১
মনে করুন যে আপনাকে ৩০ বছর পরে "জাগিয়ে" তোলা হলো। পৃথিবী ঢের পাল্টে গেছে, সেইসব চেনা রাস্তাঘাট, স্মৃতির রোদ্দুরে হঠাৎ ঝলকে ওঠা মুখগুলো অস্পষ্ট, আপনি নিজে-ও প্রচুর পাল্টে গেছেন ততোদিনে, মুখে বয়েসের বলিরেখা; তবুও এই জেগে ওঠা অনেক কাম্য, জীবন যেকোনো পর্যায়েই আকাঙ্ক্ষার।
এই চলচ্চিত্রটি "জেগে ওঠার" গল্প। এবং জেগে ওঠার পরের অভূত সম্ভাবনার গল্প।
২
স্নায়ুবিদ্যা (নিউরোলজি) কিংবা স্নায়ুবিজ্ঞান (নিউরোসায়েন্স) সম্পর্কে পড়তে গেলে এই চলচ্চিত্রের কাহিনি ইতিহাসের পাঠ হিসেবে চলে আসে। আমি নিজেই এই চলচ্চিত্রের সন্ধান পেয়েছি "ঘুমের স্নায়ুবিজ্ঞানের" উপর একটি ক্লাস করতে গিয়ে, মাস্টারমশাই ১৯২০-৩০ সালের দিকে ঘটে যাওয়া এক মহামারীর গল্প করছিলেন।
১৯২০-৩০ দশকে (১৯১৭-১৯২৮ সাল) পৃথিবীর অনেক দেশে encephalitis lethargica নামক এক ব্যাকটেরিয়ার মহামারী ঘটে। সেইসময়ের তথ্যআলামত, রোগীদের নথি, মস্তিস্কের স্নায়ুচিত্রায়ন উপাত্ত মতে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা ধারণা করেন যে রোগীদের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে মস্তিষ্কের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আত্ম-আক্রমণের (অটোইমিউন রিঅ্যাকশন) কারণে স্নায়ুকোষ মরে যেতে শুরু করে; ফলে রোগীরা যেনো ঘুম কিংবা কোমার মতো অবস্থায় চলে যান, নিজেরা নড়াচড়া করতে পারেন না।
সারা পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ মিলিয়ন লোক আক্রান্ত হয়েছিলেন সেই সময়ে, যাদের ১/৩ অংশ মারা গিয়েছিলেন, আর যারা বেঁচে ছিলেন তারা উপরে বর্ণিত উপসর্গ নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়েছিলেন, যেনো প্রায় মৃত, প্রগাঢ় ঘুমের আচ্ছাদনে শায়িত জীবন।
৩
১৯৬০-৭০ এর দশকে Malcolm Sayer নামক এক ডাক্তার এই রোগীদের এল-ডোপা (L-Dopa) নামক এক ওষুধ দিয়ে জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করেন। সেই কাহিনী নিয়ে এই চলচ্চিত্র। এল-ডোপা হচ্ছে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের অগ্রবর্তী যৌগ, অর্থাৎ মস্তিষ্কে এল-ডোপা ভেঙে ডোপামিন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট এনজাইম। পারকিনসনের রোগীদের এল-ডোপা ওষুধ দেয়া হয় নড়াচড়ার অস্থিরতা, অসংযতা, পেশীর দৃঢ়তা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এল-ডোপা মোটামুটি প্রথম পাঁচ বছর কাজ করে, এই পাঁচ বছরকে স্নায়ুবিজ্ঞানীরা কিংবা স্নায়ুচিকিৎসকরা "হানিমুন সময়" বলেন। এরপর আর ওষুধে কাজ করে না, রোগীর অবস্থা আগের অবস্থায় কিংবা আর-ও বাজে অবস্থায় ফিরে যায়।
যদিও এল-ডোপা পারকিনসনের রোগীর চিকিৎসার জন্য মূলত ব্যবহৃত হয় তবে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার সংক্রান্ত অনেক স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় এটি দেয়া হয়। চলচ্চিত্রে দেখা যায় যে ডাক্তার সেয়ার পারকিনসনের রোগীর চিকিৎসার উপর এক সম্মেলনে গিয়ে মূলত তার রোগীদেরকে-ও এল-ডোপা প্রেসক্রাইব করার ধারণা পান।
৪
চলচ্চিত্রটি আরেক স্নায়ুবিজ্ঞানী ও স্নায়ুচিকিৎসক অলিভার স্যাকসের Awakenings নামক বইয়ের উপর নির্ভর করে বানানো। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রবার্ট দ্য নিরো আর রবিন উইলিয়ামস। পরিচালনা করেছেন পেনি মার্শাল।
৫
"You told him I was a kind man. How kind is it to give life, only to take it away?"
রেটিং: ৮.৫/১০
No comments:
Post a Comment