ডোপামিন (Dopamine) হচ্ছে এক ধরণের নিউরোট্রান্সমিটার
(এক ধরণের রাসায়নিক অণু যার মাধ্যমে স্নায়ুকোষগুলো সংকেত আদানপ্রদান করে)। মানসিক
ও আবেগগত অনেক বিষয়, যৌনতা, ভালোলাগা, সুখী-ভাব ইত্যাদি অনেক আচরণ ও মানসিক অবস্থা
নিয়ন্ত্রণ করে অথবা প্রভাবিত করে ডোপামিনারজিক স্নায়ুকোষ ব্যবস্থা (যেসব স্নায়ুকোষ
ও ব্যবস্থা ডোপামিনকে তথ্য আদানপ্রদানের প্রধান নিউরোট্রান্সমিটা্র হিসেবে ব্যবহার
করে)। এছাড়া আমাদের চলাচল বা মোটর প্রতিক্রিয়া-ও নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন ব্যবস্থা।
অনেকে ডোপামিনকে “সুখী হরমোন” হিসেবে ভাবে, যেহেতু আমাদের সুখী সুখী
ভাবের পেছনে ডোপামিন নিঃসরণের হাত আছে। ডোপামিন নিঃসরণের প্যাটার্নের সাথে এড্রেনালিন
(Adrenaline)
স্রোতের মিল আছে, সাধারণত উত্তেজক কোনো কিছু অথবা খেলাধুলার সময়
এড্রেনালিন রাশ বা স্রোত ঘটে। এড্রেনালিনের সাথে ডোপামিনের অনেক মিল আছে, অনেকটা
চাচাতো ভাই-ভাই বলতে পারেন।
তামাক, মদ, ও আসক্তির যাবতীয় ওষুধের ক্ষেত্রে ডোপামিন
নিঃসরণের প্রভাব আছে। কোকেইন, হেরোইন, ইয়াবা, অ্যাম্পেটামিন, রিটালিন থেকে শুরু
করে অ্যালকোহল, গাঞ্জা সব ধরণের মাদকের ক্ষেত্রে ডোপামিনের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ আছে
পরোক্ষ অথবা প্রত্যক্ষভাবে।
তবে ভাববেন না যে বেশি বেশি ডোপামিন নিঃসরিত হলে আপনি বেশি “সুখী” হবেন। কারণ, মানবমস্তিষ্ক মূলত একটি বিশাল বর্তনী বা
সার্কিটের মতো কাজ করে, যা আবার বিভিন্ন স্নায়ুকোষ ব্যবস্থা বা বর্তনী দিয়ে গঠিত,
অর্থাৎ একটা নেটওয়ার্ক হিসেবে করে, এবং একেকটি অংশ অন্য অংশকে প্রভাবিত ও
নিয়ন্ত্রণ করে; ফলে ভালো মানসিক অবস্থার জন্য মস্তিষ্ক ব্যবস্থাকে এক ধরণের “সাম্যাবস্থা” বা ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। মনে করুন একটি নদীর ও বাঁধের
কথা, বেশি পানি হলে যেমন নদী ও বাঁধ উপচে বন্যার সম্ভাবনা থাকে তেমনি কম জল হলে
খরা মৌসুম হয়। তেমনি অল্প পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরিত হলে পারকিনসনের রোগ যেমন হতে
পারে তেমনি বেশি বেশি ডোপামিন নিঃসরণ কিংবা স্নায়ুসন্ধিতে ডোপামিনের আধিক্যের
কারণে হ্যালুসিনেশন, উম্মাদ-প্রবণতা বা বাতিক রোগ হতে পারে, হতে পারে স্কিটসফ্রেনিয়া
বা সিজোফ্রেনিয়া রোগ।
No comments:
Post a Comment