১
ঠিক ঠিক ঘরে ফিরি- ফেরা হয়। কবুতরের চুম্বক থাকে- দিক চিনে ঠিকই খোঁপে আসে সন্ধ্যায়। আমি শহুরে জীবন্ত মনুমেন্ট, আমার ভিতরে তড়িৎচুম্বকীয় ব্যাপারস্যাপার। তাই ফিরি। নিজের চুলের ভাঁজে, আঙুলে, চোখের বয়ামে অসংখ্য গল্পের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যেগুলো আমি যত্ন করে লিখতে চেয়েছিলাম, হয়ত আমার আগে কোন পূর্বপুরুষ- আমাদের লুকানো দুঃখ-সুখ-স্বপ্ন-বন্ধনের শব্দাবলি- নাগরিক জীবনের বৃত্তজীবিতাকে সম্বল করে।
ট্রেনে প্রচুর প্রযুক্তি- গান শোনা, খবর দেখা, আবহাওয়া বার্তা জানা, বাণিজ্যিকধারার টিভি দেখা- তবু-ও নিজের দের্ঘ্যের অর্ধেক সমান জানালার উপারের আকাশ দেখতে ভালো লাগে। কারো বিকেল ওখানে স্বপ্নচিল। তারপর, বাসে উঠা। সচেতন মাতাল ট্রেনের জানালায় টেনেলের অন্ধকার লেগে থাকে, আকাশ দেখা যায় না। বাসে ঠিকই দেখা মেলে। কানে গোঁজা আইপডের সংগীত কিছুটা আলগা করে দেয় বাইরের পরিবেশ থেকে। বেশ মজা। হয়ত কোন দৃশ্য দেখছি- নিজে নিজে ভেবে নেয়া যায় কী ঘটছে; কেউ একজন কথা বলছে কারো সাথে- নিজে নিজে কল্পনা করে নেয়া যায় প্রচলিত সংলাপসমূহ।
মানুষ হয়ে এসব চারপাশের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আসি। সেইসব কিছু-ও আমার ভিতরে সতেজ ভাস্কর্য হয়ে যায়- অলৌকিক-লৌকিক সব মনুমেন্ট।
২
প্রিয় কোন নারীর পাশে এসে দাঁড়ানোর চে' কয়েকটি প্রজাপতির সাথে খেলার জন্য সাহসী হয়ে উঠি!
শূন্য লাগে প্রিয় মানুষ ও পশুদের বন; পরষ্পরের অহঙ
তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে চলে নীল চড়ুই।
৩
আমরা, মানে ক্রমশ জীর্ণ বাঙালিরা আগে গান গাইতাম, 'তুমি এসে আঁচলে মুখ মুছে দাও।' সেই ধারা হারিয়ে গেলে নির্মলেন্দু বললেন, "আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না" কেউ অন্তত বলুক ''তোমার চোখ লাল কেন?''
আমরা এই অভাগারা আরেকটু হারিয়ে ফেলি। এবং বলতে থাকি, 'আমার চোখ লাল না কালো সেটা জিজ্ঞেস করো আর না করো অন্তত একবার চোখ পানে তাকাও!'
না, ঠিক এসব না। তোমার কাছে এরকম চাই না। শুধু ঘুম থেকে উঠলে আমার মুখের কাছ থেকে পরিচিত চুল সরিয়ে বলবে, 'কালরাতে কী স্বপ্ন দেখেছিলে?'
৪
বিছানা গোছাতে বরাবরই আলসে লাগে। সকালবেলায় সিথানে ঘুম ও স্বপ্নসমূহকে শো-পিসের মতো সাজিয়ে রেখে বিছানা ছাড়ি, আর রাতে শোয়ার আগে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে শো-পিসগুলোতে নিজেকে সঞ্চারণ করি। বিছানা গোছানোর চেয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বেলিমেঘগুলোকে সাজাতে- গাঁথতে আমার ঢের পছন্দ- বিকেলটুকু ঠিক ঠিক অবসরের।
৫
কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার মতো করে গাড়িদায়গ্রস্থ ব্রিজটি ভেসে থাকে- নদী ও হাওয়ার 'পরে- শ্যাম্পেন ব্রিজের জল শীতে প্রাক্তন প্রেমিকা হাতের মতো বরফ! তবু-ও চেয়ে চেয়ে থাকতে ভালো লাগে। প্রথা, ধর্ম, বিশ্বাস-অবিশ্বাসগুলো একদিন মানুষের তাপমাত্রা ভেদে কঠিন-তরল-বায়বীয় অবস্থা ধারণ করে।
৬
নাট্যমঞ্চের মেয়েরা বরাবরই রাস্তায় জেব্রাক্রসিঙ
জমাতে অপরিদর্শী হলে-ও অঙ্গনিপুণা
কয়েকটি শ্বেতসরালী জলের ট্র্যাফিকে বিশ্বস্ত আরোহী
মানুষ মাত্রই গ্ল্যাডিওলাসের রঙ-সচেতন
তবু-ও অলসার্ত চোখে ঘুমহীনতা নিয়ে কয়েকজন চলে
গেলে কস্তুরীবনে
অচেতন বাইপোলার সীমাবদ্ধতা ভর করে
জেব্রাক্রসিঙের রঙ মূলত সাদা হয়
বাকি পথটা নিজে নিজে পাড়ি দেয়া যায়
করোটিতে হিমায়িত রোদ নিয়ে কিংবা কালোতিতিরের
বিহঙ্গপনা দেখতে দেখতে
হয়তো কোন এক যুবক বুকপকেটের কাছাকাছি পথের
বিমোহন নিয়ে হেঁটে যাবে ধুলি-সংহিত স্যান্ডেলে জীবনের
আকারপ্রকার নিয়ে
নাট্যমঞ্চের মেয়েরা মূলত জীবনের কাছে পৃথিবীর খোরাক
৭
ভ্রমণের এক ধরনের ক্লান্তি আছে। দেখতে দেখতে এক সময় চোখ পচে আসে। তবু-ও দেখা হয়; জন্মান্ধ বা বর্ণান্ধ তো নই। আমার খুব ইচ্ছে জন্মান্ধ কারো সাথে কথা বলি- এই জীবনে এখনো সেরকম কারো দেখা পাই নি। হয়ত কখনোই হবে না। প্রতিবন্ধী কারো পাশে এসে দাঁড়ালে আমি কুঁকড়ে যাই- নিজের এই চলন-গ্রহণ-রিপুর ব্যবহার এসবকে বড্ড বেশি পাওয়া বলে মনে হয়।
বাড়ি ফেরাটা অনেক মধুর। রাত করে কাজ থেকে ফেরা, পাঠশালা থেকে ফেরা, নিছক ফেরার জন্য ফেরা সবকিছু; কই কোনদিন তো পথ ভুল করি না!
গন্ধ ও স্পর্শ ভালো লাগে। একবার বলেছিল আমার লেখায় এসব বেশি আসে। সে থেকে চেষ্টা করি পাশ কাটিয়ে যেতে। গন্ধ আর স্পর্শ মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ বীজ- জ্ঞান কিংবা অপজ্ঞান যায় হোক না কেন।
আমার ফুল স্পর্শ করতে ভালো লাগে না; কারণ, একবার ছুঁয়ে ফেললে যে ভাললাগাটুকু ভিতরে সঞ্চারিত হবে তার বেগ অনেক বেশি আবেগীয়।
একটি মানুষ কখনোই ফুল হয়ে ওঠে না- কারণ মানুষের মনে 'মালী' হওয়ার বীজ অঙ্কুরে থাকে।
[১০/১/২০১০]
ঠিক ঠিক ঘরে ফিরি- ফেরা হয়। কবুতরের চুম্বক থাকে- দিক চিনে ঠিকই খোঁপে আসে সন্ধ্যায়। আমি শহুরে জীবন্ত মনুমেন্ট, আমার ভিতরে তড়িৎচুম্বকীয় ব্যাপারস্যাপার। তাই ফিরি। নিজের চুলের ভাঁজে, আঙুলে, চোখের বয়ামে অসংখ্য গল্পের পাণ্ডুলিপি নিয়ে যেগুলো আমি যত্ন করে লিখতে চেয়েছিলাম, হয়ত আমার আগে কোন পূর্বপুরুষ- আমাদের লুকানো দুঃখ-সুখ-স্বপ্ন-বন্ধনের শব্দাবলি- নাগরিক জীবনের বৃত্তজীবিতাকে সম্বল করে।
ট্রেনে প্রচুর প্রযুক্তি- গান শোনা, খবর দেখা, আবহাওয়া বার্তা জানা, বাণিজ্যিকধারার টিভি দেখা- তবু-ও নিজের দের্ঘ্যের অর্ধেক সমান জানালার উপারের আকাশ দেখতে ভালো লাগে। কারো বিকেল ওখানে স্বপ্নচিল। তারপর, বাসে উঠা। সচেতন মাতাল ট্রেনের জানালায় টেনেলের অন্ধকার লেগে থাকে, আকাশ দেখা যায় না। বাসে ঠিকই দেখা মেলে। কানে গোঁজা আইপডের সংগীত কিছুটা আলগা করে দেয় বাইরের পরিবেশ থেকে। বেশ মজা। হয়ত কোন দৃশ্য দেখছি- নিজে নিজে ভেবে নেয়া যায় কী ঘটছে; কেউ একজন কথা বলছে কারো সাথে- নিজে নিজে কল্পনা করে নেয়া যায় প্রচলিত সংলাপসমূহ।
মানুষ হয়ে এসব চারপাশের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আসি। সেইসব কিছু-ও আমার ভিতরে সতেজ ভাস্কর্য হয়ে যায়- অলৌকিক-লৌকিক সব মনুমেন্ট।
২
প্রিয় কোন নারীর পাশে এসে দাঁড়ানোর চে' কয়েকটি প্রজাপতির সাথে খেলার জন্য সাহসী হয়ে উঠি!
শূন্য লাগে প্রিয় মানুষ ও পশুদের বন; পরষ্পরের অহঙ
তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে চলে নীল চড়ুই।
৩
আমরা, মানে ক্রমশ জীর্ণ বাঙালিরা আগে গান গাইতাম, 'তুমি এসে আঁচলে মুখ মুছে দাও।' সেই ধারা হারিয়ে গেলে নির্মলেন্দু বললেন, "আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না" কেউ অন্তত বলুক ''তোমার চোখ লাল কেন?''
আমরা এই অভাগারা আরেকটু হারিয়ে ফেলি। এবং বলতে থাকি, 'আমার চোখ লাল না কালো সেটা জিজ্ঞেস করো আর না করো অন্তত একবার চোখ পানে তাকাও!'
না, ঠিক এসব না। তোমার কাছে এরকম চাই না। শুধু ঘুম থেকে উঠলে আমার মুখের কাছ থেকে পরিচিত চুল সরিয়ে বলবে, 'কালরাতে কী স্বপ্ন দেখেছিলে?'
৪
বিছানা গোছাতে বরাবরই আলসে লাগে। সকালবেলায় সিথানে ঘুম ও স্বপ্নসমূহকে শো-পিসের মতো সাজিয়ে রেখে বিছানা ছাড়ি, আর রাতে শোয়ার আগে কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে শো-পিসগুলোতে নিজেকে সঞ্চারণ করি। বিছানা গোছানোর চেয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বেলিমেঘগুলোকে সাজাতে- গাঁথতে আমার ঢের পছন্দ- বিকেলটুকু ঠিক ঠিক অবসরের।
৫
কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার মতো করে গাড়িদায়গ্রস্থ ব্রিজটি ভেসে থাকে- নদী ও হাওয়ার 'পরে- শ্যাম্পেন ব্রিজের জল শীতে প্রাক্তন প্রেমিকা হাতের মতো বরফ! তবু-ও চেয়ে চেয়ে থাকতে ভালো লাগে। প্রথা, ধর্ম, বিশ্বাস-অবিশ্বাসগুলো একদিন মানুষের তাপমাত্রা ভেদে কঠিন-তরল-বায়বীয় অবস্থা ধারণ করে।
৬
নাট্যমঞ্চের মেয়েরা বরাবরই রাস্তায় জেব্রাক্রসিঙ
জমাতে অপরিদর্শী হলে-ও অঙ্গনিপুণা
কয়েকটি শ্বেতসরালী জলের ট্র্যাফিকে বিশ্বস্ত আরোহী
মানুষ মাত্রই গ্ল্যাডিওলাসের রঙ-সচেতন
তবু-ও অলসার্ত চোখে ঘুমহীনতা নিয়ে কয়েকজন চলে
গেলে কস্তুরীবনে
অচেতন বাইপোলার সীমাবদ্ধতা ভর করে
জেব্রাক্রসিঙের রঙ মূলত সাদা হয়
বাকি পথটা নিজে নিজে পাড়ি দেয়া যায়
করোটিতে হিমায়িত রোদ নিয়ে কিংবা কালোতিতিরের
বিহঙ্গপনা দেখতে দেখতে
হয়তো কোন এক যুবক বুকপকেটের কাছাকাছি পথের
বিমোহন নিয়ে হেঁটে যাবে ধুলি-সংহিত স্যান্ডেলে জীবনের
আকারপ্রকার নিয়ে
নাট্যমঞ্চের মেয়েরা মূলত জীবনের কাছে পৃথিবীর খোরাক
৭
ভ্রমণের এক ধরনের ক্লান্তি আছে। দেখতে দেখতে এক সময় চোখ পচে আসে। তবু-ও দেখা হয়; জন্মান্ধ বা বর্ণান্ধ তো নই। আমার খুব ইচ্ছে জন্মান্ধ কারো সাথে কথা বলি- এই জীবনে এখনো সেরকম কারো দেখা পাই নি। হয়ত কখনোই হবে না। প্রতিবন্ধী কারো পাশে এসে দাঁড়ালে আমি কুঁকড়ে যাই- নিজের এই চলন-গ্রহণ-রিপুর ব্যবহার এসবকে বড্ড বেশি পাওয়া বলে মনে হয়।
বাড়ি ফেরাটা অনেক মধুর। রাত করে কাজ থেকে ফেরা, পাঠশালা থেকে ফেরা, নিছক ফেরার জন্য ফেরা সবকিছু; কই কোনদিন তো পথ ভুল করি না!
গন্ধ ও স্পর্শ ভালো লাগে। একবার বলেছিল আমার লেখায় এসব বেশি আসে। সে থেকে চেষ্টা করি পাশ কাটিয়ে যেতে। গন্ধ আর স্পর্শ মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠ বীজ- জ্ঞান কিংবা অপজ্ঞান যায় হোক না কেন।
আমার ফুল স্পর্শ করতে ভালো লাগে না; কারণ, একবার ছুঁয়ে ফেললে যে ভাললাগাটুকু ভিতরে সঞ্চারিত হবে তার বেগ অনেক বেশি আবেগীয়।
একটি মানুষ কখনোই ফুল হয়ে ওঠে না- কারণ মানুষের মনে 'মালী' হওয়ার বীজ অঙ্কুরে থাকে।
[১০/১/২০১০]
No comments:
Post a Comment