১
দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করার পর যখন নাড়িভুঁড়ি বা পেটের প্রায় সমস্ত মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো মারা যায়, তখন দেখা যায় যে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে (যেটি স্মৃতিসংরক্ষণ বা স্মৃতি-সংক্রান্ত ব্যাপারে জড়িত, যেমন আপনার বাড়ি কোথায় বা আপনার গাড়ি কোথায় পার্ক করলেন ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করে) নতুন নতুন স্নায়ুকোষের সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়।
নতুন স্নায়ুকোষ প্রাপ্তবয়ষ্কদের মস্তিষ্কে কম জন্মালে-ও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় না, সেই কারণেই নিত্যনতুন ব্যাপার শেখা সম্ভব হয়; অবশ্য স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যকার সংযোগ এইক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকগে, ইঁদুরের উপর গবেষণা করে এই ব্যাপারটি জানা গেছে। দেখা গেলো যে Ly6Chi নামক এক ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা এই দুইয়ের মাঝে মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করে। কৃত্রিমভাবে Ly6Chi এর পরিমাণ কমিয়ে দিলে নতুন স্নায়ুকোষের জন্ম-ও কমে যায়, বাড়িয়ে দিলে বাড়ে। আশা কথা হচ্ছে যে নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং প্রোবায়োটিক খেলে ভারসাম্য ফিরে আসে।
নতুন স্নায়ুকোষ প্রাপ্তবয়ষ্কদের মস্তিষ্কে কম জন্মালে-ও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় না, সেই কারণেই নিত্যনতুন ব্যাপার শেখা সম্ভব হয়; অবশ্য স্নায়ুকোষগুলোর মধ্যকার সংযোগ এইক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাকগে, ইঁদুরের উপর গবেষণা করে এই ব্যাপারটি জানা গেছে। দেখা গেলো যে Ly6Chi নামক এক ধরণের শ্বেত রক্তকণিকা এই দুইয়ের মাঝে মেসেঞ্জার হিসেবে কাজ করে। কৃত্রিমভাবে Ly6Chi এর পরিমাণ কমিয়ে দিলে নতুন স্নায়ুকোষের জন্ম-ও কমে যায়, বাড়িয়ে দিলে বাড়ে। আশা কথা হচ্ছে যে নিয়মিত ব্যায়াম করলে এবং প্রোবায়োটিক খেলে ভারসাম্য ফিরে আসে।
সুতারাং, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছু হলেই গিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। অনেকে জানেনই না যে ভাইরাস-জনিত রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের করা কিছু থাকে না, তারপর-ও সবাই অ্যান্টিবায়োটিক নিয়েই পড়ে থাকেন।
২
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এইসব দিনে প্রায় সবারই এখন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি আছে। অনেকে তাদের বাচ্চাদের এইসব দিয়ে খেলতে দেন, কিংবা কান্না থামানোর জন্য দেন। হয়তো বাচ্চা কান্না করছে, আপনি জরুরি কাজে ব্যস্ত কিংবা বিরক্তিবোধ করছেন তাই মোবাইল ফোনে গেম কিংবা ভিডিও চালিয়ে দিলেন। আগে টেলিভিশন ছেড়ে দিয়ে বাচ্চাকে বসিয়ে রাখা হতো, এখন প্রযুক্তি বদলে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি।
কিন্তু এইসব প্রযুক্তির যেমন উপকারিতা আছে, তেমনি অপকারিতা-ও আছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে। নতুন একটি গবেষণা মতে যেসব বাচ্চাদের (বিশেষত বয়েস ০-৫ বছরের) অভিভাবকরা নিয়মিত বাচ্চাদের মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি দেন সেইসব বাচ্চারা ভাষা দেরিতে শেখে, কিংবা তাদের ভাষিক জ্ঞান কম হয়ে থাকে সাধারণ শিশু যাদেরকে নিয়মিত মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি দেয়া হয় না তাদের তুলনায়। এবং বাচ্চাকে যতোবেশি সময়ের জন্য এইসব দেয়া হয় তার ভাষা শেখা কিংবা রপ্ত করা ততো পিছিয়ে যায়। এছাড়া এইসব শিশু দেরিতে কথা বলতে শেখে। যেমন, প্রতি ৩০ মিনিট এইসব ডিভাইস ব্যবহার করতে দিলে বাচ্চার কথা বলা শেখা বাধাগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি ৪৯% বেড়ে যায়।
যেহেতু ভাষিক জ্ঞান বুদ্ধিমত্তা ও মানসিক বিকাশের অন্যতম অংশ তাই এইসব বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ০-৩ বছরের বাচ্চাদের একদমই মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি দেবেন না; এগুলো "একমুখী" মাধ্যম, বাচ্চার ইন্টারঅ্যাকশনের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। বরং তাকে লেগো, কিংবা পাজলের মতো খেলনা ইত্যাদি দিয়ে খেলতে দেন। শরীরচর্চার সুযোগ দেন।
তিন বছরের অধিক বাচ্চাদের নিতান্তই যদি মোবাইল ফোন কিংবা ট্যাবলেট দিতে হয় তবে দিনে ১৫-৩০ মিনিটের বেশি নয়।
৩
১৯৯৫ সালে একটি আলোড়ন-সৃষ্টিকারী সাইকোলজিক্যাল গবেষণা প্রকাশিত হয়, ভাষা, দারিদ্র্যতা, ও বুদ্ধিমত্তার উপর। গবেষকরা দেখেন যে গরিব পরিবারের (যেমন, সামাজিক-কল্যাণ বা ওয়েলফেয়ারের উপর নির্ভরশীল) শিশুরা গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ১৫০০-টি শব্দ বা বছরে প্রায় আট মিলিয়ন শব্দ কম শোনে ধনী বা পেশাদার এমন অভিভাবকদের পরিবারের শিশুদের তুলনায়। ঘটনা হচ্ছে যে আট বছর পরে যখন এই দুই দলেরই শিশুদের বিভিন্ন ভাষাগত মূল্যায়ন ও শব্দভাণ্ডার পরীক্ষায় (যেসব পরীক্ষা আবার বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার সাথে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কিত) মূল্যায়ন করা হয় তখন দেখা গেলো যে গরিব পরিবারের শিশুরা উচ্চ-আয়ের পরিবারের শিশুদের তুলনায় অনেক খারাপ ফলাফল করে। অর্থাৎ, দুটো বিষয় এখানে গুরুত্বপূর্ণ: গরিব পরিবারের শিশুরা ভাষাগত ও শব্দগত বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি অল্প বয়েসে কম এক্সপোজড হয় এবং তারা শুরু থেকেই পিছিয়ে পড়ে।
এই গবেষণা শিশু পালনের চর্চা বা কৌশলের উপর, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিভিন্ন দিবাসেবা (ডে-কেয়ার), প্রাক-বিদ্যালয়, এমনকি পরিবারে কীভাবে শিশুদের লালন-পালন করা উচিত সেইসব ব্যাপারকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, অভিভাবকের উচিত বাচ্চাদের সাথে বেশি কথা বলা, তাদের সাথে বেশি সময় কাটানো, তাদেরকে বিভিন্ন বই পড়ে শোনানো, নানা বিষয়ে ‘আলোচনা’ করা ইত্যাদি। পরবর্তী অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে শিশু-মুখী এইসব সংলাপ আলোচনা শিশুর ভাষিক দক্ষতা বাড়ায়, যা চক্রাকারে বুদ্ধিমত্তা, নির্বাহী কার্যাবলি (এক্সিকিউটিভ ফাংশন), এবং এমনকি আচরণ-আবেগ নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা-ও বাড়ায়।
এই গবেষণাসমূহের মানে এই না যে গরিব পরিবারে জন্মালেই বাচ্চারা পিছিয়ে পড়বে। বরং, গরিব পরিবারে বাচ্চাদের সুযোগ-সুবিধা (যা বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়) কম থাকে। তার উপর বাবা মা শিশু পালনের ক্ষেত্রে দক্ষ না হলে, পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকলে বাচ্চার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। যেমন, দরিদ্র পরিবারে সবাইকে হয়তো উপার্জনের জন্য প্রচুর সময় বাইরে কাটাতে হয়, ফলে বাচ্চার সাথে মিথষ্ক্রিয়া কম হয়, ফলে বাচ্চার শেখার সুযোগ কম থাকে। দারিদ্র্যতা অন্তরায়-স্বরূপ, কিন্তু একে আত্মঘাতী রূপ দেয় ব্যক্তিই।
No comments:
Post a Comment