এই ছবির বানর দুটোকে লক্ষ্য করেন। কোনো পার্থক্য চোখে পড়ে?
না পড়ার কথা, এরা একজন আরেকজনের ক্লোন বা প্রতিলিপি! একজনের নাম ঝং ঝং (Zhong Zhong) এবং আরেকজনের নাম হোয়া হোয়া (Hua Hua)।
এই প্রথম বিজ্ঞানিরা কোনো প্রাইমেট প্রজাতিকে ক্লোন করলো! চীনের সাংহাই প্রদেশের Institute of Neuroscience of Chinese Academy of Sciences গবেষণাসংস্থার বিজ্ঞানিরা এটি করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিজ্ঞানিরা somatic cell nuclear transfer (SCNT) নামক কৌশল ব্যবহার করে, যা কিনা ২০ বছর আগে ডলি নামে একটি ভেড়াকে ক্লোন করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিলো (পরে সেই ভেড়া নানা শারীরিক জটিলতায় মারা যায়)। এই প্রক্রিয়ায় একটি প্রাণীর (যেমন, যে বানরটিকে ক্লোন করবেন) দেহের কোষের কোষকেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস (যাতে ডিএনএ থাকে) সংগ্রহ করা হয়। এরপর এই নিউক্লিয়াসকে আরেকটি ডিম্বাণু কোষে (মূল ডিম্বাণু কোষের নিউক্লিয়াস সরিয়ে ফেলে যেটিকে ক্লোন করবেন সেটির নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়) প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর সেটি সংখ্যাবৃদ্ধি করে বড় হয়।
উইকিপিডিয়াতে এই ছবি দেখতে পারেন।
প্রাইমেটদের ক্লোন করা সম্ভব মানে মানুষকে-ও ক্লোন করা যাবে। প্রাইমেটদের সাথে মানুষদের ডিএনএ'র পার্থক্য অনেক কম, তাছাড়া প্রাইমেটদের মৌলক আবেগ অনুভূতি সহমর্মিতা ইত্যাদি গুণ আছে। বুদ্ধিমত্তা অনেকটা তিন-পাঁচ বছরের মানুষের বাচ্চার মতন। এই কারণে প্রাইমেটদের ক্লোন করা উত্তর আমেরিকা কিংবা ইউরোপে নিষিদ্ধ, তবে চীনে এইসব এথিক্যাল এপ্রুভাল কিংবা নৈতিকতার বিধিনিষেধ কম, এইকারণে করতে পেরেছে।
এখানে প্রাসঙ্গিক যে চীন গত সপ্তাহে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গিয়েছে সর্বাধিক প্রকাশিত গবেষণাপত্রের দিক থেকে (বিজ্ঞানের সব শাখা মিলিয়ে)। আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের উন্নতি, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, উদ্ভাবন ইত্যাদির পেছনে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে ব্রেইন-ড্রেনের কারণে আসা সেরাদের গবেষণা। চীন গবেষণার দিক থেকে ছাড়িয়ে যাওয়া মানে তারা একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে প্রকাশ হতে বেশি দেরি নেই (বিশেষ করে ট্রাম্পের মতন লোক যদি দেশ চালায়)। উল্লেখ যে চীন ৮০ জন মানুষের উপর CRISPR-Cas9 কৌশল ব্যবহার করেছে (এই কৌশলের মাধ্যমে ডিএনএর অংশ কেটে রোগ নিরাময় কিংবা ডিএনএতে পরিবর্তন আনা যায় শরীরের যেকোনো অংশে বা সারা শরীরে)। এটা-ও সম্ভব হয়েছে গবেষণা-সংক্রান্ত বিধিনিষেধের জোরদার কম থাকায়।
হয়তো এরা মানুষ-ও ক্লোন করা শুরু করে দিয়েছে কে জানে! মানুষ ক্লোন করা শুরু হলে অন্য মানুষের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেটা দেখার বিষয়!
(মানুষ ক্লোন করা শুরু করলে আমি নিজের দুটো ক্লোন করে একজনকে ল্যাবে আর আরেকজনকে ক্লিনিক্যাল ওয়ার্কে দিয়ে 'আসল' আমি সারা পৃথিবী ভ্রমণে বের হয়ে যেতে পারি!
একটা সাইফাই লিখতে ইচ্ছে করছে যেখানে ক্লোনিং করা মানুষদের আসল ব্যক্তিরা দাস হিসেবে ব্যবহার করবে (অনেকটা আফ্রিকান আমেরিকানদের যেভাবে শ্বেতাঙ্গরা করেছিলো))
No comments:
Post a Comment