স্টিফেন হকিং - বড় প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর
অবতরণিকা: এডি রেডমেইন
স্টিফেন হকিংকে আমি প্রথমবার যখন দেখেছিলাম
তখন তার অসাধারণ শক্তি এবং আক্রম্যতা
দেখে অভিভূত হয়েছিলাম। আমার তত্ত্বানুসন্ধান থেকে তার চোখের দৃঢ় দৃষ্টি এবং নিশ্চল
শরীর আমার কাছে পরিচিত ছিলো- আমি তখন সবে The Theory of Everything চলচ্চিত্রে স্টিফেন হকিংয়ের ভূমিকায় অভিনয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলাম এবং কয়েক মাস
ধরে তার কাজ এবং তার অক্ষমতার
(disability)
ধরণ সম্পর্কে
পড়ছিলাম, বুঝতে চেষ্টা করছিলাম কীভাবে আমার শরীরের মাধ্যমে মোটর স্নায়ু রোগের বিকাশ
ফুটিয়ে তোলা যায়।
তারপর-ও যখন স্টিফেনের সাথে আমার দেখা হলো,
এই গুরুতুল্য, অসাধারণ প্রতিভাধর একজন বিজ্ঞানী, যার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিলো
অত্যন্ত ভাবপূর্ণ এক জোড়া ভ্রু-সহ একটি কম্পিউটার-চালিত কণ্ঠস্বর, আমি তখন ধরাশয়ী
হয়ে গেলাম। নীরবতার সময়ে সাধারণত আমি সহজে বিচলিত বোধ করি এবং ফলে বেশি বেশি কথা
বলি, অন্যদিকে স্টিফেন নীরবতার শক্তি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলো, যেনো নিজেকে যাচাই বা সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করা
হচ্ছে এই অনুভূতির শক্তি। বিচলিত আমি তার সাথে আমাদের জন্মদিন নিয়ে কথা বলার
সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেমন আমাদের একজনের জন্মদিন অন্যজনের কয়েকদিন পরেই, যার ফলে
আমরা একই রাশিচক্রের জাতক। কয়েক মিনিট পরে স্টিফেন উত্তর দিলো যে, “আমি
একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। জ্যোতিষী নই।” এবং তিনি জোর দিয়ে বললেন যে আমি তাকে যেনো
শুধু স্টিফেন হিসেবেই ডাকি, অধ্যাপক স্টিফেন হিসেবে সম্বোধন করা যেনো বন্ধ করি।
আমাকে বলা হয়েছিলো…
স্টিফেনের চরিত্রে অভিনয় করা ছিলো একটি
অসাধারণ সুযোগ। চরিত্রটি আমাকে অনেক টেনেছিলো কারণ যে একদিকে বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য
স্টিফেনের বাহ্য জয়জয়কার এবং অন্যদিকে বিংশতি বয়েসের শুরু থেকেই মোটর স্নায়ুরোগের
বিরুদ্ধে তার অন্তঃস্থ লড়াই- এই দ্বৈততার কারণে। তিনি ছিলেন অনন্য, জটিল, পারিবারিক
জীবন, বিশাল কেতাবি অর্জন ও মানুষের প্রচেষ্টার এক সমৃদ্ধ গল্প, এবং সকল
প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ঋজু অটল একজন। যদিও আমরা চলচ্চিত্রে তাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে
তুলে ধরতে চেয়েছি, একই সাথে
আমরা স্টিফেনের জীবনে উনার এবং উনাকে যারা ভালোবাসতো তাদের সবার মনের দৃঢ়তা আর
সাহস-ও ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি।
কিন্তু স্টিফেনের অন্য আরেকটি দিক- উনার চটক
বা ক্রীড়ক ভাব-ও চিত্রিত করা ছিলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমার ট্রেইলারে শেষ
পর্যন্ত আমি তিনটি ছবি রেখেছি। একটি ছবিতে আইনস্টাইন জিহ্বা বের করে আছেন, যার সাথে স্টিফেনের কৌতুকপূর্ণ
বুদ্ধির মিল ছিলো। অন্যটি ছিলো এক গোছা তাসের মাঝে জোকারের ছবি, যে কিনা একজন পুতুল-ক্রীড়নক
(puppeteer),
কারণ আমার মালুম হয়েছে যে স্টিফেনের হাতের মুঠোয় সবসময় লোক ছিলো। এবং তৃতীয়টি ছিলো
জেমস ডিনের (James Dean) ছবি, যার কাছ থেকে আমি পেয়েছি
ঝলক এবং হাস্যরসের পাঠ।
একজন জীবিত ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করার
অন্যতম পীড়া হচ্ছে যে যে ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয় করেছেন তার কাছে আপনার অভিনয়ের
ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। স্টিফেনের ক্ষেত্রে, তার পরিবারের কাছে-ও জবাবদিহির
ব্যাপার ছিলো, যারা চলচ্চিত্র নির্মাণের সময়ে আমার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য
করেছেন। স্ক্রীনিঙের
আগে স্টিফেন আমাকে বলেছিলেন যে, “আমি তোমাকে জানবো কেমন লেগেছে, ভালো
অথবা অন্যকিছু।” আমি বললাম যে যদি ‘অন্যকিছু” হয়ে
থাকে তবে আমাকে শুধু সেটুকু জানালেই চলবে, কঠোর সমালোচনাসূচক বিস্তারিত না
জানালে-ও চলবে। উদারভাবে, স্টিফেন জানালেন যে তিনি চলচ্চিত্রটি উপভোগ করেছেন। এটি
তাকে নাড়া দিয়েছে, কিন্তু তিনি এই-ও বলেছিলেন যে চলচ্চিত্রে আরেকটু বেশি
পদার্থবিদ্যা এবং অনুভূতির ব্যাপারস্যাপার কম থাকার দরকার ছিলো। এই বিষয়ে তর্ক করা
অসম্ভব।
The
Theory of Everything
–এর
সময় থেকে আমি হকিং পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। আমি খুব আপ্লুত হয়েছিলাম যখন
আমাকে স্টিফেনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কিছু পাঠ করার জন্য বলা হলো। সেদিন ছিলো এক
অবিশ্বাস্য রকমের দুঃখজনক কিন্তু উজ্জ্বল দিন, ভালোবাসা এবং আনন্দদায়ক স্মৃতিতে
ভরা, এবং এই মহান
সাহসী পুরুষের জীবনের উপর প্রতিফলনে পূর্ণ, যিনি তার বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব
দিয়েছেন, এবং অক্ষমদের
তুলে ধরা এবং তাদের সফল হওয়ার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেয়ার উপায় অনুসন্ধান করে গেছেন।
আমরা সত্যিই একজন চমৎকার মনীষাকে হারিয়েছি,
একজন বিস্ময়কর বিজ্ঞানী এবং আমার দেখার সৌভাগ্য হওয়া সবচেয়ে মজার মানুষ। কিন্তু
স্টিফেনের মৃত্যুর সময় তার পরিবার যেমন বলেছিলো, তার কাজ এবং উত্তর-প্রভাব বেঁচে
থাকবে, এবং তাই বিষণ্নতা কিন্তু একই সাথে খুব আনন্দের সাথে আমি আপনাদের কাছে তুলে
ধরছি বিভিন্ন রকমারি এবং আকর্ষণীয় বিষয়ের উপরে স্টিফেনের লেখার এই সংকলন। আশা করছি আপনারা তার লেখা উপভোগ করবেন, এবং
বারাক ওবামাকে উদ্ধৃত করে বলতে চাই, ‘আশা করি স্টিফেন নক্ষত্রসমূহের
মাঝে উপভোগ করছেন।’
ভালোবাসা,
এডি
No comments:
Post a Comment