যাই পেরিয়ে এই যে সবুজ বন
যাই পেরিয়ে ব্যস্ত নদী, অশ্রু আয়োজন
যাই পেরিয়ে সকাল দুপুর রাত
যাই পেরিয়ে নিজের ছায়া, বাড়িয়ে দেয়া হাত
যাই পেরিয়ে ব্যস্ত নদী, অশ্রু আয়োজন
যাই পেরিয়ে সকাল দুপুর রাত
যাই পেরিয়ে নিজের ছায়া, বাড়িয়ে দেয়া হাত
--------বাড়ি ফেরা/প্রজ্ঞা নাসরিন
সংগীতায়োজন: সঞ্জীব চৌধুরী
সংগীতায়োজন: সঞ্জীব চৌধুরী
১
তারপর সমস্ত নীরবতা গুটিয়ে নিয়ে, সমস্ত হাতছানিতে নিজেকে সঁপে দিয়ে কারা ফিরে চলে! কার দৃষ্টির পাশে নৈশ-কার্নিভাল আরো দীর্ঘ হচ্ছে স্মৃতিতন্তুর মতো। তাঁতির তাঁতযন্ত্রের মসৃণ সংগীতের মতন থেকে থেকে সরলছন্দে চলে আমাদের এই গাড়ি। আজ তুষারপাতের দিন, সূর্যের হাতখরচ মেলে নি, তবুও আমরা উত্তরভবিষ্যতের আলো ফেলে দেখি এই পথ, স্মৃতি বরাবরই সেই পুরানো বন্ধুর গায়ের ঘ্রাণের মতো ঝাঁঝালো, পরীক্ষার হলে শিক্ষকের চোখ এড়িয়ে হঠাৎ ফিসফিস করে ওঠার মতন বুকের ভেতরে কী যেনো শুনতে পাই! বাড়ি ফেরার এ-কাপেলা।
তারপর সমস্ত নীরবতা গুটিয়ে নিয়ে, সমস্ত হাতছানিতে নিজেকে সঁপে দিয়ে কারা ফিরে চলে! কার দৃষ্টির পাশে নৈশ-কার্নিভাল আরো দীর্ঘ হচ্ছে স্মৃতিতন্তুর মতো। তাঁতির তাঁতযন্ত্রের মসৃণ সংগীতের মতন থেকে থেকে সরলছন্দে চলে আমাদের এই গাড়ি। আজ তুষারপাতের দিন, সূর্যের হাতখরচ মেলে নি, তবুও আমরা উত্তরভবিষ্যতের আলো ফেলে দেখি এই পথ, স্মৃতি বরাবরই সেই পুরানো বন্ধুর গায়ের ঘ্রাণের মতো ঝাঁঝালো, পরীক্ষার হলে শিক্ষকের চোখ এড়িয়ে হঠাৎ ফিসফিস করে ওঠার মতন বুকের ভেতরে কী যেনো শুনতে পাই! বাড়ি ফেরার এ-কাপেলা।
২
মানুষের সব সম্পর্ক অমীমাংসিত এবং পুনর্নবায়নযোগ্য!
দ্যাখো, সেইসব বালকেরা- পুকুরে যাদের উৎফুল্ল ঝাঁপে
কাতর হয়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ত্যাগ করে দূরের ধানক্ষেত,
আবহাওয়াবিদের ঘোষণাকে পাশ কাটিয়ে পান্থ মেঘদল
যেভাবে পাল্টিয়ে ফেলে গোধূলি-প্রচ্ছদ, সেই বালকেরা
যারা অনাস্বাদিত কুয়াশায় হারিয়ে ফেলেছিলো টোটেমচূর্ণ
এবং নিষাদের সমস্ত লিপি, সংগীতকৌশল। তারা চোখে
মুদ্রিত করে বৃষ্টিতে না ভেজার মনস্তাপ, অপরিকল্পিত
নগরায়নের অসুখ। তারা দুঃখের সহজ সান্নিধ্য-দুর্ভিক্ষের
মতো অনিবার্য জেনে গেছে কীভাবে রাজনীতিবিদদের
অসংযত ডিসকোর্সে হারিয়ে যেতে বসে আড়িয়াল বিল,
কটাক্ষের ছকে কীভাবে ফুটে ওঠে রুবাইয়াত হোসেনের
গণিত লুকিয়ে ফেলার পোদ্দারি। তবুও প্রতিহিংসাপরায়ণ
বিকেলে কারো নাভিবকুল থেকে চোখ সরিয়ে দূরে দৃষ্টি
রাখলে দেখা যায় মুঠোর ভেতরে ভ্রাম্যফোনের সহজ
ঘুমিয়ে পড়ার মতো অন্ধকারের গাঢ় সুরা পান করে হেলে
পড়ছে নেকড়ে সমবায়।
মানুষের সব সম্পর্ক অমীমাংসিত এবং পুনর্নবায়নযোগ্য!
দ্যাখো, সেইসব বালকেরা- পুকুরে যাদের উৎফুল্ল ঝাঁপে
কাতর হয়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ত্যাগ করে দূরের ধানক্ষেত,
আবহাওয়াবিদের ঘোষণাকে পাশ কাটিয়ে পান্থ মেঘদল
যেভাবে পাল্টিয়ে ফেলে গোধূলি-প্রচ্ছদ, সেই বালকেরা
যারা অনাস্বাদিত কুয়াশায় হারিয়ে ফেলেছিলো টোটেমচূর্ণ
এবং নিষাদের সমস্ত লিপি, সংগীতকৌশল। তারা চোখে
মুদ্রিত করে বৃষ্টিতে না ভেজার মনস্তাপ, অপরিকল্পিত
নগরায়নের অসুখ। তারা দুঃখের সহজ সান্নিধ্য-দুর্ভিক্ষের
মতো অনিবার্য জেনে গেছে কীভাবে রাজনীতিবিদদের
অসংযত ডিসকোর্সে হারিয়ে যেতে বসে আড়িয়াল বিল,
কটাক্ষের ছকে কীভাবে ফুটে ওঠে রুবাইয়াত হোসেনের
গণিত লুকিয়ে ফেলার পোদ্দারি। তবুও প্রতিহিংসাপরায়ণ
বিকেলে কারো নাভিবকুল থেকে চোখ সরিয়ে দূরে দৃষ্টি
রাখলে দেখা যায় মুঠোর ভেতরে ভ্রাম্যফোনের সহজ
ঘুমিয়ে পড়ার মতো অন্ধকারের গাঢ় সুরা পান করে হেলে
পড়ছে নেকড়ে সমবায়।
৩
আমাদের সমস্ত কুয়াশাস্নান এসে জড়ো হবে বইমেলায়, স্বপ্ন আয়োজনে উড়ে যাবে বাইশটি হাওয়াপ্রজাপতি। অনিদ্রা এবং ঘোর নিয়ে পরিমিতভাবে ক্ষয় করবো সময়। ঢাকার ক্রমশ বৃদ্ধিশীল যানজটে অহেতুক শিস দেবে বুড়ো বাস, উদাসীন সিএনজি এবং বিলুপ্তপ্রায় রিকশাসমূহ। তবুও এই সমস্ত জনপদের ধুলো, মানুষের অবহেলা, পাখিদের উপহাস নিয়ে কোনো অভিযোগ করবো না, সূর্যের সুনির্দিষ্ট সংসদে যেমন উঁকি দিয়ে আলো মেলে কথা হারাবে চাঁদ তেমনি আমরা অনুভূতির বেনীআসহকলা নিয়ে জীবনানন্দের লাশ-কাটা-ঘরের সেই যুবকের মতো অমনোযোগী অথবা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের মতন বাউণ্ডুলে ঘুরে বেড়াবো। শঙ্খসুখ নিয়ে ফুরিয়ে যাবে দিনের আবির, নৈশমৌনতা।
আমাদের সমস্ত কুয়াশাস্নান এসে জড়ো হবে বইমেলায়, স্বপ্ন আয়োজনে উড়ে যাবে বাইশটি হাওয়াপ্রজাপতি। অনিদ্রা এবং ঘোর নিয়ে পরিমিতভাবে ক্ষয় করবো সময়। ঢাকার ক্রমশ বৃদ্ধিশীল যানজটে অহেতুক শিস দেবে বুড়ো বাস, উদাসীন সিএনজি এবং বিলুপ্তপ্রায় রিকশাসমূহ। তবুও এই সমস্ত জনপদের ধুলো, মানুষের অবহেলা, পাখিদের উপহাস নিয়ে কোনো অভিযোগ করবো না, সূর্যের সুনির্দিষ্ট সংসদে যেমন উঁকি দিয়ে আলো মেলে কথা হারাবে চাঁদ তেমনি আমরা অনুভূতির বেনীআসহকলা নিয়ে জীবনানন্দের লাশ-কাটা-ঘরের সেই যুবকের মতো অমনোযোগী অথবা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্তের মতন বাউণ্ডুলে ঘুরে বেড়াবো। শঙ্খসুখ নিয়ে ফুরিয়ে যাবে দিনের আবির, নৈশমৌনতা।
৪
২ ই ফ্রেবুয়ারি ২০১১
আমার সবকিছু হয় শেষ মুহূর্তে। পরীক্ষার পড়া শেষ করি শেষ ক্ষণে, কাজ সম্পূর্ণ করি অন্তিমে। লাগেজ গুছানো হলো একটায়, চারটায় বাসা ছাড়া কথা। যেনো দেশান্তরে নই, পাশের কোনো শহরে দুই দিনের অবকাশে যাচ্ছি। মা-বাবা তো বাড়ি মাথায় তুলতে বাকি, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, এমন নিষ্কর্মা আলসে দায়িত্বহীন হলে চলে! কী করে যে বোঝাই খোকা আর খোকাটে নেই!
প্রতিটি বিমানবন্দরের একটি নিজস্ব ছন্দ থাকে, অঘটন, বিপর্যয়, মানুষের স্রোত, দাপ্তরিক একঘেয়েমি নিয়ে। রেল ইস্টিশনের ক্ষেত্রে-ও ব্যাপারটি সত্যি। মন্ট্রিয়াল ত্রুদঊ (Trudeau) বিমানবন্দরের ছন্দটা কোনো এক বিধবা নারীর মতন, সব থেকে-ও কী যেনো নেই। যান্ত্রিকতা আছে, তবে বেশি নয়; মানুষের সৌহার্দ্য আছে, পরিমিত; বিনোদনের উপকরণ আছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
২ ই ফ্রেবুয়ারি ২০১১
আমার সবকিছু হয় শেষ মুহূর্তে। পরীক্ষার পড়া শেষ করি শেষ ক্ষণে, কাজ সম্পূর্ণ করি অন্তিমে। লাগেজ গুছানো হলো একটায়, চারটায় বাসা ছাড়া কথা। যেনো দেশান্তরে নই, পাশের কোনো শহরে দুই দিনের অবকাশে যাচ্ছি। মা-বাবা তো বাড়ি মাথায় তুলতে বাকি, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না, এমন নিষ্কর্মা আলসে দায়িত্বহীন হলে চলে! কী করে যে বোঝাই খোকা আর খোকাটে নেই!
প্রতিটি বিমানবন্দরের একটি নিজস্ব ছন্দ থাকে, অঘটন, বিপর্যয়, মানুষের স্রোত, দাপ্তরিক একঘেয়েমি নিয়ে। রেল ইস্টিশনের ক্ষেত্রে-ও ব্যাপারটি সত্যি। মন্ট্রিয়াল ত্রুদঊ (Trudeau) বিমানবন্দরের ছন্দটা কোনো এক বিধবা নারীর মতন, সব থেকে-ও কী যেনো নেই। যান্ত্রিকতা আছে, তবে বেশি নয়; মানুষের সৌহার্দ্য আছে, পরিমিত; বিনোদনের উপকরণ আছে, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে।
আমি টিকেট কেটেছিলাম অনলাইনে একটি অপরিচিত সাইটে, মনে একটা ক্ষীণ সন্দেহ ছিলো কোনো বাটপারের খপ্পরে পড়ছি কি না! ভাগ্য আমার কালীদাসের মতো নয় বলে কোনো সমস্যা হলো না। কেবল তুষারপাত হচ্ছিল বলে ঢাউস বুট পরে বের হয়েছিলাম, বিমানবন্দরের কর্মকর্তা হেজিমনি করতে চাইলো, অগত্যা বুট, বেল্ট খুলে নিস্তার পাওয়া গেলো। কর্মকর্তাদের বোঝা উচিত চশমাধারীরা নিরীহ প্রকৃতির হয়, আর বুটে অস্ত্র লুকাবে কে, চাইলে আমিই সুনীলের মতো একটি অস্ত্র হয়ে যেতে পারি। কানাডার যে জিনিস নিয়ে আমি চিরকাল মুগ্ধ হয়ে রবো তা হলো সেবাদান, গ্রাহককে স্বস্তি ও নিশ্চয়তা দেয়া। তুষারঝড়ের কারণে অনেক অভ্যন্তরীণ উড্ডয়ন বাতিল করা হয়েছে, নেহায়েত আন্তর্মহাদেশীয় উড্ডয়ন বলে আমাদেরটি বাতিল করা হয় নি। তুষারঝড়ের কারণে বিমানের ডানায় তুষার জমে অবস্থা খারাপ, আধ ঘণ্টা ধরে পরিষ্কার করা হলো, যাত্রা হলো বিলম্বিত। এরপর কোনো অঘটন ছাড়াই নির্বিঘ্নে চলা শুরু করলাম।
এয়ার কানাডার ব্যবসা ও সুনাম পড়তির দিকে হলে-ও আমার ভ্রমণ ভালোই লাগলো। বিমানবালারা-ও ইয়ে আছে।
৫
৩ রা ফ্রেবুয়ারি ২০১১ সকাল
ব্রিটিশরা বাঙালি জাতির মতো হুজুগে প্রকৃতির, আমি প্রায় দেখেছি, তিলকে তাল করতে উভয়েই যথেষ্ট পারদর্শী। এক মহিলার বাচ্চা অসুস্থ বলে কী একটি তরল ঔষধ কিনেছিলো, সেটা নিয়ে কর্মকর্তা নিম্নবর্গীয়পনা শুরু করলেন, কারণ কোনো কৌটায় ১০০ মিলির বেশি তরল নেয়া যাবে না। পরে একজনের মানবিকতার উদয় হলো।
হিথ্রো বিমানবন্দরের বিশালতা টের পাই যখন টার্মিনাল ৩ থেকে টার্মিনাল পাঁচে যেতে শুরু করি বাস করে, পাক্কা পাঁচ মিনিটের পথ। আশপাশে মানুষের ভিড়, বিপনণ বিজ্ঞাপনে সবদিক সয়লাব।
তিন ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে বেলা এগারটা নাগাদ যাত্রা শুরু করি, ৩২ হাজার ফিট উচ্চতা থাকে লণ্ডন শহরটাকে পিঁপড়েদের কার্নিভাল মনে হয়। প্রিয়তম নারীর চুলের সিঁথির মতো ইস্তস্তত শুয়ে আছে টেমস অথবা অন্য কোনো নদী। মেঘগুলো গাঢ় বেদনার মতো সাদাটে কালো, নবীনবরণের মতো উচ্ছল থোকা থোকা রোদের আনাগোনা। লণ্ডন থেকে মুম্বাই। জেট এয়ারওয়েজের খাদ্য-পরিবেশন নিকৃষ্ট প্রকৃতির। ভাত আর মাংস পরিবেশন করেছে, ভাতে যেনো লবণ দেয়া, মাংসে মশলা ভরপুর। আমার বমি বমি পাচ্ছিলো, এমনিতে আমার যাত্রাকালে বমি-টমি করার অভ্যেস নেই, আজকে মনে হয় ব্যতিক্রম হবে। রঙিন পানীয়ের ব্যবস্থা নেই, অন্য যেসব ফলের রস কিম্বা সাধারণ পানি-ও দেয়া হয় ছোট গেলাসে, এরা তো দেখি পুরো রহমত কঞ্জুসের মতো, আঙুল গলে পানি পড়ে না! বিশাল উচ্চতায় এমনিতে কেনো জানি ক্ষুধা বেশি পায়। অনিদ্রা ভর করেছে চোখে, ভালো কোনো প্রোগাম নেই দেখে (বলিউড চলচ্চিত্র দেখা আমার পক্ষে আকাশকুসুম) নিজের আইফোনে গান শুনতে শুরু করলাম, এবং ভুল করলাম। কারণ চার্জ শেষ হয়ে আসছিলো দ্রুত।
৩ রা ফ্রেবুয়ারি ২০১১ সকাল
ব্রিটিশরা বাঙালি জাতির মতো হুজুগে প্রকৃতির, আমি প্রায় দেখেছি, তিলকে তাল করতে উভয়েই যথেষ্ট পারদর্শী। এক মহিলার বাচ্চা অসুস্থ বলে কী একটি তরল ঔষধ কিনেছিলো, সেটা নিয়ে কর্মকর্তা নিম্নবর্গীয়পনা শুরু করলেন, কারণ কোনো কৌটায় ১০০ মিলির বেশি তরল নেয়া যাবে না। পরে একজনের মানবিকতার উদয় হলো।
হিথ্রো বিমানবন্দরের বিশালতা টের পাই যখন টার্মিনাল ৩ থেকে টার্মিনাল পাঁচে যেতে শুরু করি বাস করে, পাক্কা পাঁচ মিনিটের পথ। আশপাশে মানুষের ভিড়, বিপনণ বিজ্ঞাপনে সবদিক সয়লাব।
তিন ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে বেলা এগারটা নাগাদ যাত্রা শুরু করি, ৩২ হাজার ফিট উচ্চতা থাকে লণ্ডন শহরটাকে পিঁপড়েদের কার্নিভাল মনে হয়। প্রিয়তম নারীর চুলের সিঁথির মতো ইস্তস্তত শুয়ে আছে টেমস অথবা অন্য কোনো নদী। মেঘগুলো গাঢ় বেদনার মতো সাদাটে কালো, নবীনবরণের মতো উচ্ছল থোকা থোকা রোদের আনাগোনা। লণ্ডন থেকে মুম্বাই। জেট এয়ারওয়েজের খাদ্য-পরিবেশন নিকৃষ্ট প্রকৃতির। ভাত আর মাংস পরিবেশন করেছে, ভাতে যেনো লবণ দেয়া, মাংসে মশলা ভরপুর। আমার বমি বমি পাচ্ছিলো, এমনিতে আমার যাত্রাকালে বমি-টমি করার অভ্যেস নেই, আজকে মনে হয় ব্যতিক্রম হবে। রঙিন পানীয়ের ব্যবস্থা নেই, অন্য যেসব ফলের রস কিম্বা সাধারণ পানি-ও দেয়া হয় ছোট গেলাসে, এরা তো দেখি পুরো রহমত কঞ্জুসের মতো, আঙুল গলে পানি পড়ে না! বিশাল উচ্চতায় এমনিতে কেনো জানি ক্ষুধা বেশি পায়। অনিদ্রা ভর করেছে চোখে, ভালো কোনো প্রোগাম নেই দেখে (বলিউড চলচ্চিত্র দেখা আমার পক্ষে আকাশকুসুম) নিজের আইফোনে গান শুনতে শুরু করলাম, এবং ভুল করলাম। কারণ চার্জ শেষ হয়ে আসছিলো দ্রুত।
৬
৩ রা ফ্রেবুয়ারি ২০১১ রাত
মুম্বাইতে বিমান অবতরণ করলো আট ঘণ্টার যাত্রার পরে মধ্যরাতে। পরের বিমান আট ঘণ্টা পরে সকালবেলায়। সাথের হাত-ব্যাগ থাকায় ঘুমাতে-ও পারছিলাম না।
৩ রা ফ্রেবুয়ারি ২০১১ রাত
মুম্বাইতে বিমান অবতরণ করলো আট ঘণ্টার যাত্রার পরে মধ্যরাতে। পরের বিমান আট ঘণ্টা পরে সকালবেলায়। সাথের হাত-ব্যাগ থাকায় ঘুমাতে-ও পারছিলাম না।
আমার এমনিতে প্রচুর ঘাম হয়। মুম্বাইয়ের ছাব্বিশ ডিগ্রিতে আমার অবস্থা গঙ্গা নদীর মতো। তারপর এই দীর্ঘ পথচলায় গোসল করার সুযোগ না মেলায় পুরো বিচ্ছিরি অবস্থা। এক কোণায় গিয়ে বসে থাকি, একটি বই পড়ার চেষ্টা করি। যাত্রাকালে বই পড়া আমার হয়ে উঠে না, মনোযোগ দিতে পারি না। বাসে এসে একটি মেয়ে বসলো, বাঙালি, কলকাতার। টের পেলাম ভ্রাম্যফোনে তার বাঙলা কথা বলায়, কলকাতার বাঙলার কি খুব রূপান্তর হয়ে গেছে, এই মেয়ে দেখি ডিজুসদের-ও হার মানাবে, বাঙলা-ইংরেজি-হিন্দি ভাষার জগাখিচুড়ি। সবই গুরুর লীলা।
স্বভাবসুলভ আমি কবিতায় মন গুঁজে দিলাম।
৭
এখানে অনিদ্রার প্রজাপতি এসে বসে, নির্ঘুম
তাবুঘরে আমি এবং এই অস্বস্তির প্রবাহের
বিমানবন্দর বিশ্লেষণ করে দেখি দেশান্তরের
ফলে সৃষ্ট মানুষিক ক্ষয়, সম্পর্কের টানাপোড়েন।
দূরের সব বন্ধুদের বিলুপ্তপ্রায় ম্যানগ্রোভ বনের
হরিণ-হরিণী মনে হয়। যাদের শিঙে ভর করে
থাকে শিকারীবিষয়ক অনিশ্চয়তা, স্বপ্নক্ষরণ। জানি
কুমিরের লেজে নদীজল ও লাবণ্য শুকিয়ে যাওয়ার
মতন ধুলোমুখী গড়িয়ে যাবে আমাদের সময় ও
প্রীতি।
এখানে অনিদ্রার প্রজাপতি এসে বসে, নির্ঘুম
তাবুঘরে আমি এবং এই অস্বস্তির প্রবাহের
বিমানবন্দর বিশ্লেষণ করে দেখি দেশান্তরের
ফলে সৃষ্ট মানুষিক ক্ষয়, সম্পর্কের টানাপোড়েন।
দূরের সব বন্ধুদের বিলুপ্তপ্রায় ম্যানগ্রোভ বনের
হরিণ-হরিণী মনে হয়। যাদের শিঙে ভর করে
থাকে শিকারীবিষয়ক অনিশ্চয়তা, স্বপ্নক্ষরণ। জানি
কুমিরের লেজে নদীজল ও লাবণ্য শুকিয়ে যাওয়ার
মতন ধুলোমুখী গড়িয়ে যাবে আমাদের সময় ও
প্রীতি।
৮
৪ ঠা ফ্রেবুয়ারি ২০১১
"ঘুম ভাঙ্গা পথ শেষ হতে বল কত বাকি
ভোর হবে বলে চোখ মেলে রাখি"
৪ ঠা ফ্রেবুয়ারি ২০১১
"ঘুম ভাঙ্গা পথ শেষ হতে বল কত বাকি
ভোর হবে বলে চোখ মেলে রাখি"
জেট এয়ারওয়েজের বাংলাদেশ অভিমুখী বিমানের সেবা ভালোই, তবে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মুড়ির টিনের গাড়ির মতো খুপরি যেনো বিমানটি। আমার সিট পড়েছে জানালার পাশে, উপর থেকে জনপদ দেখি পাখিদৃষ্টিতে। পাশের এক ভারতীয়কে কিছু সংস্কৃতি শেখালাম পথে। আশপাশে বাঙলা ভাষায় কলতান, লোকজনের দরাজ গলাবাজি। কতো দিন পর বাঙলা শুনছি, আমাদের শহরটি ঠিক মন্ট্রিয়াল নয়, তার পাশের একটি শহর, বাঙালি লোকজন কম, ফলে আমার ভাষাচর্চা ছিলো কেবল ব্লগিং আর বছরে নয়ে-ছয়ে কয়েকজনের সাথে আলাপ। আমার উচ্চারণ-ও পাল্টে গেছে, টের পাই, অবশ্য জন্মগতভাবেই আমি হালকা ভাষিক-অটিস্টিক।
পাক্কা এক ঘণ্টা নিলো ইমিগ্রেশন পর্ব। এতো ঢিলেমিতে কাজ করে লোকগুলো। সবচে' বেশি প্রকট হলো লোকজনের বিশৃঙ্খলতা, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করা, যেনো শ্বশুর বাড়িতে নতুন জামাইয়ের পদচারণা। এক ভদ্দরনোক আমার পিছনে ছিলেন। স্বভাবসুলভ বাঙালির মতো তিনি নিয়মনীতি বিষয়ক নানা দার্শনিক কথাবার্তা শুরু করলেন। আমি ভাবতে লাগলাম এতো দার্শনিক, ভাবুক থাকার পরে-ও দেশটি এতো পিছিয়ে কেনো!
"বুঝলেন, কারো মাঝে কোনো ডিসিপ্লিন নেই। সবে তো শুরু, আরো দেখবেন সামনে।" এই পর্যায়ে এসে তিনি প্রমিত ভাষা ছেড়ে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা শুরু করলেন, "সবগুলান শয়তানের বদ, মাইরের উপরে না রাইখলে বাঙালির শিক্কা হয় না।"
আমি কিছু বলি না। ভাবছি চুপ করে থাকলে হয়তো তিনি কথা বলার আগ্রহ হারাবেন একসময়।
"দ্যাখেন, দ্যাখেন, লোকটার কাণ্ড দ্যাখেন। লাইন টপকায়ে সামনে চলি যাইলো।"
ভদ্দরনোক অবশ্য আমার একটা উপকার করলেন। জানতাম না যে ইমিগ্রেশনের জন্য কাগজ পূরণ করতে হয়, আমার ধারণা ছিলো ব্যাপারটি কেবল বিদেশি নাগরিকদের জন্য। যাহোক, তার কাছ থেকে কলম নিয়ে পূরণ করা শুরু করে দিলাম।
এর মাঝে তিনি তার সমস্ত নীতিভাষণকে ধুলোয় ছুঁড়ে দিয়ে আমাকে টপকিয়ে সামনে চলে গেলেন, এবং তার পায়ে সমস্যা আছে বলে এক পুলিশকে বলে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন! আমি বুঝতে পারলাম, আমরা বাঙালিরা নিজদের পায়ে কুড়াল মারতে অতি পারদর্শী- তাই পিছিয়ে, বক্তৃতায় পটু, কর্মে লটুপটু। লাগেজ নিয়ে বাইরে যখন বের হলাম তখন মাথার উপর সূর্য, আর সামনে একঝাঁক পরিচিত মুখ ও মুখোশ।
৯
আহা দেশ, আহা বাংলাদেশ। কতোদিন পরে একে অন্যকে...
আহা দেশ, আহা বাংলাদেশ। কতোদিন পরে একে অন্যকে...
No comments:
Post a Comment