স্কিৎসোফ্রেনিয়া (Schizophrenia) নামক মানসিক ব্যাধির উপসর্গ হচ্ছে বিভ্রান্তকর চিন্তা (যেমন, অনেকে আপনাকে আক্রমণ করার জন্য ষড়যন্ত্র
করছে), বিভ্রান্তিতে ভোগা, দৃষ্টিভ্রম ও শ্রবণভ্রম (visual and auditory hallucinations; যেমন, শব্দ বা কণ্ঠ শোনা, যদিও
বাস্তবে কেউ বলছে না বা শব্দ করছে না; কোনো কিছু দেখা, যদিও বাস্তবে কিছুই নেই), অলীক বিশ্বাস, বিভ্রম
(Delusion), এবং বিভিন্ন চিন্তাগত বৈকল্য (cognitive impairment; যেমন, বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাওয়া বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হওয়া)। সাম্প্রতিক গবেষণা নির্দেশ করে যে স্কিৎসোফ্রেনিয়া আসলে একটি মানসিক ব্যাধি নয়, বরং ছয়টির মতো স্নায়ুবিক (ও মানসিক)
ব্যাধির ক্লাস্টার; একেক রোগীর বিকাশ, কারণ, বংশগতির সূত্র ইত্যাদির কারণে একেক রোগীর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
কিন্তু এই রোগের (রোগগুলোর) কারণ কী কী?
পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে শীতকাল এবং বসন্তকালে জন্মগ্রহণ করা এবং উচ্চ-অক্ষাংশের দেশে বসবাসকারীদের (যেমন ডেনমার্ক) ক্ষেত্রে স্কিৎসোফ্রেনিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। গবেষকরা ধারণা করেছিলেন যে শীতের সময়কালে সূর্যালোকের অভাবের কারণে গর্ভবর্তী নারীদের ভাইটামিন ডি এর পরিমাণ কম হয়ে থাকে এবং যার ফলে গর্ভের সন্তানের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়; তাই গবেষকরা ভাইটামিন ডি এবং স্কিৎসোফ্রেনিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধান করেন। একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে গ্রীষ্মকালীন দেশ হলেই যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইটামিন ডি (সূর্যালোকের এক্সোপজারে) থাকবে এমন নয়, কারণ জীবনযাত্রার কারণে (যেমন- সারাদিন গৃহে বা অফিসে থাকা, ভেতরে থাকা) গর্ভবর্তী মায়েদের ভাইটামিন ডি স্বল্পতা ঘটতে পারে সূর্যালোক-সমৃদ্ধ দেশে-ও।
অট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (University of Queensland) ও ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের (Aarhus University) Darryl W. Eyles ও John J. McGrath নামক গবেষকদের নতুন এক গবেষণা মতে, নবজাতকদের যাদের জন্মের পরে ভাইটামিন ডি (vitamin D) এর স্বল্পতা রয়েছে তাদের পরবর্তী জীবনে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে; যেসব নবজাতকদের স্বাভাবিক পরিমাণের ভাইটামিন ডি আছে তাদের তুলনায় জন্মের সময়ে স্বল্পতায় ভোগা নবজাতকদের পরবর্তী জীবনে স্কিৎসোফ্রেনিয়া হওয়ার ঝুঁকি ৪৪% শতাংশ বেশি হয়ে থাকে! যদিও স্কিৎসোফ্রেনিয়ার অনেক বংশগতিগত এবং পরিবেশগত ঝুঁকি ও কারণ রয়েছে, গবেষকদের মতে ডেনমার্কের ৮% কেইসের ক্ষেত্রে ভাইটামিন ডির স্বল্পতা দায়ী হয়ে থাকতে পারে। একই গবেষকদল ২০১৬ সালের আরেকটি গবেষণায় জন্মপূর্ব ভাইটামিন ডি স্বল্পতার সাথে শৈশবের অটিজমের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছিলেন।
গবেষণার জন্য গবেষকরা ১৯৮১-২০০০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা ২৬০২ জন ডেনিশ অংশগ্রহণকারীর রক্তে ভাইটামিন ডির পরিমাণ পরিমাপ করেছেন,
যারা পরবর্তীতে স্কিৎসোফ্রেনিয়া ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। গবেষকরা ব্যাধি আক্রান্ত হন নি এমন আরেকটি দলের সাথে (লিঙ্গ এবং জন্মসাল মিলিয়ে)
আক্রান্তদের উপাত্ত তুলনা করে দেখেছেন।
এই আবিষ্কারের ফলাফল জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইটামিন ডি স্বল্পতার চিকিৎসা করে স্কিৎসোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, গবেষকদের মতে গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা স্পিনা বাইফাইডা (spina
bifida) প্রতিরোধে যেমন ফোলেইট (folate) গ্রহণ করেন তেমন স্কিৎসোফ্রেনিয়া প্রতিরোধে ভাইটামিন ডি গ্রহণের কথা ভেবে দেখতে পারেন এবং এই
ব্যাপারে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন। কারণ, ব্যাধি প্রতিরোধ
করা ব্যাধি চিকিৎসার চেয়ে অনেক সহজ।
তথ্যসূত্র
Eyles, D. W., Trzaskowski, M., Vinkhuyzen, A. A., Mattheisen, M., Meier, S., Gooch, H., ... & Jang, S. E. (2018). The association between neonatal vitamin D status and risk of schizophrenia. Scientific reports, 8.
তথ্যসূত্র
Eyles, D. W., Trzaskowski, M., Vinkhuyzen, A. A., Mattheisen, M., Meier, S., Gooch, H., ... & Jang, S. E. (2018). The association between neonatal vitamin D status and risk of schizophrenia. Scientific reports, 8.
No comments:
Post a Comment