বাণিজ্যিক আবর্তন

বাণিজ্যিক আবর্তন

'জনাব, ঠান্ডা পানীয় নাকি সিগারেট চলে?
বারটা কিনলে একটা বিনামূল্যের!
কী চাই! আকিজ নাকি বেনসন? পান্টা নাকি সামাজিক বিয়ার!'
"দূর ব্যাটা, এইসব ছাইপাশ কে খরিদ করে?
ফুল বিক্রি দে - কদম, রজনীগন্ধার
ঢালি, কালো গোলাপ কিংবা নীলপদ্ম।
আচ্ছা, নীল গোলাপ হয়? কখনো দেখিছিস ?'
'কী জানি, তবে নীলের সাথে নিত্য সাক্ষাত-'
'তা বটে! এক কাজ করলেই পারিস-
হরেক রঙা ফুল দিয়ে বস ধারঘেঁষে ফুটপাত;
যার যেমন অভাব তেমন কিনবে,
নীল গোলাপ: নব্য ছ্যাঁকাপ্রাপ্ত প্রেমিক;
বরষা-কদম: নবীন প্রেমিক-প্রেমিকা, দম্পতিযুগল;
নীলপদ্ম: বাউন্ডুলেদের কাছে ভালো বিকাবে;
কিছু অন্যরকমও রাখিস - নারিকেলফুলের নাকফুল,
শিমের মালা কিংবা কৃষ্ণচূড়ার খোঁপা;
কবিদের নারীদের জন্য। দেখে দেখে দ্বিতীয় নিলীকা-হিমালিনীর
রূপসূধার অ্যাখানভাগ লিখবে শালারা একতরপা।
এসব বিক্রি করে বাড়তি পাবি যুবতীর হঠাৎ বিবস্ত্র হওয়া হাঁটু-
ক্ষেত্রবিশেষে গভীর জঙ্ঘা; নাগরিকদের বাথরুম-কথন
এবং কবি আর বুদ্ধিজীবি আঁতেলদের আত্মবিজ্ঞাপনবয়ান!'
'মশাই, না কিনতে চাইলে বলেন, প্যাঁচাল করেন কেন এতো?'
'কিনব না সে বল্লাম কই, হতচ্ছাড়া? গ্রাহকের পিছনে নিষ্টাচার
জোঁকের মতন লেগে থাকায় শ্রেষ্ঠতম মূলধন।'
'আমার তাড়া আছে, এবার যাইগে-'
'জানিস নে, সিগারেট-টিগারেট বড় নচ্ছার জিনিস-
ফি-বছর ধুঁকে ধুঁকে মরে মানুষপাল।'
"জানি নে মানে! সব শালা মরুকগে-
জ্যামিতিক চক্রানুসারে অমানুষ বৃদ্ধির জামানায়,
কেউ আগে পারা'র হলে আমাদেরই মঙ্গল।
যারা যাবার তারাই এসব টানে - খায়।'
'তুই টানিস? দিব্যি দিলাম, সত্যি করে বল'
'কী যে বলেন! বিষ নিজে পান করতে নেই,
অন্যকে গেলাতে প্রলোভিত করতে হয়।'

বাণিজ্যিক আবর্তনে ওরা আনে জাহাজে জাহাজে
বিয়ার, হুস্কি, বেনসন; জায়গা নেই বিন্দুঠাঁই!
আনে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের নিমিত্তে অজেয়
কাঁদুনে গ্যাস, রাইফেল, খুঁদে সিরিঞ্জ হাতের খাঁজে;
বাণিজ্যিক আবর্তনে ওরা নিয়ে যায়
আমাদের পাটের ঝুড়ি, মৃন্ময়ী পুতুল, নকশীকাঁথা,
কৃষ্ণপাথর- যত আসবাবপত্তুর তারা চায়।
ওদের বাতিঘর, নগরভবন, বারান্দা জ্বলে শ্রমিকের ঘামের বাতি!
কী শৈল্পিক একেকটি মন কী সৌখিন!
বাণিজ্যিক আবর্তনে ওরা শিল্পকলা, কাব্যের প্রভু
আমরা সার্বজনীন, সর্বস্বীকৃত বিষ বিক্রি করে চলি।