১
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য আপনি কী করতে
রাজি? টাকা খরচ, অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়া, নতুন সম্পর্ক পাতানো? যদি বলি, খুব
সাধারণ ব্যাপার, যেমন, প্রকৃতিতে সময় কাটালে আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
ঘটবে?
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটে যদি আপনি
প্রকৃতিতে সময় কাটান। প্রকৃতিতে সময় কাটানোর ফলে আপনার মনোযোগ ধরে রাখার সময় বাড়বে
বা মনোযোগের বিস্তার (attention span) ঘটবে, এবং স্ব-শৃঙ্খলার উন্নয়ন
ঘটবে, সাম্প্রতিক
প্রকাশিত গবেষণার এক পর্যালোচনা মতে। বন, গাছগাছালি, ফুল, পাখি এইসব
পরিবেষ্টিত পরিবেশে থাকলে মানুষের স্ট্রেস কমে এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
ঘটে, এমনকি বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি যেমন ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতার রোগ, এডিএইচডি (ADHD) ইত্যাদি ব্যাধির উপসর্গগুলো কমে। এডিএসডি রোগের জন্য ডাক্তাররা
অ্যাম্পেটামিন (amphetamine), রিটালিন (Ritalin) ইত্যাদি সাইকোস্টিমুলান্ট দিয়ে থাকেন রোগীদেরকে। এইসব ওষুধ
এডিএসডি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মনোযোগ বৃদ্ধি করে, অতিরিক্ত চঞ্চলতা কমায়; তবে
এইসব ওষুধ অনেক ব্যয়বহুল, আসক্তির আশংকা থাকে, নিয়মিত গ্রহণ করতে হয়, এবং অন্যান্য
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু এইসব ওষুধের-ও সমপরিমাণ উপকার পাওয়া যায় প্রকৃতিতে
সময় কাটিয়ে!
এক গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে যেসব বাচ্চারা এডিএইচডি ব্যাধিতে
আক্রান্ত তারা যদি উদ্যানে (পার্ক) ২০ মিনিট হাঁটা-চলাফেরা করে তবে তাদের
উপসর্গগুলোর ওষুধ গ্রহণের সমান উন্নতি ঘটে। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের
প্রাপ্ত উপাত্ত মতে, প্রকৃতিতে এই বিশ মিনিটের মতন হাঁটা-চলাফেরা করলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল (Cortisol) এর পরিমাণ হ্রাস পায়। কর্টিসল
হচ্ছে মানব দেহের অন্যতম স্ট্রেস হরমোন, আপনি যখন কোনো অপ্রত্যাশিত, বিপদজনক বা
স্ট্রেসফুল (এমনকি সামাজিকভাবে) ঘটনা বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তখন আপনার
মস্তিষ্ক সংকেত প্রদান করে কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণের জন্য; ফলে এই হরমোন আপনার
হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসের কার্য-হার বাড়িয়ে, রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে আপনাকে ঘটনা বা
পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু যদি এই হরমোন শরীরে দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ
পরিমাণে থাকে তবে আপনার মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষদের মৃত্যু থেকে শুরু করে বিভিন্ন
অঙ্গপ্রত্যাঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড, পেশী ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই যখন বলা হয় যে
প্রকৃতিতে সময় কাটালে কর্টিসোল হরমোন হ্রাস পায় তখন এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রকৃতিতে সময় কাটানোর আরেকটি অন্যতম উপকার হচ্ছে এটি আপনার
শেখার হার বৃদ্ধি করে, এবং শিখতে সাহায্য করে। গবেষকরা ধারণা করছেন মনোযোগের
বিস্তার ঘটিয়ে, শেখার ক্ষেত্রে ব্যক্তির আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করে প্রকৃতি শিখতে
সাহায্য করে।
এইসব ফলাফল একশের-ও বেশি সংখ্যক গবেষণার পর্যালোচনা থেকে
প্রাপ্ত উপসংহার, এবং গবেষকরা বলছেন যে প্রকৃতিতে সময় কাটানোর সাথে এইসব
ফলাফলগুলোর মূলত কারণ-এবং-প্রভাব (cause-and-effect) সম্পর্ক রয়েছে।
২
সবচেয়ে বড় কথা যেহেতু প্রকৃতিতে সময় কাটানো কোনো ব্যয়বহুল
ব্যাপার নয়, এবং খুব সহজেই ব্যাপারটিকে প্রাত্যাহিক সময়সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা
যায়- বিভিন্ন ইস্কুল প্রতিষ্ঠান তাদের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মানসিক ও শারীরিক
স্বাস্থ্যের উন্নয়ন কর্মসূচিতে এই ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বিশেষ করে
বাঙলাদেশের মতন দরিদ্র রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ খুবই কম, যেখানে যেকোনো ব্যক্তি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রকৃতিতে সময় কাটানোর ব্যাপারটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
তাহলে আর দেরি কি, এখনই বেড়িয়ে পড়ুন নিকটস্থ সবুজায়নে।
No comments:
Post a Comment