এসো খড়ে সুঁই খুঁজি

Custom Search

Sunday, June 3, 2018

মাদকাসত্তি ও ক্রসফায়ার নিয়ে কিছু বক্তব্য


মাদকাসত্তি নিয়ে, বিশেষ করে এর মনোবিজ্ঞান এবং নিউরোবায়োলজি নিয়ে আমি কিছু কথা বলতে চাই এবং সেই প্রেক্ষিতে বলতে চাই যে মাদকাসত্তির জন্য একজনকে ক্রসফায়ারে দেয়া একটি চরম অমানবিক ও বর্বর ব্যাপার।

একেকজন একেক কারণে এবং ভাবে মাদকাসক্ত হয়, কিন্তু মস্তিষ্কে যে পরিবর্তন হয় তা মোটামুটি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। যেমন, কেউ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে চেখে দেখে, কেউ কৌতূহলের বশে পরখ করে দেখে, কেউ আত্মচিকিৎসার জন্য মাদকের দ্বারস্ত হয় (যেমন, অ্যালকোহল অ্যাবিউজ করে যারা তাদের একটি বড় অংশ বিষণ্নতা, উদ্বেগ-জনিত, প্যানিক ইত্যাদি মানসিক সমস্যায় ভুগে, এবং এইসব থেকে উত্তরণের জন্য অ্যালকোহল, মারিওয়ানা ইত্যাদি মাদক নেয় এবং ক্রমশ আসক্ত হয়ে পড়ে; চাকুরিহীন, বাবা-মা-প্রতিবেশি থেকে বঞ্চনা পাওয়া একটি যুবক কিংবা যুবতীর কথা চিন্তা করে দেখেন- সারা দুনিয়ার কোথাও সে শান্তি পায় না, কেউ শান্তি ও স্বস্তি দেয় না, শুধু মাদক সেবনে খানিকের জন্য পৃথিবীর যাবতীয় নেতিবাচক ব্যাপার দূরে সরিয়ে রাখা যায়), কেউ জন্মগতভাবে মাদকাসক্তির   ঝুঁকি নিয়ে জন্মায় (যেমন, গর্ভাবস্থায় যদি মা অ্যালকোহল, সিগারেট কিংবা কোকেইন জাতীয় মাদক সেবন  করে তবে বাচ্চার জিনগুলো এমনভাবে প্রকাশিত হয় যে বাচ্চা বংশগতিগতভাবে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে জন্মায়) ইত্যাদি। যাহোক, যে যেকারণেই মাদক নেয় না কেনো প্রথম দিকে মাদক আনন্দানুভূতির সৃষ্টি করে, প্রশান্তি দেয়, উত্তেজনা সৃষ্টি করে ইত্যাদি। এইক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ডোপামিনারজিক স্নায়ুব্যবস্থা (যেসব স্নায়ুকোষ ডোপামিনকে প্রধান নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে ব্যবহার করে) মূল ভূমিকা রাখে। ডোপামিন মানুষ ও প্রাণীর নানা আচরণকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে; যেমন, যৌনতা, শেখা, চলন, স্বভাব, মনোযোগ, মটিভেশন ইত্যাদি নানা ব্যাপারকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে। এইসব মূলত প্রাকৃতিক ব্যাপার। যেমন, যৌনতার কথা ধরেন- যৌনকাজে প্রাণী যৌনসুখ পায়, তাই সে এইকাজ বারবার করতে চায়, ফলে সেই প্রাণী তার জিন বিস্তারণের সুযোগ পায়। ভালো সুস্বাদু খাবার খেতে ভালো লাগে, কারণ এতে প্রাণী নিজেকে টিকিয়ে রাখতে ও শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। এইসব সুখকর ও সারভাইবালের জন্য প্রয়োজনীয় আচরণকে বারবার করার পেছনে ভূমিকা রাখে ডোপামিন ব্যবস্থা। 

মাদক মস্তিষ্কের ডোপামিন ব্যবস্থাকে মূলত হাইজ্যাক করে! প্রাকৃতিক আচরণগুলোর জন্য যে ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কোটি বছরের বিবর্তনে, সেই ব্যবস্থাকে হাইজ্যাক করে মাদক আসক্তির দিকে ধাবিয়ে নেয়। অনেকটা প্লেইন চালানো শিখে উঁচু ভবনে প্লেইন মেরে দেওয়া; প্লেইনের আবিষ্কার হয়েছে অন্যত্র আকাশপথে দ্রুত যাওয়ার জন্য, উঁচু ভবনে মারা জন্য নয়। ঠিক তেমনি মাদক সাময়িক আনন্দের জন্য ঠিক আছে, কিন্তু আসত্তির জন্য নয়। দীর্ঘমেয়াদি মাদক গ্রহণের ফলে এই সাময়িক আনন্দ গ্রহণের স্বভাব ক্রমশ আসক্তির দিকে ধাবিত হয়। 

মানুষের ইতিহাসে, অর্থাৎ পৃথিবীর যেকোনো সংস্কৃতি ও দেশের কথাই চিন্তা করে দেখেন না কেনো প্রতিটিতে একেক ধরণের মাদক দ্রব্য রয়েছে। অর্থাৎ, মানুষের ইতিহাস যতো দীর্ঘ এই মাদক গ্রহণের ইতিহাস ততো দীর্ঘ।  তবে বর্তমান সময়ের আগে অন্যান্য অনেক বিষয়ের মতন মাদক এতো সহজলভ্য ছিলো না। যেমন একটি নির্দিষ্ট সময়ে মদ তৈরি করা হতো বার্লি, আলু ইত্যাদি থেকে ঋতু ও পরিবেশ অনুসারে। কিন্তু এখনকার প্রযুক্তিতে মানুষ কৃত্রিমভাবে অনেক মদ ও মাদক তৈরি করতে পারে। এই প্রচুর লভ্যতা যে ব্যাপারটি সৃষ্টি করেছে তা হচ্ছে মাদককে কেন্দ্র করে কালোবাজার গড়ে উঠেছে। মাদকাসত্তির ইতিহাস একদিক থেকে কালোবাজারির ইতিহাস। এই ব্যাপারে পরে আবার আসছি।

কেনো দীর্ঘমেয়াদি মাদক গ্রহণের ফলে মাদক গ্রহণের আনন্দ আসত্তিতে পরিণত হয়? 
মস্তিষ্ক চায় সবসময় সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে, যেকোনো জৈবিক ব্যবস্থা তাই চায়; এতে শক্তির খরচ নিয়ন্ত্রণে থাকে, কার্যকলাপ সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়। মাদকগ্রহণের ফলে ডোপামিন ও অন্যান্য স্নায়ুব্যবস্থা ঘন ঘন ফায়ার হতে থাকে, স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসৃত হয়, এই অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য জিনের প্রকাশ পরিবর্তন হয় মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষগুলোর জিনে। ফলে ব্যাপারটা এই রকম যে মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা চায় সব নিয়ন্ত্রণে রাখতে, সাম্যাবস্থা বজায় রাখতে, অন্যদিকে রিওয়ার্ড ব্যবস্থা (reward system) চায় আনন্দদায়ক, সুখকর ব্যাপার ও আচরণে বারবার লিপ্ত হতে। নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থা তার নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য রিসেপ্টরের সংখ্যা কমিয়ে দেয় (রিসেপটর হচ্ছে স্নায়ুকোষের কোষঝিল্লীতে থাকা সংকেত-গ্রাহক অংশ), এমনকি স্নায়ুকোষের মৃত্যু ঘটায়; অন্যদিকে রিওয়ার্ড ব্যবস্থা মাদক ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারগুলোর প্রতি অতিরিক্ত সেনসিটাইজ (sensitize) হয়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি মাদকের ফলে স্নায়ুকোষগুলোর জিনে এপিজেনেটিক পরিবর্তন সাধিত হয়, অর্থাৎ জিনে সরাসরি পরিবর্তন বা মিউটেশন না ঘটলে-ও জিনের অভিব্যক্তি বা প্রকাশ পরিবর্তিত হয়। জিনের সংকেত অনুসারে প্রোটিন তৈরি করা হয়, কিন্তু এপিজেনেটিক পরিবর্তন হলে দেখা যায় যে জিন অ্যাক্সেস করা কঠিন হয়ে পড়ে, কিংবা প্রোটিনের গঠন অন্যরকম হয়ে পড়ে। এবং মস্তিষ্কের এইসব পরিবর্তনের সাথে মাদকাসক্তি-সংশ্লিষ্ট আচরণের সম্পর্ক আছে। 

মাদকাসক্তের ক্ষেত্রে দুটো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, একটি হচ্ছে ক্রেইভিং (craving) এবং অন্যটি লাইকিং (liking)। শুনতে অস্বাভাবিক মনে হলে-ও একজন ব্যক্তি যখন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে সে মাদককে আগের মতো "পছন্দ" বা লাইকিং করে না! কিন্তু সেই একই মাদকের জন্য তার ক্রেইভিং বা  "ক্ষুধা" বেড়ে যায়। এই দুটো ব্যাপারের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের দুটো স্নায়ুবর্তনী বা নিউরাল সার্কিট কাজ করে, যাদের কিছু কিছু অংশ একই, আবার কিছু কিছু অংশ পুরোপুরি অন্যরকম। আসক্ত ব্যক্তি মাদককে পছন্দ না করলে-ও তার ক্রেইভিং বেশি হওয়ার কারণ মস্তিষ্কের স্নায়ুকাঠামো, কার্যাবলি এবং জিনগত পরিবর্তনের জন্য। অর্থাৎ, ব্যক্তির নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তার মস্তিষ্ক তার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণে থাকে না! যে ব্যক্তির নিজের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ নেই তাকে আপনি কেনো পুরোপুরি দোষারোপ করে ক্রসফায়ারে দেবেন? মাদকাসক্তি এক ধরণের মানসিক বৈকল্য, যার পেছনে সামাজিক, পারিবারিক, বংশগতিক, স্নায়ুবিক কারণ আছে। অন্যান্য শারীরিক রোগ ও মানসিক সমস্যার জন্য যেমন চিকিৎসার প্রয়োজন  তেমনি মাদকাসক্তিতে আক্রান্তদের জন্য (আমার ভাষা খেয়াল করুন, আমি বলেছি আক্রান্ত) প্রয়োজন চিকিৎসা, প্রয়োজন সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। একজন ব্যক্তি ক্যান্সারে কিংবা অন্য কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে গেলে তাকে ক্রসফায়ারে দিলে যেমন অমানবিক ও বর্বরতার পরিচয় দেয়া হবে তেমনি মাদকাসক্তিতে আক্রান্তকে ক্রসফায়ারে দিলে সেটি হত্যা এবং এই হত্যার দায় রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের নেতা-নেত্রী বুড়োখোকা-খুকিদের। 

৪ 
১৯৬০ এর দশকের দিকে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়, কিন্তু এই "যুদ্ধ" ক্রমশ রাজনৈতিক রূপ নেয়- অন্যান্য দেশের উপর মাদকের উসিলায় আধিপত্য বিস্তারের উপায় হিসেবে, সংখ্যালঘুদের (যেমন- আফ্রিকান আমেরিকান, হিস্পানিক সম্প্রদায়সমূহ) প্রতি বৈষম্যের কারণ হয়ে যায় (যেমন- যদি কোনো শ্বেতাঙ্গকে কোকেইনসহ ধরা হয় তবে তার শাস্তি যা হয় তারচেয়ে বেশি শাস্তি হয় একজন আফ্রিকান আমেরিকানকে সাধারণ গাঞ্জা নিয়ে ধরা হলে)। বাঙলাদেশে বর্তমানে এই মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে অভিযান রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে (যেমন- বিরোধীদল কিংবা বিরোধীমতের লোকদেরকে ফাঁসিয়ে দেয়া ও হত্যা করা)। 

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সময় বলা হয়েছিলো যে যারা মাদক গ্রহণ করে তারা মানসিকভাবে দুর্বল এবং তাদের নৈতিকতার ঠিক নেই। কিন্তু পরবর্তী হাজার হাজার গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা মাদকে আসক্ত হয় তাদের নৈতিকতা কোনো অংশে কম না এবং তারা মানসিকভাবে দুর্বল-ও নয়, তারা মূলত ভুল শিক্ষা (আনন্দলাভের উপকরণকে স্থায়ীভাবে মাদক হিসেবে গ্রহণ করা) ও পরিস্থিতির শিকার। তাদের জন্য তাই প্রয়োজন মনোশিক্ষা ও মনোচিকিৎসা, ক্রসফায়ার নয়।

ক্রসফায়ার ও মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্তবিচারে একটি দেশের বিচারব্যবস্থার ভঙ্গুরচিত্র ও সামরিকশাসন ও কৃতিত্বপরায়ণ মানসিকতা তুলে ধরে। অপরাধের শাস্তি যখন মৃতুদণ্ড ও ক্রসফায়ার হয় তখন গাছের পরিচর্যার বদলে মূল কেটে উপড়ে ফেলার মতো হয়, এটি অপরাধের কারণ সনাক্ত করা ও নাগরিককে সুপথে আনার ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। 

আপনি আমার কথা মানবেন কেনো? কেনো মাদকাসক্তদের ক্রসফায়ারে না দিয়ে মানসিক চিকিৎসা করাবেন? চিকিৎসায় কাজ হয়? হয়। শুধুমাত্র, পারিবারিক ও সামাজিক সাহায্য-ও অনেক কাজে দেয়। কোকেইন আসক্ত ও যারা নিয়মিত কোকেইন ব্যবহার করে তাদের উপর চালিত একটি গবেষণার কথা বলি। একটা নির্দিষ্ট অল্প ডোজে নিয়মিত কোকেইন নিলে-ও আসক্তি ঘটে না বা কম ঘটে, কিন্তু ডোজ উনিশবিশ করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে (মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের সাম্যাবস্থার কথা চিন্তা করেন)। কিন্তু একটা বিষয় হচ্ছে যে এইসব আক্রান্তদের যাদের একটি ভালো পরিবার আছে, যাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত সহযোগিতা, আশ্রয়ের জায়গা আছে তারা অন্যান্যদের তুলনায় কম আসক্ত হয়। অর্থাৎ, বিভিন্ন দায়বন্ধতা, সাহায্য মানুষকে মাদক থেকে ফেরাতে পারে।
মাদকাসক্তদের জন্য অন্যতম আরেকটি চিকিৎসা হচ্ছে ব্যায়াম করা, নিয়মিত। ব্যায়াম করলে মস্তিষ্কে প্রচুর ডোপামিন নিঃসরিত হয়, এবং এটি ডোপামিন ব্যবস্থাকে সাম্যাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এখন কথা হচ্ছে যে একজন মাদকাসক্তকে আপনি কীভাবে ব্যায়ামের জন্য উৎসাহ দিবেন? নিশ্চিত করবেন যে সে ব্যায়াম করছে? ব্যায়াম করতে তো সাধারণ মানুষ-ও চায় না, তাহলে তো সবার হৃদযন্ত্র ভালো থাকতো, সবাই দ্য রক হয়ে যেতো। না, মাদকাসক্তকে-ও ব্যায়ামের জন্য উৎসাহিত করা যায়। এরজন্য দরকার ভালো সামাজিক ও পারিবারিক নেটওয়ার্ক। এবং মানসিক চিকিৎসার মাধ্যমে একটি রুটিন ও মাধ্যমে আসা। 

প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু অবলম্বন ও কিছু লক্ষ্য থাকা দরকার। এইসব লক্ষ্য মানুষকে উৎসাহ দেয়, উত্তরণের দিকে ধাবিত করে, এবং অবলম্বনগুলো সাহায্য করে এগিয়ে যেতে। শুধু মাদকাসক্ত না, অন্যান্য অনেক মানসিক রোগের ক্ষেত্রে নানাবিধ কারণে এইসব অবলম্বন ও লক্ষ্যদের চ্যুতি ঘটে। এইসব লক্ষ্য ও অবলম্বনকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার মাঝে নিরাময় আছে। 

যা কিছু নিষিদ্ধ তার প্রতি মানুষের (ও অন্যান্য প্রাণীর) সহজাত আগ্রহ ও কৌতূহল। মাদকব্যবসায়ীরা এটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন গ্রাহকদের টানে, এবং ধরে রাখে। নিয়মিত সরবরাহের মাধ্যমে সাময়িক আনন্দকে ক্রমান্বয়ে আসক্তিতে পরিণত করে। এবং একবার আসক্ত হয়ে গেলে ব্যক্তি তখন এই মাদকব্যবসায়ীদের হাতের পুতুল, যেহেতু ব্যক্তির মস্তিষ্ক আর তার মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণে নেই!

মাদকাসক্তির অন্যতম আরেকটি রাষ্ট্রীয় নিরাময় হতে পারে যাবতীয় মাদক অনিষিদ্ধ করে দেয়া! এটি কাউন্টার-ইন্টুইটিভ মনে হতে পারে, কিন্তু পুরো কয়েকটি দেশ এটি করে সুফল পেয়েছে। পর্তুগালের কথা বলি। মাদকাসক্তি পর্তুগালের জন্য বিশাল সমস্যা ছিলো। যুবকযুবতীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে, মাদক-সম্পর্কিত অপরাধ বাড়ছে। তখন বিজ্ঞানীদের পরামর্শে ও গবেষণার আলোকে দেশটি সব মাদককে ডিক্রিমিনালাইজড করে দেয়। মাদকাসক্তি ও মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধ আরো বেড়ে না গিয়ে কমে গেছে, এমনকি অন্যান্য দেশের চেয়ে-ও কম। যেকোনো প্রাপ্ত বয়ষ্ক গিয়ে মাদক কিনতে পারে সরকারি বিপণনকেন্দ্রে থেকে, ফলে অপরাধের হার কমে যায় এবং যখন মাদকগ্রহণ অন্যান্য কাজের মতো "স্বাভাবিক"ভাবে গ্রহণ করা হয় তখন সেটি অ্যাবিউজ-ও কম হতে থাকে। শুধু পর্তুগাল না, অন্যান্য অনেক দেশে এইরকম আংশিক অথবা পুরোপুরি করে সফল হয়েছে। 

আমার ব্যক্তিগত মত (আমার পড়াশোনা ও গবেষণার ভিত্তিতে) যে যাবতীয় মাদক লিগালাইজ করে দেয়া, সরকারিভাবে কিনতে পারা যাবে; ফলে সরকার মান ও বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, আয়কর বাড়বে, গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হবে; এবং কেউ আসক্তির দিকে গেলে-ও বা যাচ্ছে এমন মনে হলে তাড়াতাড়ি ইন্টারভিন করা যাবে। 

৭ 
বাঙলাদেশে এখন মাদকাসক্তদের প্রতি যা হচ্ছে তা হচ্ছে রাজনৈতিক স্বার্থহাসিলের বলি হওয়া। ফিলিপিনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি Rodrigo Duterte ফিলিপিনে মাদকের বিরুদ্ধে যুক্ত ঘোষণা করেছিলো ২০১৬-তে ক্ষমতায় এসে। এই পর্যন্ত ১২ হাজার মানুষ মেরেছে সেই বদমাশটি। এতে মাদকাসক্তি কমে নি, মাদক-সম্পর্কিত অপরাধ কমে নি, বরং এটি আরো বেশি অ্যান্ডারগ্রাউন্ডে গিয়েছে। 
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ক্ষান্ত দিয়েছে। মরেছে অনেক আফ্রিকান আমেরিকান। মাদক ঠিকই আছে।
বাঙলাদেশে-ও একই ব্যাপার হচ্ছে, এবং হবে। মাঝখান থেকে অনেকগুলো প্রাণ অকালে ঝরবে। এর দায় কে নেবে? শেখ হাসিনা? কাদের? বদি? কেউ না। কারণ, ক্ষমতার মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে এই বদমাশগুলো-ও।

Saturday, April 28, 2018

ধর্ষণ-সম্পর্কে জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ভুল ধারণা প্রচার

মাসুদ মহিউদ্দীন মিতুল নামের একজন ফলোয়ার ধর্ষণ-বিষয়ে যুগান্তরে প্রকাশিত এই লেখাটি [https://goo.gl/Zf9XS6] শেয়ার করে জানতে চেয়েছেন এটিতে উল্লেখিত তত্ত্ব, মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সঠিক কিনা। মোট বিচারে বলতে গেলে লেখাটির কিছু কিছু অংশ সঠিক, কিন্তু লেখাটিতে ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মনোবৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও গবেষণার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এবং ফ্রয়েডের ব্যাখ্যা যা কিনা আধুনিক মনোবিজ্ঞান ও স্নায়ুবিজ্ঞান সমর্থন করে না সেটি ব্যবহার করে তার বক্তব্য চালিয়ে দিতে চেয়েছেন।

Wednesday, April 4, 2018

বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র ও অন্যান্য বই নামিয়ে নেয়ার পাতাসমূহ

পশ্চিমা দেশগুলো বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে থাকার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে যে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞানি, শিক্ষার্থী, গবেষক ইত্যাদি জনের কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে পারার ক্ষমতা, ফলে বিশ্লেষণ, গবেষণার বিস্তৃতি ইত্যাদি দ্রুত ঘটে। এর জন্য বিভিন্ন গবেষণাকেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করে প্রতি বছর। তবে এই ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হচ্ছে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরণের জার্নালের সাবস্ক্রিপশন নেয়ার সামর্থ্য নেই, দেখা যায় যে গবেষণা করার চেয়ে জার্নালের পেছনে খরচ বেশি হয়ে থাকে ক্ষেত্রবিশেষে! অথচ বিজ্ঞানি ও গবেষকরা নিজেরা গবেষণা করে, নিজেরা রিভিউ করে, নিজে লিখে দেখে শুনে এইসব গবেষণা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করলে-ও লাভের অংকটা পায় জার্নালের প্রকাশকরা, এবং তারা গবেষকদের উপরে কপিরাইট আইন প্রয়োগ করে! পুরো হেজোমনি ব্যাপার। ব্যাপারটা যেনো এইরকম যে প্রকাশকরা জ্ঞানকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। এতো গেলো এদিকের কথা।

Sunday, April 1, 2018

এক মুঠো মনোবিজ্ঞান বার্তা - ১

দীর্ঘমেয়াদি অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহার করার পর যখন নাড়িভুঁড়ি বা পেটের প্রায় সমস্ত মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো মারা যায়, তখন দেখা যায় যে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসে (যেটি স্মৃতিসংরক্ষণ বা স্মৃতি-সংক্রান্ত ব্যাপারে জড়িত, যেমন আপনার বাড়ি কোথায় বা আপনার গাড়ি কোথায় পার্ক করলেন ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করে) নতুন নতুন স্নায়ুকোষের সৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায় বা কমে যায়।

Sunday, March 4, 2018

উবার ও লিফটের চালক হিসেবে কাজ করা লাভজনক নয়!



বাঙলাদেশে অনেকে উবার ব্যবহার করেন, অনেকে উবারের চালক হিসেবে কাজ-ও করেন। এটা কি আসলেই লাভজনক? না! এমআইটির একদল গবেষক সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে (http://ceepr.mit.edu/files/papers/2018-005-Brief.pdf) যাতে দেখা যায় যে প্রতি ঘণ্টায় উবার ও লিফটের (Lyft) চালকদের লাভ হচ্ছে মাত্র ৩.৩৭ ডলার, যা কিনা আপনি ম্যাকডোলাসে কিংবা অন্যত্র কোনো অড কাজ করলে যে টাকা পাবেন তার চেয়ে-ও কম। গবেষকরা প্রায় ১১০০ চালকের উপর জরিপ করে এবং গাড়ি সংক্রান্ত বিভিন্ন খরচাখরচ (যেমন, ইন্সুরেন্স, গাড়ির মেরামত, তেল খরচ, গাড়ি-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর ইত্যাদি) হিসাবে নিয়ে এটি নির্ধারণ করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ৭৪% চালক ন্যুনতম মজুরি (minimum wage) এর চেয়ে-ও কম আয়/লাভ করেন এবং প্রায় ৩০% চালক লোকসান গুনেন। প্রতি মাইলে একজন চালক মাত্র ০.৫৯ ডলার আয় করেন, যা কিনা বিদ্যমান যেকোনো ট্যাক্সি চালকের তুলনায় অনেক কম। অর্থাৎ, সার্বিকবিচারে, উবার ও লিফটের চালক হিসেবে কাজ করা লাভজনক নয়। তবে লাভ কার? লাভ চালকদের হতো যদি চালকের সংখ্যা কম হতো, কিন্তু চালকের সংখ্যা বেশি; এছাড়া, উবার গাড়ি ও চালকদের যেসব খরচাখরচ আছে যেগুলো বহন করে না একটু-ও, ফলে লাভ আসে না; লাভ হয় উবারের ও লিফটের কর্মকর্তাদের।

ছবিসূত্র: techcrunch.com

আর-ও বিস্তারিত: http://tcrn.ch/2FNNDSn



উবার ও লিফটকে আমার বাঙলাদেশের গ্রামের দিকে মহাজন বা বর্গাচাষীদের শোষণ করা জমির মালিকদের মতন মনে হয়। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ফসল ফলিয়ে চাষী যদি কিছু লাভ করতে পারে তবে মহাজন চুষে নেয়, লোকসান হলে লোকসান হয় চাষীর। ঠিক তেমনি চালকের উপর সব খরচের সব বোঝা চাপিয়ে দিয়ে উবার নিজেদের পকেট ভারী করে শুধু। বর্গাচাষীর ক্ষেত্রে মহাজন জমি দেয় চাষীকে, উবার তা-ও দেয় না, গাড়ি নিজের আনতে হয় কিংবা উবার থেকে নিলে আছে গাড়ি নেয়ার খরচ। দুদিক থেকেই ব্যবসা।
আমি নিজে কখনো উবার ব্যবহার করি না (অবশ্য নিজের গাড়ি থাকায় তেমন ব্যবহারের প্রয়োজন-ও পড়ে না), গ্রাহক হিসেবে আমার একটু বেশি খরচ হলে-ও আমি প্রচলিত ট্যাক্সিই নিই, আমি জানি অন্তত এতে একজন ট্যাক্সি চালক-ও লাভবান হবে, উবারের মতো কোনো বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থা নয়।

কী নিয়ে মাতামাতি...

13 Reasons Why (1) ADHD (1) Alzheimer's disease (1) Antibiotic Resistance (1) Anxiety (1) Autism (1) Brexit (1) Brief Answers to the Big Questions (10) Britain (1) Bruce Peninsula (1) Cades Cove Scenic Drive (1) Canada (2) Clingsman Dome (1) District 9 (1) Dopamine (1) Dyer's Bay (1) Federico Garcia Lorca (1) Fierté Montréal (2) Gaspé & Percé Rock (1) Global Warming (2) Great Smoky Mountains (2) Heatwave (1) Hemianopia (1) infographics (1) Instagram (104) International Balloon Festival (1) Interstate 77 (1) Lift (1) Links (1) Maple syrup boiling down (1) Maple syrup harvesting (1) Marconi Union (1) Mike Krath (1) Montmorency Falls (2) Montreal International Jazz Festival (1) Montreal Pride Parade (2) Mother Teresa (1) Movies (1) Music (2) Netflix (1) Niagara Falls (3) Nickelback (1) Nirvana (1) North Carolina (1) nutella (1) Photography (2) Photos (104) Poets of the Fall (2) Psychology (1) Rain storm in Montreal (1) Rape (1) Reading List (1) Saint-Remi (1) Samuel de Champlain Bridge (1) Sandra Crook (1) Schizophrenia (1) Sci-Fi (1) Sci-Hub (1) Shortest Sci-Fi (1) Smoky Mountains (1) Stephen Hawking (15) Sunshine 2007 (1) Tennessee (1) The Beatles (1) The Danish Girl (1) The Grand Design (8) The Handsome Family (1) Tobermory (1) Toronto (2) Transexualism (1) True Detective (1) Tyrannosaurus rex (1) Wallingford Back Mine – Mulgrave et Derry (1) West Island (1) Womenchapter (1) অটিজম (3) অটোয়া (1) অণুগল্প (7) অনুবাদ (18) অনূদিত গান (1) অভিগীতি (12) অভিলিপি (9) অর্থনীতি (2) অ্যালকোহল (1) আইন ও বিচারব্যবস্থা (1) আইসিস (2) আচরণগত স্নায়ুবিজ্ঞান (1) আত্মহত্যা (2) আলঝেইমারের রোগ (3) আলোকচিত্র (6) আলোকবাজি (9) ইচ্ছেকথা (3) ইন্সটাগ্রাম (104) উইমেন-চ্যাপ্টার (1) উদ্বেগ (1) উবার (1) একুশে বইমেলা (1) এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ (1) এম-তত্ত্ব (5) কবিতা (95) কম্পিউটার বিজ্ঞান (1) করোনাভাইরাস (6) কলাম (5) কানাডা (4) কাব্যালোচনা (2) কাসেম বিন আবুবাকার (1) কিশোরতোষ (1) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (1) কৃষ্ণগহ্বর (1) কোভিড-১৯ (8) ক্যান্সার (1) ক্রসফায়ার (1) ক্লোনিং (1) খাদ্যব্যবস্থা (1) গণতন্ত্র (1) গবেষণা (1) গবেষণাপত্র (1) গর্ভপাত (1) গল্প (8) গাঁজা (1) গান (18) গুজব (1) গ্যাব্রিয়েলা মিস্ট্রাল (1) চলচ্চিত্র (4) ছড়া (5) ছবি (104) ছোটগল্প (5) জঙ্গিবাদ (1) জনস্বাস্থ্য (2) জিকা ভাইরাস (1) জীববিজ্ঞান (1) জীবাণু (1) ট্রান্সসেক্সুয়াল (1) ট্রান্সসেক্সুয়ালিজম (1) ডাইনোসর (1) ডাউনলোড (1) ডোপামিন (1) তাপমাত্রা (1) তিল-গপ্পো (17) তুষার দত্ত (2) তেজস্ক্রিয়তা চিকিৎসা (1) দূরবীন (2) দৃষ্টিশক্তি (1) ধর্ম (3) ধর্ষণ (2) নায়াগ্রা ফলস জলপ্রপাত (1) নারী (3) নারী স্বাধীনতা (1) নুটেলা (1) নৈতিকতা (1) পরিবেশ (1) পাঁচমিশালী (1) পাঠসূচি (1) পাম তেল (1) পাহাড় (1) পুস্তক (1) পেডোফিলিয়া (1) প্রকৃতি (1) প্রবন্ধ (2) প্রবাস (2) প্রাইমেট (1) ফটোগ্রাফী (1) ফেসবুক (1) ফ্রান্স (1) বই (2) বড় প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর (10) বয়ঃসন্ধি (1) বর্ণবাদ (1) বাঙলাদেশ (18) বাবা (1) বাংলাদেশ (1) বিজ্ঞপ্তি (1) বিজ্ঞান (13) বিটলস (1) বিষণ্নতা (3) বুরকিনি (1) বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি (7) বৈশ্বিক উষ্ণতা (1) ব্যক্তিত্ব (1) ব্যথা (1) ভাইটামিন ডি (1) ভাইরাস (1) ভালোবাসা (1) ভুয়া খবর (1) ভেন্টিলেটর (1) ভ্রমণ (3) মনস্তত্ত্ব (1) মনোবিজ্ঞান (19) মন্ট্রিয়াল (1) মন্ট্রিয়াল আন্তর্জাতিক জ্যাজ উৎসব (2) মস্তিষ্ক ক্যান্সার (1) মহিমান্বিত নকশা (3) মাদক (1) মাদকাসত্তি (2) মাদার তেরেসা (1) মানসিক স্বাস্থ্য (5) মুক্তগদ্য (3) মুক্তচিন্তা (3) মুক্তিযুদ্ধ (3) মৌলবাদ (1) যাপিত জীবন (2) যুগান্তর পত্রিকা (1) যৌনতা (1) রাজনীতি (1) রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প (3) রূপান্তরকাম (1) রৌদ্রস্নান (1) লিওনার্ড ম্লোডিনো (5) লিংক (2) লিঙ্গরূপান্তর (1) লিঙ্গরূপান্তরকারী (1) লিথিয়াম (1) লিফট (1) শিক্ষাব্যবস্থা (1) শিশুতোষ (3) সংগীত (3) সন্ত্রাসবাদ (1) সংবাদমাধ্যম (1) সময়ভ্রমণ (1) সমালোচনা (1) সর্দিগর্মি (1) সানশাইন (1) সামাজিক দূরত্ব (1) সাম্প্রতিক দেখা চলচ্চিত্র (1) সার্স-কোভ-২ ভাইরাস (4) সাহিত্য (4) স্কিৎসোফ্রেনিয়া (1) স্টিফেন হকিং (16) স্ট্রোক (1) স্নায়ুবিজ্ঞান (12) স্নায়ুবিষ (1) স্বাস্থ্যসেবা (1) হলুদ (1)
রোদের অসুখ © 2008 Por *Templates para Você*