada (2) Clingsman Dome (1) District 9 (1) Dopamine (1) Dyer's Bay (1) Federico Garcia Lorca (1) Fierté Montréal (2) Gaspé & Percé Rock (1) Global Warming (2) Great Smoky Mountains (2) Heatwave (1) Hemianopia (1) infographics (1) Instagram (104) International Balloon Festival (1) Interstate 77 (1) Lift (1) Links (1) Maple syrup boiling down (1) Maple syrup harvesting (1) Marconi Union (1) Mike Krath (1) Montmorency Falls (2) Montreal International Jazz Festival (1) Montreal Pride Parade (2) Mother Teresa (1) Movies (1) Music (2) Netflix (1) Niagara Falls (3) Nickelback (1) Nirvana (1) North Carolina (1) nutella (1) Photography (2) Photos (104) Poets of the Fall (2) Psychology (1) Rain storm in Montreal (1) Rape (1) Reading List (1) Saint-Remi (1) Samuel de Champlain Bridge (1) Sandra Crook (1) Schizophrenia (1) Sci-Fi (1) Sci-Hub (1) Shortest Sci-Fi (1) Smoky Mountains (1) Stephen Hawking (15) Sunshine 2007 (1) Tennessee (1) The Beatles (1) The Danish Girl (1) The Grand Design (8) The Handsome Family (1) Tobermory (1) Toronto (2) Transexualism (1) True Detective (1) Tyrannosaurus rex (1) Wallingford Back Mine – Mulgrave et Derry (1) West Island (1) Womenchapter (1) অটিজম (3) অটোয়া (1) অণুগল্প (7) অনুবাদ (17) অভিগীতি (12) অভিলিপি (9) অর্থনীতি (2) অ্যালকোহল (1) আইন ও বিচারব্যবস্থা (1) আইসিস (2) আচরণগত স্নায়ুবিজ্ঞান (1) আত্মহত্যা (2) আলঝেইমারের রোগ (3) আলোকচিত্র (6) আলোকবাজি (9) ইচ্ছেকথা (3) ইন্সটাগ্রাম (104) উইমেন-চ্যাপ্টার (1) উদ্বেগ (1) উবার (1) একুশে বইমেলা (1) এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ (1) এম-তত্ত্ব (5) কবিতা (95) কম্পিউটার বিজ্ঞান (1) করোনাভাইরাস (6) কলাম (5) কানাডা (4) কাব্যালোচনা (2) কাসেম বিন আবুবাকার (1) কিশোরতোষ (1) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (1) কৃষ্ণগহ্বর (1) কোভিড-১৯ (8) ক্যান্সার (1) ক্রসফায়ার (1) ক্লোনিং (1) খাদ্যব্যবস্থা (1) গণতন্ত্র (1) গবেষণা (1) গবেষণাপত্র (1) গর্ভপাত (1) গল্প (8) গাঁজা (1) গান (17) গুজব (1) গ্যাব্রিয়েলা মিস্ট্রাল (1) চলচ্চিত্র (4) ছড়া (5) ছবি (104) ছোটগল্প (5) জঙ্গিবাদ (1) জনস্বাস্থ্য (2) জিকা ভাইরাস (1) জীববিজ্ঞান (1) জীবাণু (1) ট্রান্সসেক্সুয়াল (1) ট্রান্সসেক্সুয়ালিজম (1) ডাইনোসর (1) ডাউনলোড (1) ডোপামিন (1) তাপমাত্রা (1) তিল-গপ্পো (17) তুষার দত্ত (2) তেজস্ক্রিয়তা চিকিৎসা (1) দূরবীন (2) দৃষ্টিশক্তি (1) ধর্ম (3) ধর্ষণ (2) নায়াগ্রা ফলস জলপ্রপাত (1) নারী (3) নারী স্বাধীনতা (1) নুটেলা (1) নৈতিকতা (1) পরিবেশ (1) পাঁচমিশালী (1) পাঠসূচি (1) পাম তেল (1) পাহাড় (1) পুস্তক (1) পেডোফিলিয়া (1) প্রকৃতি (1) প্রবন্ধ (2) প্রবাস (2) প্রাইমেট (1) ফটোগ্রাফী (1) ফেসবুক (1) ফ্রান্স (1) বই (2) বড় প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর (10) বয়ঃসন্ধি (1) বর্ণবাদ (1) বাঙলাদেশ (18) বাবা (1) বাংলাদেশ (1) বিজ্ঞপ্তি (1) বিজ্ঞান (13) বিটলস (1) বিষণ্নতা (3) বুরকিনি (1) বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি (7) বৈশ্বিক উষ্ণতা (1) ব্যক্তিত্ব (1) ব্যথা (1) ভাইটামিন ডি (1) ভাইরাস (1) ভালোবাসা (1) ভুয়া খবর (1) ভেন্টিলেটর (1) ভ্রমণ (3) মনস্তত্ত্ব (1) মনোবিজ্ঞান (19) মন্ট্রিয়াল (1) মন্ট্রিয়াল আন্তর্জাতিক জ্যাজ উৎসব (2) মস্তিষ্ক ক্যান্সার (1) মহিমান্বিত নকশা (3) মাদক (1) মাদকাসত্তি (2) মাদার তেরেসা (1) মানসিক স্বাস্থ্য (5) মুক্তগদ্য (3) মুক্তচিন্তা (3) মুক্তিযুদ্ধ (3) মৌলবাদ (1) যাপিত জীবন (2) যুগান্তর পত্রিকা (1) যৌনতা (1) রাজনীতি (1) রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প (3) রূপান্তরকাম (1) রৌদ্রস্নান (1) লিওনার্ড ম্লোডিনো (5) লিংক (2) লিঙ্গরূপান্তর (1) লিঙ্গরূপান্তরকারী (1) লিথিয়াম (1) লিফট (1) শিক্ষাব্যবস্থা (1) শিশুতোষ (3) সংগীত (3) সন্ত্রাসবাদ (1) সংবাদমাধ্যম (1) সময়ভ্রমণ (1) সমালোচনা (1) সর্দিগর্মি (1) সানশাইন (1) সামাজিক দূরত্ব (1) সাম্প্রতিক দেখা চলচ্চিত্র (1) সার্স-কোভ-২ ভাইরাস (4) সাহিত্য (4) স্কিৎসোফ্রেনিয়া (1) স্টিফেন হকিং (16) স্ট্রোক (1) স্নায়ুবিজ্ঞান (12) স্নায়ুবিষ (1) স্বাস্থ্যসেবা (1) হলুদ (1)
রোদের অসুখ © 2008 Por *Templates para Você*