কোভিড-১৯ রোগীদেরকে পেটের উপর ভর করে শোয়ালে কি তাদের জীবন রক্ষা করা যাবে? কেনো?
সিএনএন একটি প্রতিবেদন করেছে যেটিতে বলা হচ্ছে যে অনেকক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা দেখেছেন যে কিছু কিছু কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে, বিশেষত যারা নিবিড় পর্যবেক্ষণ/চিকিৎসা বিভাগে (intensive
care unit) আছেন, তাদেরকে তাদের পেটে উপর শোয়ালে (নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন) তাদের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
এই পেছনের চিন্তাটি হচ্ছে যে রোগীদের তাদের পেটের উপর চিৎ কর শোয়ালে এই শয়ন অবস্থাটি তাদের ফুসফুসকে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, ফুসফুসের
যে অংশ সাধারণত খোলা থাকে না সেটি-ও খুলে অক্সিজেন গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন, এই অবস্থানে
শোয়ানোর পরে নিবিড় পরিচর্যা বিভাগে চিকিৎসারত এক রোগীর অক্সিজেন সম্পৃত্তির হার (oxygen
saturation rate; রক্তে মোট হিমোগ্লোবিনের তুলনায় অক্সিজেন-সমৃদ্ধ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ,
অর্থাৎ, এক অর্থে এটি নির্দেশ করে ব্যক্তি কতোটুকু অক্সিজেন গ্রহণ করেছেন। সাধারণ সবল
ব্যক্তির ক্ষেত্রে অক্সিজেন সম্পৃত্তির হার ৯৫%-১০০% হয়ে থাকে) ৮৫% থেকে বেড়ে ৯৫% -এ পৌঁছেছে, যা জীবন-মরণের ব্যবধান সৃষ্টি করতে পারে ।
এই অবস্থানে শোয়ানোর উপকারিতা নিয়ে গবেষণা-লব্ধ উপাত্ত রয়েছে। ২০১৩ সালে TheNew England Journal of Medicine জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা মতে এই ধরণের অবস্থানে
শোয়ানোর মাধ্যমে তীব্র শ্বাসকষ্টের সংক্রমণে আক্রান্ত (severe acute respiratory
distress syndrome) রোগীদের মৃত্যুর হার কমানো গেছে, এই শ্বাসকষ্ট সাধারণত ফুসফুসে প্রদাহজনিত (inflammation)
কারণে হয়। কোভিড-১৯ সার্স-কোভ-২ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের যারা বেশি অসুস্থতার
কারণে নিবিড় চিকিৎসা বিভাগে স্থানান্তিত হন তাদের ক্ষেত্রে-ও এই প্রদাহজনিত কারণে শ্বাসকষ্টের
সমস্যা দেখা দেয়। উল্লেখ্য যে, গবেষণাটি শুধুমাত্র ভেন্টিলেটরে থাকা রোগীদের নিয়ে গবেষণা
করেছে। তাই সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে-ও এই অবস্থানে ভালো ফলাফল দেবে কিনা সেটি পুরোপুরি
নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
Luciano Gattinoni, যিনি জার্মানির Medical University of Göttingen বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর এবং পেশায় একজন ডাক্তার, এবং যিনি ১৯৮০ এর দশকে এই ধারণা প্রস্তাব করেন এবং এই ব্যাপারে গবেষণা করা শুরু করেন। Intensive Care Medicine জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা তিনি এবং তার সহকর্মীরা ইতালির কোভিড-১৯ এর রোগীদের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করেন যে কোভিড-১৯ এর রোগীরা অন্যান্য শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের তুলনায় ভিন্ন উপসর্গ ও উপসর্গের তীব্র দেখায়, এবং ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে উচ্চ চাপে রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা কোভিড-১৯ এর রোগীদের জন্য খারাপ হতে পারে। তিনি পেটের উপর ভর করে শোয়ায়ে অক্সিজেন সরবরাহের উন্নতির জন্য সুপারিশ করেছেন।
Luciano Gattinoni, যিনি জার্মানির Medical University of Göttingen বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর এবং পেশায় একজন ডাক্তার, এবং যিনি ১৯৮০ এর দশকে এই ধারণা প্রস্তাব করেন এবং এই ব্যাপারে গবেষণা করা শুরু করেন। Intensive Care Medicine জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা তিনি এবং তার সহকর্মীরা ইতালির কোভিড-১৯ এর রোগীদের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করেন যে কোভিড-১৯ এর রোগীরা অন্যান্য শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের তুলনায় ভিন্ন উপসর্গ ও উপসর্গের তীব্র দেখায়, এবং ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে উচ্চ চাপে রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা কোভিড-১৯ এর রোগীদের জন্য খারাপ হতে পারে। তিনি পেটের উপর ভর করে শোয়ায়ে অক্সিজেন সরবরাহের উন্নতির জন্য সুপারিশ করেছেন।
তবে, সম্প্রতি চিনের উহান প্রদেশে মার্চ মাসে পরিচালিত এক গবেষণায়-ও (American
Journal of Respiratory and Critical Care Medicine জার্নালে প্রকাশিত) দেখা গেছে যে
গুরুতর অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটর ব্যবহার করে ফুসফুসে ধনাত্মক চাপ
প্রয়োগের চেয়ে তাদের জন্য মুখ নিচে করে শুয়ে থাকা (অক্সিজেন গ্রহণের জন্য) আর-ও বেশি সহায়ক ছিলো।
গবেষণাটির অন্যতম গবেষক হাইবো কিউ (Haibo Qiu) এর মতে এই শয়ন ব্যবস্থার ফলে যে ভালো
ফলাফল দেখা যায় তার কারণ হতে পারে যে অনেক রোগী ভেন্টিলেটর কিংবা অন্যভাবে প্রয়োগিত
উচ্চ ধনাত্মক চাপের প্রতি ভালো প্রতিক্রিয়া দেখায় না, ফলে অক্সিজেন গ্রহণের উন্নতি
হয় না, তাই নিচের দিকে মুখ করে পেটের উপর ভর করে শোয়ালে তাদের অক্সিজেন গ্রহণে সহজ
হয়।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রাথমিক সাফল্য সত্ত্বে-ও এই শয়ন ব্যবস্থা নিয়ে আর-ও
ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন, এবং সব রোগীর ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে এমন বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া,
সব রোগীর ক্ষেত্রে অন্যান্য জটিলতার কারণে সারাদিন হাসপাতালে পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে
থাকা সম্ভব না-ও হতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক ইতিমধ্যে এটি নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল
শুরু করেছেন, অর্থাৎ, তারা দেখতে চাচ্ছেন যে যেসব রোগীর অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োজন তাদের
ক্ষেত্রে এভাবে পেটে ভর করে শোয়ালে অক্সিজেন গ্রহণের অবস্থার উন্নতি হয় কি না।
বাঙলাদেশে যেহেতু ভেন্টিলেটরের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই তাই বাঙলাদেশি চিকিৎসকরা
এই ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে পারেন, দেখতে পারেন যে এভাবে পেটের উপর ভর করে শোয়ালে অতিরিক্ত
অসুস্থ রোগীদের অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটে কি না, কিংবা যেসব রোগীর জন্য
ভেন্টিলেটর নেই তাদের এভাবে (সাময়িক) চিকিৎসা দিয়ে অবস্থার উন্নতি সাধন করা যায় কিনা।
No comments:
Post a Comment