ঈশ্বর কি আছেন?
যেসব
প্রশ্নের উত্তর আগে ধর্মের এখতিয়ারে ছিলো বিজ্ঞান ক্রমবর্ধমানভাবে সেগুলোর
উত্তর দিচ্ছে। ধর্ম ছিলো যেসব প্রশ্ন আমরা সবাই করি সেগুলোর উত্তর দেয়ার এক
প্রাথমিক প্রচেষ্টা: কেনো আমরা এখানে, আমরা কোথা থেকে
এসেছি? অনেক আগে, উত্তরগুলো
প্রায় সবসময় একই ছিলো: ঈশ্বর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী ছিলো ভয়ানক জায়গা, ফলে ভাইকিংসদের মতন শক্তিশালী
লোকজন-ও প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যেমন বিজলী চমকানো, ঝড় কিংবা গ্রহণ বোঝার জন্য অতিপ্রাকৃতিক
সত্তায় বিশ্বাস করতো। আজকাল, বিজ্ঞান উত্তম এবং আরো সংগতিপূর্ণ উত্তর প্রদান করে,
কিন্তু মানুষ সবসময় ধর্মকে ধরে রাখবে, কারণ ধর্ম সান্ত্বনা (স্বস্তি) দেয় এবং
তারা বিজ্ঞান বিশ্বাস করে না কিংবা
বুঝে না।
কয়েক
বছরে আগে, দ্য টাইমস (The
Times)
পত্রিকা প্রথম পাতায় একটি শিরোনাম প্রকাশ করেছিলো: “হকিং: ঈশ্বর মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেন নি।” নিবন্ধটি চিত্রিত ছিলো। মাইকেলাঞ্জেলোর
(Michelangelo) একটি অঙ্কনে ঈশ্বরকে দেখানো হয়েছে, বজ্রকঠোর দেখতে। তারা আমার একটি
ছবি ছাপিয়েছিলো, ফিটফাট দেখতে। তারা আমাদের মাঝে একটি দ্বন্দ্বযুদ্ধ হিসেবে
ব্যাপারটাকে ফুটিয়ে তুলেছে। কিন্তু ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আমার কোনো রাগ নেই। আমি এই ধারণা
দিতে চাই না যে আমার কাজ ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ কিংবা মিথ্যা প্রমাণ করা নিয়ে।
আমার কাজ হচ্ছে আমাদের চারপাশের মহাবিশ্বকে বোঝার একটি যুক্তিসঙ্গত কাঠামো খুঁজে
বের করা নিয়ে।
শতাব্দী
ধরে, এটি বিশ্বাস করা হতো যে আমার মতো অক্ষম (disabled) মানুষেরা ঈশ্বর আরোপিত অভিশাপ
নিয়ে বেঁচে থাকে। এটা সম্ভব যে আমি উপরের কারো মনক্ষুণ্ণ করেছি, কিন্তু আমি চিন্তা
করতে পছন্দ করি যে সবকিছু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, প্রকৃতির নিয়মাবলি
দ্বারা। যদি আপনি বিজ্ঞানে বিশ্বাস করেন, আমার মতো, তবে আপনি বিশ্বাস করেন যে কিছু
কিছু সূত্রাবলি আছে যা সবসময় মানা হয়। যদি আপনি চান, আপনি বলতে পারেন যে এই সূত্রাবলি ঈশ্বরের কাজ,
কিন্তু সেটি ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণের চেয়ে ঈশ্বরের সংজ্ঞাই বটে। প্রায় ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে,
অ্যারিস্টার্কাস (Aristarchus) নামে একজন দার্শনিক গ্রহণসমূহ (eclipses) নিয়ে অনেক আগ্রহী ছিলেন, বিশেষ করে চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে। তিনি এই প্রশ্ন করতে যথেষ্ট সাহসী ছিলেন যে
গ্রহণসমূহ ঈশ্বরের সৃষ্টি কিনা। অ্যারিস্টার্কাস ছিলেন একজন সত্যিকারের বৈজ্ঞানিক
অগ্রগামী। তিনি আকাশমণ্ডলী গভীরভাবে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং একটি সাহসী উপসংহারে
পৌঁছেছিলেন:
তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে গ্রহণ হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে চাঁদকে অতিক্রমের সময় পৃথিবীর
ছায়া এবং কোনো ঐশ্বরিক ঘটনা নয়। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বিমুক্ত হয়ে, তিনি তার মাথার উপরে আকাশে কী ঘটছিলো তা বের করতে সক্ষম
হন, এবং সূর্য, পৃথিবী, এবং চাঁদের মধ্যকার প্রকৃত সম্পর্ক দেখিয়ে চিত্রসমূহ
আঁকেন। সেইসব থেকে তিনি আরো অসাধারণ এক উপসংহারে পোঁছেছিলেন। তিনি এই সিদ্ধান্তে
উপনীত হয়েছিলেন যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়, যেমনটি সবাই ধারণা করেছিলো, বরং
এটি সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। প্রকৃতপক্ষে, এই ব্যবস্থা বুঝতে পারলে সব
ধরণের গ্রহণ ব্যাখ্যা করা যায়। যখন চাঁদ পৃথিবীর উপর তার ছায়া ফেলে তখন সূর্যগ্রহণ
ঘটে। কিন্তু অ্যারিস্টার্কাস আরো বিস্তারিত জানালেন। তিনি প্রস্তাব করলেন যে
নক্ষত্রসমূহ স্বর্গের মেঝেতে কিছু ছিদ্র নয়, যা তার সমসাময়িক লোকেরা বিশ্বাস করতো,
বরং নক্ষত্রসমূহ হচ্ছে আমাদের সূর্যের মতন অন্যান্য সূর্যসমূহ, অনেক দূরে অবস্থিত। কী এক
অত্যাশ্চর্য উপলব্ধি ছিলো! মহাবিশ্ব হচ্ছে নিয়মাবলি কিংবা সূত্রাবলি দ্বারা
পরিচালিত একটি মেশিন, এবং সেই সূত্রাবলি মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব।
আমি
মনে করি এই সূত্রাবলির আবিষ্কার মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন, প্রকৃতির এই বিধিসমূহ-
আমরা এখন এই নামে তাদের অভিহিত করি- আমাদের জানাবে যে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার
জন্য আমাদের কোনো দেবতার প্রয়োজন আছে কিনা। প্রকৃতির নিয়ম বা বিধিসমূহ বস্তুসমূহ বা ব্যাপারসমূহ অতীত, বর্তমান,
এবং ভবিষ্যতে কীভাবে কাজ করে তার বর্ণনা। টেনিসে, বল সবসময় সেখানেই যায় এই বিধিসমূহ যেখানে যাবে বলে নির্দেশ করে। এবং এখানে
অন্যান্য অনেক বিধি-ও
কাজ করে। সেগুলো সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে, কীভাবে
খেলোয়াড়ের পেশিতে বল ছোঁড়ার শক্তি উৎপন্ন হওয়া থেকে শুরু করে যে গতিতে তাদের পায়ের নিচের
ঘাস বড় হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে এই প্রাকৃতিক সূত্রাবলি বা
বিধিসমূহ পরিবর্তনযোগ্য নয়, এবং এগুলো সার্বজনীন। সেগুলো শুধুমাত্র একটি বলের
উড্ডয়নের ক্ষেত্রে
প্রয়োগ হয় না, বরং একটি গ্রহের গতি, এবং মহাবিশ্বের অন্যান্য সব কিছুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ হয়। মানুষের বানানো আইন
বা বিধির তুলনায়, প্রাকৃতির বিধি বা সূত্রাবলি ভাঙা যায় না- এজন্যই সেগুলো এতো শক্তিশালী, এবং যখন ধর্মীয়
দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়, সেগুলো
বিতর্কিত-ও।
যদি
আপনি আমার মতো মানেন যে প্রাকৃতিক বিধিসমূহ সুনির্দিষ্ট (স্থায়ী), তবে এটি জিজ্ঞেস
করতে বেশিক্ষণ লাগে না যে: ঈশ্বরের ভূমিকা কী? এই ব্যাপারটি বিজ্ঞান এবং ধর্মের মধ্যে দ্বন্দ্বের
একটি বড় অংশ, কিন্তু যদিও আমার মতামত (পত্রিকায়) শিরোনাম হয়েছে, তবে এটি আসলে একটি প্রাচীন দ্বন্দ্ব।
কেউ একজন হয়তো ঈশ্বরকে সংজ্ঞায়িত করতে পারেন প্রাকৃতিক বিধিসমূহের প্রতিমূর্তি
হিসেবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈশ্বরকে এভাবে চিন্তা করে না। তারা মানুষের-মতো এক সত্তাকে
বোঝায়, যার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতে পারে। যখন আপনি এই বিশাল মহাবিশ্বের দিকে
তাকান, এবং এতে মানুষের জীবন কী ক্ষুদ্র নগণ্য এবং আকস্মিক, তখন সেটি সবচেয়ে
অসম্ভব (অবোধ্য) মনে হয়।
আমি
“ঈশ্বর”
শব্দটি নৈর্ব্যত্তিক অর্থে ব্যবহার করি, যেমনটি আইনস্টাইন করেছিলেন প্রাকৃতিক
বিধিসমূহের (বোঝানোর) জন্য, তাই ঈশ্বরের মন জানা হচ্ছে প্রাকৃতিক বিধিসমূহ জানা।
আমার ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে যে আমরা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ঈশ্বরের মন জানতে পারবো।
যে
একটি অবশিষ্ট ব্যাপারে ধর্ম এখন দাবি রাখতে পারে সেটি হচ্ছে মহাবিশ্বের উৎপত্তি,
কিন্তু এখানে-ও বিজ্ঞান উন্নতি করছে এবং শীঘ্রই কীভাবে মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিলো সেই
ব্যাপারে নির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারবে। আমি একটি বই প্রকাশ করেছিলাম যাতে ঈশ্বর
মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছিলো কিনা তা নিয়ে লিখেছিলাম, এবং এটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।
লোকজনের মনক্ষুণ্ণ হলো যে একজন বিজ্ঞানীর ধর্ম বিষয়ে কিছু বলা উচিত নয়। আমার কাউকে
বলার কোনো ইচ্ছে নেই কী বিশ্বাস করতে হবে, কিন্তু আমার কাছে ঈশ্বর আছেন কিনা তা জিজ্ঞেস
করা বিজ্ঞানের জন্য একটি বৈধ প্রশ্ন। সর্বোপরি, মহাবিশ্ব কী বা কে সৃষ্টি করেছে
এবং নিয়ন্ত্রণ করছে, সেটির চেয়ে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ বা মৌলিক রহস্য সম্পর্কে
চিন্তা করা কঠিন।
আমি
মনে করি যে মহাবিশ্ব
কোনো কিছু না (শূন্য) থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৃষ্টি হয়েছে, বিজ্ঞানের বিধিসমূহ
অনুযায়ী। বিজ্ঞানের মৌলিক অনুমান হচ্ছে বৈজ্ঞানিক নিয়তিবাদ (scientific determinism)। বিজ্ঞানের
বিধিসমূহ মহাবিশ্বের বিবর্তন
নির্ধারণ করে, কোনো এক মুহূর্তে এর প্রদত্ত অবস্থা অনুসারে। এই বিধিসমূহ ঈশ্বর
দ্বারা নির্ধারিত বা জারি হয়ে থাকতে পারে, নাও হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তিনি এই
বিধিসমূহতে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না, তা না হলে এগুলো বিধি হতো না। সেইক্ষেত্রে,
ঈশ্বরের হাতে মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা আছে, কিন্তু মনে
হচ্ছে যে এখানেও বিধিসমূহ আছে। সুতারাং,
ঈশ্বরের কোনো স্বাধীনতাই থাকবে না।
মহাবিশ্বের
জটিলতা এবং বৈচিত্র্য সত্ত্বেও, যদি আপনি একটি মহাবিশ্ব তৈরি করতে চান তবে আপনার
তিনটি উপাদানের প্রয়োজন। কল্পনা করুন যে কোনো এক ধরণের মহাজাগতিক পাকপ্রণালীর বইয়ে
আমরা সেগুলোকে তালিকাবদ্ধ করতে পারি। তাহলে মহাবিশ্ব বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় তিনটি
উপাদান কী? প্রথমটি হচ্ছে বস্তু (matter)- যার ভর (mass) আছে। আমাদের চারপাশে বস্তু
আছে, আমাদের পায়ের তলায় মাটিতে এবং মহাশূন্যে মহাকাশে। ধুলো, পাথর, বরফ, তরল।
গ্যাসের বিশাল মেঘ, তারাদের বড় বড় সর্পিল-কাঠামো (spiral),
একেকটিতে অবিশ্বাস্য দূরত্বে প্রসারিত বিলিয়ন বিলিয়ন সূর্য রয়েছে।
দ্বিতীয়
যে জিনিসটি আপনার প্রয়োজন তা হচ্ছে শক্তি। এমনকি আপনি যদি কখনো এই ব্যাপারে চিন্তা
না করে-ও থাকেন, আমরা সবাই জানি শক্তি কী। আমরা প্রতিদিন শক্তির সম্মুখীন হই। সূর্যের দিকে তাকান এবং আপনি
আপনার মুখের উপর এটি অনুভব করবেন: তিরানব্বই মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত এক নক্ষত্রের উৎপাদিত শক্তি।
শক্তি মহাবিশ্বের মধ্যে প্রবাহিত হয়, যেসব প্রক্রিয়াসমূহ মহাবিশ্বকে একটি গতিশীল, অবিরাম
পরিবর্তনশীল অবস্থায় রাখে সেগুলোকে শক্তি ধাবিত করে।
সুতারাং
আমাদের বস্তু আছে এবং আমাদের শক্তি আছে। তৃতীয় যে জিনিসটি আমাদের দরকার একটি
মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য তা হচ্ছে স্থান (space)। প্রচুর স্থান।
আপনি মহাবিশ্বকে
অনেক কিছু বলতে পারেন- অসাধারণ, সুন্দর, হিংস্র- কিন্তু যে একটি জিনিস আপনি বলতে
পারবেন না তা হচ্ছে যে এটি আবদ্ধ। আমরা যেদিকে তাকাই সেখানে স্থান দেখি, আরো স্থান
এবং আরো স্থান। সবদিকে প্রসারিত। আপনার মাথা ঘুরানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এইসব বস্তু,
শক্তি, এবং স্থান কোথা থেকে এসেছে? বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত আমাদের কোনো ধারণা ছিলো
না।
উত্তরটি
এসেছে একজন মানুষের অন্তর্দৃষ্টি থেকে, সম্ভবত সবচেয়ে অসাধারণ বিজ্ঞানী। তার নাম
আলবার্ট আইনস্টাইন। দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে আমি কখনো তার সাথে দেখা করতে পারি নি,
যেহেতু তিনি যখন মারা গেছেন তখন আমার বয়েস সবে তের বছর। আইনস্টাইন খুব অসাধারণ
একটি ব্যাপার উপলব্ধি করেছিলেন: মহাবিশ্ব সৃষ্টির জন্য যে দুটো প্রধান উপাদান প্রয়োজন- ভর এবং শক্তি-
সেগুলো মূলত একই জিনিস, বলতে পারেন যে একই মুদ্রার দুই পিঠ। তার বিখ্যাত সমীকরণ E
= mc2 সাদামাটাভাবে বোঝায় যে বস্তুকে এক ধরণের শক্তি
হিসেবে চিন্তা করা যায় এবং তদ্বিপরীতভাবে (vice versa)। সুতারাং, তিনটি উপাদানের পরিবর্তে, আমরা
এখন বলতে পারি যে মহাবিশ্বের মাত্র দুটো জিনিস রয়েছে: শক্তি এবং স্থান। তবে
এইসব শক্তি ও স্থান কোথা থেকে এসেছে? এই উত্তর কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীদের কাজের পর
পাওয়া গেছে: শক্তি এবং ভর স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি ঘটনার
মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিলো যাকে আমরা এখন মহাবিস্ফোরণ (Big Bang) বলি।
মহাবিস্ফোরণের
সময়ে, একটি সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব অস্তিত্বে এসেছিলো, এবং এর সমস্ত স্থান নিয়ে। সবকিছু
স্ফীত হয়ে, যেনো একটি বেলুন ফুলে বিস্ফোরিত হয়েছে। সুতারাং, এইসব শক্তি ও স্থান
কোথা থেকে এসেছে? কীভাবে শক্তিতে পরিপূর্ণ, চমৎকার বিশালতা এবং এর মধ্যকার সবকিছু
সহ নিয়ে একটি সম্পূর্ণ মহাবিশ্ব কোনো কিছু না থেকে আবির্ভূত হয়েছে?
কিছু
মানুষের জন্য, ঈশ্বর এই অংশে ফিরে আসেন। ঈশরই
শক্তি এবং স্থান সৃষ্টি করেছেন।
মহাবিস্ফোরণ হচ্ছে সৃষ্টির
মুহূর্ত। কিন্তু বিজ্ঞান ভিন্ন কথা বলে। নিজেকে ঝামেলার মুখে ফেলার ঝুঁকি নিয়ে বলি, আমি মনে করি আমরা ভাইকিংসদের
যে সব প্রাকৃতিক ঘটনাবলি আতঙ্কগ্রস্ত করেছিলো তার চেয়ে অনেক কিছু বুঝতে পারি। আমরা আইনস্টাইনের আবিষ্কৃত শক্তি এবং স্থানের
সুন্দর প্রতিসাম্য (symmetry) পেরিয়ে আরো অনেক দূর যেতে পারি। আমরা প্রাকৃতিক বিধিসমূহকে ব্যবহার
করতে পারি মহাবিশ্বের খুব আদি অবস্থা জানতে এবং আবিষ্কার করতে পারি ঈশ্বরেরে
অস্তিত্বই সেটিকে ব্যাখ্যার একমাত্র উপায় কিনা।
দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্ধের পরে আমি যখন ইংল্যান্ডে বড় হচ্ছিলাম, সেই সময় ছিলো কঠোর মিতব্যয়িতার সময়।
আমাদের বলা হয়েছিলো যে কোনো কিছু ছাড়া (কোনো কিছু না থেকে) কিছু পাওয়া যায় না।
কিন্তু এখন, এক জীবন কাজ করে, আমি মনে করি আপনি বিনামূল্যে একটি সমগ্র মহাবিশ্ব
পেতে পারেন।
মহাবিস্ফোরণের
মূলে বড় রহস্য হচ্ছে এটি ব্যাখ্যা করা যে কীভাবে স্থান এবং শক্তির একটি সম্পূর্ণ,
অদ্ভুতভাবে বিশাল মহাবিশ্ব কোনো কিছু না থেকে বাস্তব রূপ লাভ করতে পারে। এই রহস্য
লুকায়িত আমার মহাবিশ্বের একটি অদ্ভুততম ব্যাপারে। পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রাবলি “ঋণাত্মক
শক্তি”
নামে কিছুর অস্তিত্বের দাবি করে।
এই
অদ্ভুত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সম্পর্কে আপনার মাথা ঘামানোর জন্য একটি সহজ উপমা
ব্যবহার করি। মনে করুন যে একজন ব্যক্তি একটি সমতল জমিতে একটি পাহাড় নির্মাণ করতে
চায়। পাহাড়টি মহাবিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করবে। এই পাহাড় বানানোর জন্য ব্যক্তি
(পাশের) মাটিতে একটি গর্ত খুঁড়ে এবং খননের এই মাটিকে ব্যবহার করে তার পাহাড় বানায়।
কিন্তু অবশ্যই তিনি শুধু পাহাড় তৈরি করছেন না- একই সাথে একটি বিশাল গর্ত-ও তৈরি
করছেন নিকটবর্তী, যেটি একভাবে
পাহাড়ের ঋণাত্মক সংস্করণ। গর্তে যে মাটি ছিলো সেটি এখন পাহাড় হয়েছে, ফলে সব কিছুর
পুরোপুরি ভারসাম্য রক্ষা হয়েছে। মহাবিশ্বের শুরুতে কী ঘটেছিলো তার পেছনে এই তত্ত্ব
কাজ করেছিলো।
যখন
মহাবিস্ফোরণ বিশাল পরিমাণে ধনাত্মক শক্তি উৎপাদন করেছিলো, একই সময়ে এটি একই পরিমাণ ঋণাত্মক শক্তি উৎপাদন
করেছিলো। এইভাবে, ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক শক্তির যোগফল শূন্য, সবসময়। এটি প্রকৃতির
আরেকটি বিধি।
কিন্তু
আজ এইসব ঋণাত্মক শক্তি কোথায়? এটি আমাদের মহাজাগতিক পাকপ্রণালীর বইয়ের তৃতীয়
উপাদান: এটি
স্থানে (in space)। এটি
অদ্ভুত মনে হতে পারে, কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ এবং গতি সংক্রান্ত প্রাকৃতিক বিধিসমুহ
(যা বিজ্ঞানের সবচেয়ে প্রাচীন বিধিসমূহের অন্যতম) মতে, স্থান নিজেই ঋণাত্মক শক্তির
বিশাল ভাণ্ডার। সবকিছুর যোগফল যেনো শূন্য হয় তা নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট।
আমি
স্বীকার করছি যে, যদি না গণিত আপনার বিষয় হয়ে থাকে, তবে এটি বোঝা কঠিন, কিন্তু এটি
সত্য। বিলিয়ন বিলিয়ন ছায়াপথের অশেষ জাল, যা একে অপরকে মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা টানছে,
এটি বিশাল সংরক্ষণাগার যন্ত্রের (storage
device) মতো কাজ করে। মহাবিশ্ব যেনো ঋণাত্মক শক্তি সঞ্চয়ের এক
বিশাল ব্যাটারি। ইতিবাচক দিক হচ্ছে যে- এখন আমাদের কাছে দৃশ্যমান ভর এবং শক্তি-
পাহাড়ের মতো। সংশ্লিষ্ট গর্ত, অথবা ঋণাত্মক দিক (শক্তি), স্থান জুড়ে ছড়িয়ে
আছে।
সুতারাং
ঈশ্বর আছেন কিনা তা জানতে আমাদের অনুসন্ধানের অর্থ কী? এর মানে হচ্ছে যে যদি
মহাবিশ্বের সবকিছু যোগ করলে যোগফল শূন্য হয়, তবে এর সৃষ্টির জন্য আপনার ঈশ্বরের
প্রয়োজন নেই। মহাবিশ্ব বিনামূল্য পাওয়া চরম মধ্যাহ্নভোজ।
যেহেতু
আমরা জানি যে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক শক্তি যোগে শূন্য হয়, আমাদের এখন যা করতে হবে তা হচ্ছে বের
করা যে কী- বা সাহস করে বলি যে কে এই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথমে শুরু করেছে। কী কারণ
একটি মহাবিশ্বকে
স্বতঃস্ফূর্ত আবির্ভাব করতে পারে? প্রথমত, এটিকে একটি বিভ্রান্তিকর সমস্যা মনে হয়-
অন্তত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে জিনিসপত্র তো শূন্য থেকে বাস্তবে পরিণত হয় না। আপনি
আঙুল তুড়ি দিয়ে চাইলেই আপনার যখন ইচ্ছে হয় এক কাপ কফি আনতে পারবেন না। আপনাকে অন্যান্য জিনিস থেকে,
যেমন কফিশুঁটি (coffee beans),
পানি, সম্ভবত কিছু দুধ আর চিনি দিয়ে এটি বানাতে হবে। কিন্তু আপনি এই কফি কাপের মধ্য দিয়ে দুধের
কণার মধ্য দিয়ে যান, পরমাণুর স্তরে এবং উপ-পারমাণবিক স্তরের দিকে যান, এবং আপনি
এমন একটি জগতে প্রবেশ করবেন যেখানে কোনো কিছ না থেকে কোনো কিছু সম্ভব। অন্ততপক্ষে,
কিছু স্বল্প সময়ের জন্য। কারণ, এই স্কেলে, কণাগুলো, যেমন প্রোটন, আমরা যাকে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান বলি
সেই প্রকৃতির বিধিসমূহ অনুসারে আচরণ করে। এবং সেগুলো সত্যিই এলোমেলোভাবে আবির্ভূত
হতে পারে, কিছুক্ষণের জন্য থাকে, এবং এরপর বিলুপ্ত হয়ে যায়, অন্যত্র পুনরায়
আবির্ভূত হতে পারে।
যেহেতু
আমরা জানি যে মহাবিশ্ব নিজেই খুব ক্ষুদ্র ছিলো- সম্ভবত প্রোটনের চেয়ে-ও ক্ষুদ্র-
এর মানে হচ্ছে
অসাধারণ কিছু। এর অর্থ হচ্ছে যে মহাবিশ্ব নিজেই, তার সমস্ত মন-আশ্চর্যান্বিত করা
বিশালতা এবং জটিলতা নিয়ে, প্রকৃতির জ্ঞাত বিধিসমূহ লঙ্ঘন না করেই অস্তিত্বে
আবির্ভূত হয়ে থাকতে পারে। যখন স্থান নিজেই প্রসারিত হচ্ছিলো সেই মুহূর্ত থেকে
বিশাল পরিমাণ শক্তি মুক্তি পেয়েছে - ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ঋণাত্মক শক্তি সঞ্চয়
করার একটি স্থানে। কিন্তু অবশ্যই সেই সংকটপূর্ণ (সমালোচনামূলক) প্রশ্ন আবার
উত্থাপন করা যায়: ঈশ্বর কি মহাবিস্ফোরণ ঘটতে দেওয়া কোয়ান্টাম বিধিসমূহ সৃষ্টি করেছিলেন?
সংক্ষেপে বলা যায়, মহাবিস্ফোরণ যাতে বিস্ফোরিত হতে পারে তা সেট আপ করার জন্য কি আমাদের ঈশ্বরকে
দরকার? আমার কোনো ইচ্ছে নেই বিশ্বাসী কাউকে অসন্তুষ্ট করার বা মনে কষ্ট দেয়ার,
কিন্তু আমি মনে করি বিজ্ঞানের একজন ঐশ্বরিক সৃষ্টিকর্তার চেয়ে আরো অকাট্য ব্যাখ্যা
আছে।
আমাদের
প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা আমাদের
ভাবায় যে যা কিছু ঘটে তা অবশ্যই কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া কোনো কিছুর কারণে ঘটে। তাই
আমাদের এটা মনে করা স্বাভাবিক যে কোনো কিছু- সম্ভবত ঈশ্বর- মহাবিশ্বকে অস্তিত্বের
মধ্যে আসতে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা যখন সমগ্ররূপে মহাবিশ্বের কথা বলি, তার জন্য ঈশ্বর অপরিহার্য নন।
আমি বিস্তারিত বলছি। মনে করুন যে একটি নদী, যা পর্বতপার্শ্ব থেকে প্রবাহিত হয়ে
পড়ছে। নদী কীভাবে সম্ভব হয়েছে? হয়তো পর্বতের উপরে আগে যে বৃষ্টি পড়েছিলো তার ফলে। তবে বৃষ্টি
কীভাবে সম্ভব হয়েছে?
একটি ভাল উত্তর হবে সূর্য, যা সাগরের উপর রোদ ফেলেছে এবং জলকে বাষ্পে পরিণত করে
আকাশে উত্থাপিত করেছে এবং মেঘ তৈরি করেছে। ঠিক আছে, কী কারণে সূর্য জ্বলজ্বলে
হয়েছে? যদি আমরা সূর্যের ভেতরে
তাকাই তবে আমরা কেন্দ্রীণ সংযোজন (fusion) নামে পরিচিত একটি
প্রক্রিয়া দেখতে পাবো, যাতে হাইট্রোজেন পরমাণুগুলো হিলিয়াম গঠনে যোগ দেয়, ও এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে
শক্তি নির্গত করে। এই পর্যন্ত সব ঠিকই আছে। হাইড্রোজেন কোথা থেকে এসেছে? উত্তর: মহাবিস্ফোরণ। কিন্তু
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হচ্ছে এটি। প্রকৃতির
বিধিসমূহ আমাদের বলে যে কোনো সহায়তা ছাড়াই মহাবিশ্ব কেবল একটি প্রোটনের মতো
অস্তিত্বে আসতে পারে,
শুধু তাই না, বরং এটি সম্ভব যে কোনো কিছু মহাবিস্ফোরণ ঘটায় নি। কিছুই না।
ব্যাখ্যাটি
আইনস্টাইনের তত্ত্বাবলির মধ্যে,
এবং তার অন্তর্দৃষ্টিতে নিহিত আছে যে মহাবিশ্বের স্থান এবং সময় কীভাবে মৌলিকভাবে
বিজড়িত। মহাবিস্ফোরণের তাৎক্ষণিক সময়ে
সময়ের ক্ষেত্রে খুব
বিস্ময়কর কিছু ঘটেছিলো। সময় নিজেই শুরু হয়েছিলো।
এই
মন-আশ্চর্যান্বিত হওয়া ধারণাটি বোঝার জন্য, বিবেচনা করুন যে একটি কৃষ্ণগহ্বর
স্থানে ভাসমান। একটি সাধারণ কৃষ্ণগহ্বর হচ্ছে একটি নক্ষত্র যা এতো বিশাল যে এটি
নিজের উপর নিজেই ভেঙে পড়েছে। এটি এতো বিশাল যে এমনকি আলো-ও এর মাধ্যাকর্ষণ থেকে
পালাতে পারে না, এই কারণেই এটি প্রায় পুরোপুরি কালো। এর মহাকর্ষীয় টান এতো বেশি
শক্তিশালী যে এটি শুধু মাত্র আলো নয়, সময়কে-ও বাঁকিয়ে দেয় এবং বিকৃত করে। কীভাবে
সম্ভব তা দেখতে, কল্পনা করুন যে একটি ঘড়িকে কৃষ্ণগহ্বর টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসছে। ঘড়িটি
কৃষ্ণগহ্বরের যতো কাছে এবং যতো কাছে যেতে থাকবে, এটি ধীর থেকে ধীরতর হতে শুরু করবে। সময়
নিজেই ধীর হতে শুরু করবে। এখন কল্পনা করুন যে ঘড়িটি কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে ঢুকছে-
অবশ্যই মনে করুন যে, যদি
ঘড়িটি কৃষ্ণগহ্বরের চরম মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে সহ্য করতে পারে- ঘড়িটি আসলেই থেমে
যাবে। এটি থেমে যাবে এই না যে এটি ভেঙে গেছে, বরং কারণ কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে সময়
নিজেই বিদ্যমান নয়, অস্তিত্বহীন। এবং ঠিক এটাই ঘটেছিলো মহাবিশ্বের শুরুতে।
গত
শত বছরে, মহাবিশ্বকে বোঝার ক্ষেত্রে আমরা দর্শনীয় অগ্রগতি করেছি। আমরা এখন বিধিসমূহ
জানি যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কী ঘটে তা নিয়ন্ত্রণ করে, শুধুমাত্র সবচেয়ে চরম অবস্থার
ক্ষেত্র ছাড়া, যেমন মহাবিশ্বের শুরুতে কিংবা কৃষ্ণগহ্বরের ভেতরে কী ঘটে। আমি
বিশ্বাস করি, মহাবিশ্বের শুরুতে সময় কী ভূমিকা পালন করেছে তা একজন মহিমান্বিত
পরিকল্পকের প্রয়োজন নির্মোচন করার এবং মহাবিশ্ব কীভাবে নিজেকে সৃষ্টি করেছে তা
প্রকাশ করার শেষ চাবি।
আমরা
যদি সময় ভ্রমণ করে মহাবিস্ফোরণের মুহূর্তের দিকে যাই, তবে মহাবিশ্ব ক্রমে ক্ষুদ্র
থেকে ক্ষুদ্রতর হতে থাকে, যতোক্ষণ না এটি অবশেষে এমন একটি বিন্দুতে আসে যেখানে
সমগ্র মহাবিশ্ব একটি অতি ক্ষুদ্র স্থান যে এটি কার্যত একটি একক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র
ছোট, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘন কৃষ্ণগহ্বর। এবং আধুনিক-দিনের কৃষ্ণগহ্বরের ক্ষেত্রে
যেমন, যেগুলো স্থানে ভাসমান (ছড়িয়ে আছে), প্রকৃতির বিধিসমূহ এখানে বেশ অসাধারণ কিছু নির্দেশ করে। সেগুলো আমাদের বলে যে সময় নিজেই এখানে
অবশ্যই বন্ধ হয়ে যাবে। আপনি মহাবিস্ফোরণের আগের কোনো এক সময়ে যেতে পারবেন না
কারণ মহাবিস্ফোরণের আগে কোনো সময় ছিলো না। আমরা অবশেষে এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যেটির কোনো কারণ নেই, কারণ কোনো কারণ
থাকার জন্য বা কারণের অস্তিত্বের জন্য কোনো সময় ছিলো না। আমার জন্য এটির অর্থ হচ্ছে যে একজন সৃষ্টিকর্তার কোনো
সম্ভাবনা নেই, কারণ একজন সৃষ্টিকর্তার থাকার জন্য বা অস্তিত্বের জন্য কোনো সময়
ছিলো না।
মানুষ
বড় প্রশ্নগুলোর উত্তর চায়, যেমন আমরা এখানে কেনো। তারা উত্তর এতো সহজ হবে আশা করে
না, তাই তারা কিছু সংগ্রাম করার জন্য প্রস্তুত। যখন মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে ঈশ্বর
মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে কিনা; আমি তাদের বলি যে প্রশ্নটি নিজেই কোনো অর্থ বহন করে না।
মহাবিস্ফোরণের আগে সময় নিজেই অস্তিত্বমান ছিলো না তাই মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার জন্য
ঈশ্বরের কোনো সময় ছিলো না। অনেকটি পৃথিবীর প্রান্তের দিকনির্দেশের জন্য জিজ্ঞাসা
করার মতো- পৃথিবী এমন একটি গোলক যেটির কোনো প্রান্ত নেই, তাই এর প্রান্তের সন্ধান করা একটি নিরর্থক কসরত।
আমার কি বিশ্বাস আছে? আমরা প্রত্যেকেই আমরা যা চাই তা
বিশ্বাস করতে স্বাধীন,
এবং এটি আমার অভিমত যে সহজ ব্যাখ্যাটি হচ্ছে যে কোনো ঈশ্বর নেই। কেউই মহাবিশ্ব
সৃষ্টি করে নি, এবং কেউ আমাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি আমাকে এক প্রগাঢ়
উপলব্ধির দিকে পরিচালনা করে: সম্ভবত কোনো স্বর্গ নেই এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন-ও নেই। আমি মনে করি
পরকালে বিশ্বাস হচ্ছে শুধুমাত্র অভিলাষী চিন্তা। এর জন্য কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ
নেই, এবং এটি বিজ্ঞানে আমরা যা কিছু জানি তা প্রকাশ্যে অগ্রাহ্য করে। আমি মনে করি
আমরা যখন মারা যাই আমরা ধুলোয় ফিরে যাই। কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকায় এক বোধ আছে,
আমাদের প্রভাবে, এবং আমাদের জিনসমূহে, যা আমরা আমাদের সন্তানদের কাছে সমর্পণ করি।
আমাদের এই এক জীবন আছে মহাবিশ্বের মহিমান্বিত নকশাকে উপলব্ধিপূর্বক উপভোগ করার, এবং
তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
কীভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব মহাবিশ্বের শুরু
এবং শেষ হওয়া সম্পর্কে আপনার বোধগম্যের সাথে খাপ খায়? এবং যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব থেকে
থাকে এবং আপনি তার সাথে দেখা করার সুযোগ পান, তাহলে আপনি তাকে কী জিজ্ঞাসা করবেন?
প্রশ্নটি হচ্ছে, “মহাবিশ্ব যেভাবে শুরু
হয়েছে তা কি ‘আমরা বুঝতে পারি না এমন কোনো কারণে’ ঈশ্বর মনোনীত করেছিলেন, অথবা এটি বিজ্ঞানের
বিধিসমূহ দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিলো? আমি মনে করি দ্বিতীয়টি। আপনি যদি চান, আপনি বিজ্ঞানের
বিধিসমূহকে “ঈশ্বর” বলতে পারেন, কিন্তু এটি একজন ব্যক্তিগত ঈশ্বর হবে না যার সাথে আপনি দেখা
করতে পারবেন এবং আপনার প্রশ্ন উপস্থাপন করতে পারবেন। তারপর-ও, যদি এমন একজন ঈশ্বর
থেকেই থাকেন, তবে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই যে তিনি এগার মাত্রায় এম-তত্ত্বের মতো এতো
জটিল কিছুর কথা কি চিন্তা করেছিলেন?
An intriguing discussion is definitely worth comment.
ReplyDeleteThere's no doubt that that you need to publish more on this topic, it may not be a
taboo matter but generally people don't discuss these subjects.
To the next! Kind regards!!