সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসটি নারীদের তুলনায় পুরুষদের জন্য একটি বিশেষ হুমকি। ভাইরাসটির
আক্রমণে কোভিড-১৯ রোগে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে মধ্যবয়েসী এবং প্রবীণ পুরুষদের
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি, বিশেষ করে যেসব পুরুষরা আগে থেকেই এমন কোনো স্বাস্থ্যগত
জটিলতায় ভুগছেন যে তাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম (নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন)। ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং
এর ফলাফল কী হতে পারে তা চিন্তার বিষয়, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যের উদ্যোগ, নীতি ইত্যাদি নির্বাচনের জন্য।
চিনে ডিসেম্বর ২০১৯ এর শেষের দিকে রোগটির প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া থেকে ফেব্রুয়ারি
১১, ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৪৬৭২ টি কেইসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে পুরুষদের ক্ষেত্রে
মৃত্যুর হার ২.৮%, অন্যদিকে নারীদের মৃত্যুর হার ১.৭%। ইতালিতে-ও একই চিত্র। মার্চ
১৯ পর্যন্ত মৃত্যুর উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ইতালিতে পুরুষদের মৃত্যুর হার ১০.৬%,
এবং নারীদের মৃত্যুর হার ৬%।

শুধু সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসটি নয়, অন্যান্য করোনাভাইরাস এবং এই ধরণের ভাইরাসের
প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে-ও পুরুষদের মৃত্যুর হার নারীদের তুলনায় বেশি। যেমন, সার্স
(SARS) এবং মার্স (MERS) উভয় প্রাদুর্ভাবের সময় পুরুষরা বেশি সংখ্যক মারা গেছেন। যদিও
২০০৩ সালে হংকং-এ ছড়িয়ে পড়া সার্স প্রাদুর্ভাবে নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি আক্রান্ত
হয়েছেন, কিন্তু মৃত্যুর হার নারীদের তুলনায় পুরুষদের ৫০% বেশি ছিলো! শুধু এটা না। ১৯১৮
এর ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী চলাকালীন সময়ে-ও, সারা পৃথিবীতে ৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা
গেলে-ও মৃতদের মাঝে পুরুষদের সংখ্যা নারীদের চেয়ে বেশি ছিলো। কেনো এইসব প্রাদুর্ভাবে
পুরুষরা বেশি মারা যান?
একটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে ধুমপান ও মদ্যপানের তারতম্য। ঐতিহাসিকভাবে, পুরুষরা মেয়েদের
চেয়ে বেশি ধুমপান ও মদ্যপান করেন, এবং চিনে প্রায় ৫০% পুরুষ ধুমপান করেন অথচ মাত্র ৩%
নারী ধুমপান করেন। যখন কোনো মানুষ ধুমপান করেন তখন তাদের দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস ও হৃদরোগের ঝুঁকির
সম্ভাবনা বেশি থাকে, ফলে অন্যান্য ভাইরাস-সংক্রান্ত রোগে আক্রান্ত হলে তারা সবচেয়ে
বেশি নাজুক অবস্থায় থাকেন। যেহেতু ধুমপানের কারণে আপনার ফুসফুস ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্থ
হয়ে গেছে, সার্স-কোভ-২ কিংবা অন্যান্য ভাইরাসে এই ক্ষতিগ্রস্থ ফুসফুস আর-ও ক্ষতিগ্রস্থ
হয় এবং কার্যক্ষমতা কমে যায়, ফলে আপনি সারা শরীরে স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন বয়ে নিতে পারবেন না।
New England Journal of Medicine -এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে চিনে ১০৯৯
রোগীর মধ্যে ধুমপান করতেন এমন রোগীর ২৬% নিবিড়-চিকিৎসা-তত্ত্বাবধানে (intensive
care) ছিলেন অথবা মারা গেছেন। এছাড়া, যেহেতু ধুমপানকারীরা ধুমপানের সময় তাদের হাত দিয়ে মুখ,
ঠোঁট ইত্যাদি স্পর্শ করেন তারা সার্স-কোভ-২ -এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন বেশি।
যদি-ও ইতালিতে ২৮% পুরুষ ও ১৯% নারী ধুমপান করেন, তাই বলা যায় যে ধুমপান ছাড়া-ও
অন্যান্য ফ্যাক্টর নারী-পুরুষের মধ্যকার মৃত্যুর হারের ব্যবধানের জন্য দায়ী। যেমন, নারীদের তুলনায় পুরুষদের উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ বেশি হয়ে থাকে, যা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়া, অন্য আরেকটি গবেষণা (এখনো সহবিজ্ঞানিদের দ্বারা পর্যালোচিত হয় নি) নির্দেশ করছে যে, নারীদের তুলনায় পুরুষদের শরীর থেকে ভাইরাসটি পুরোপুরি নিষ্কাশন হতে (রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার আক্রমণের ফলে) বেশি সময় নেয় (যেমন, নারীদের ক্ষেত্রে গড়ে চারদিন সময় নেয়, কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে গড়ে আর-ও দুই দিন বেশি সময় লাগে), এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ফুসফুস, পরিপাক নালি (gastrointestinal tract), ও হৃদপিণ্ড ছাড়া-ও অণ্ডকোষীয় কোষগুলোকে আক্রমণ করে এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে ভাইরাসটিকে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নির্মূল করার পরে-ও অণ্ডকোষীয় কোষগুলোতে ভাইরাসের অনুলিপি পাওয়া গেছে। তাই বিজ্ঞানিরা ধারণা করছেন যে, পুরুষদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষগুলো বাড়তি ঝুঁকি বাড়ায়, যেহেতু অণ্ডকোষ এসিই২ (angiotensin converting enzyme 2 বা ACE2) রিসেপ্টর (যে রিসেপ্টরের মাধ্যমে ভাইরাস মানব কোষে প্রবেশ করে) প্রকাশ করে।
অন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই। গর্ভাবস্থার সময় ছাড়া সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উত্তম, এবং নারীদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো বহিরাগত আক্রমণের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় (ঠিক একই কারণে নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় অটোইমিউন রোগগুলো বেশি হয়ে থাকে, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করা শুরু করে)। ফলে নারীরা এইসব ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হচ্ছে ইঁদুরদের উপরে পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল অণুজীববিজ্ঞানি সার্স রোগ সৃষ্টি করে এমন করোনাভাইরাসে পুরুষ এবং নারী ইঁদুরদের সমানভাবে আক্রান্ত করে দেখেছেন যে মানুষদের মাঝে যেমন দেখা যায় তেমনি নারী ইঁদুরদের তুলনায় পুরুষ ইঁদুরদের মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু যখন অণুজীববিজ্ঞানিরা নারী ইঁদুরদের ডিম্বাশয় অপসারণ করেন (যা সেক্স-হরমোনগুলো উৎপাদনে জড়িত) তখন তাদের মৃত্যুর হার পুরুষ ইঁদুরদের মৃত্যুর হারের সমপর্যায়ে এসে যায়; অর্থাৎ, হরমোন ওয়েস্ট্রোজেন (oestrogen) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শরীরের রোগপ্রতিরোধে, এবং নারীদেরকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে পুরুষদের তুলনায় বেশি সুরক্ষা করে।
অন্য আরেকটি কারণ হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই। গর্ভাবস্থার সময় ছাড়া সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা উত্তম, এবং নারীদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনো বহিরাগত আক্রমণের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়া দেখায় (ঠিক একই কারণে নারীদের মধ্যে পুরুষদের তুলনায় অটোইমিউন রোগগুলো বেশি হয়ে থাকে, যেখানে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করা শুরু করে)। ফলে নারীরা এইসব ভাইরাসের সংস্পর্শে এলে তাদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হচ্ছে ইঁদুরদের উপরে পরিচালিত গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল অণুজীববিজ্ঞানি সার্স রোগ সৃষ্টি করে এমন করোনাভাইরাসে পুরুষ এবং নারী ইঁদুরদের সমানভাবে আক্রান্ত করে দেখেছেন যে মানুষদের মাঝে যেমন দেখা যায় তেমনি নারী ইঁদুরদের তুলনায় পুরুষ ইঁদুরদের মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু যখন অণুজীববিজ্ঞানিরা নারী ইঁদুরদের ডিম্বাশয় অপসারণ করেন (যা সেক্স-হরমোনগুলো উৎপাদনে জড়িত) তখন তাদের মৃত্যুর হার পুরুষ ইঁদুরদের মৃত্যুর হারের সমপর্যায়ে এসে যায়; অর্থাৎ, হরমোন ওয়েস্ট্রোজেন (oestrogen) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শরীরের রোগপ্রতিরোধে, এবং নারীদেরকে ভাইরাস আক্রমণ থেকে পুরুষদের তুলনায় বেশি সুরক্ষা করে।
যদিও সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাস নিয়ে এখনো এই ধরণের গবেষণা হয় নি তারপর-ও বিজ্ঞানিরা ধারণা করছেন যে সার্সের মতো কোভিড-১৯ এ-ও হরমোন ভূমিকা রাখতে পারে, যেহেতু সার্স করোনাভাইরাসের
সাথে সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসের জিনগত মিল প্রায় ৭৯%, এবং দুটো ভাইরাসই মানুষের শ্বসনব্যবস্থাকে
আক্রান্ত করে। সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটি মানুষের এসিই২ রিসেপ্টর
আছে এমন কোষকে আক্রান্ত করে, এই রিসেপ্টরের মাধ্যমে কোষে প্রবেশ করে। হয়তো ভাইরাসটি
কীভাবে রিসেপ্টরের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে সেটির উপর নির্ভর করে (নারী ও পুরুষে ক্ষেত্রে
রিসেপ্টরে মিথস্ক্রিয়ার তারতম্য) আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। তবে এই অনুজ্ঞা
নিয়ে আর-ও বিস্তারিত গবেষণার দরকার। শেষ পর্যন্ত
বলা যায় যে, জিনগত তারতম্য ছাড়া-ও জীবনযাত্রার ধরণ এবং আচরণের পার্থক্যের কারণে নারী
ও পুরুষ বিভিন্ন হারে ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন ও বিস্তার করতে পারেন। কিন্তু উভয়ের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কমানোর সর্বোত্তম উপায় ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান আর পানি দিয়ে হাত ধোয়া, এবং আক্রান্ত-ব্যক্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা।
No comments:
Post a Comment