ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার জন্য গণভোট ডেকেছিল, অনেকাংশে বিস্ময়করভাবে ব্রিটিশরা ৫২% (হ্যাঁ) – ৪৮% (না) ভোটে নিজেদের মতামত জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু গন্তব্য কোথায়? খবরের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ পাউন্ড ডলারের বিপরীতে তার মান হারিয়েছে ১২%। যা গত ৩১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পৃথিবীর শেয়ার বাজারগুলোও তাদের মান হারাতে শুরু করেছে, বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাপারটি মোটামুটি দুঃস্বপ্ন, যেহেতু ব্রিটেনের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর বিদেশি বিনিয়োগের ওপর। হাল ধরে রাখতে না পেরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, তার দল চেয়েছিল ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকুক।
সাম্রাজ্যবাদ মানে হলো শোষণ নিপীড়ন এবং লুণ্ঠনের ইতিহাস, বৃহত্তর ব্রিটেনের প্রতিচ্ছবি, শত শত বছর থেকে সারা পৃথিবীজুড়ে লুণ্ঠন আর শোষণকারী ব্রিটিশদের আজকের মানচিত্র দেখলে মনে হয় না এরাই এককালে সাম্রাজ্য কায়েম করেছিল সর্বত্র। তবে তাদের কর্মের নজির এখনও রয়ে গেছে পৃথিবীজুড়ে। বর্তমান পৃথিবীতে বড় বড় সব সংঘর্ষ ও বিবাদের পেছনে রয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব, যেমন কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ, ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তি ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিবাদ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বিভক্তি। সেই ব্রিটেন আজ নিজের দেশ বাঁচাতে লড়ছে। ২০০৮ সালের বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি এখনও। অবশ্য অনেক বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশ যেমন জাপান, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা- এরাও এই মন্দা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু এই অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি অনেকদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনশক্তি ও অভিবাসন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিয়ে ব্রিটেন নাখোশ।
সাধারণ বয়স্ক শ্বেতাঙ্গদের (যারা ব্রিটেনের ত্যাগের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে) মতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার ফলে ব্রিটেন বৈধ-অবৈধ অভিবাসনের কাছে তাদের দেশকে ‘হারাচ্ছে’, দেশের স্বকীয়তা হারাচ্ছে, তারা চায় তাদের দেশকে ফিরে পেতে, এছাড়া আছে সন্ত্রাসবাদের হুমকি, ভিনদেশি সংস্কৃতি ও মানুষের কাছে ‘ব্রিটিশ সংস্কৃতির’ কোনঠাসা হয়ে পড়া। তারা ব্রিটেন অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হিসেবে অভিবাসনকেও দায়ী করে, তাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে অন্যরা- এমন মনোভাবও প্রকাশ পায়। ব্রিটিশরা তাদের দেশে নিজস্ব নীতি চাইবে তা স্বাভাবিক, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সহজ মনে হলেও মনে রাখা দরকার যে, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ৪০ বছর ধরে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক কাঠামো, নীতিচর্চা, জনশক্তির অবাধ যাতায়াত ব্রিটেনকে বিনিয়োগের ভালো জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক অনেকাংশে একে অন্যের পিঠ চুলকানোর মতো, দুইজনেরই লাভ-ক্ষতি এক সঙ্গে।
সাম্রাজ্যবাদ মানে হলো শোষণ নিপীড়ন এবং লুণ্ঠনের ইতিহাস, বৃহত্তর ব্রিটেনের প্রতিচ্ছবি, শত শত বছর থেকে সারা পৃথিবীজুড়ে লুণ্ঠন আর শোষণকারী ব্রিটিশদের আজকের মানচিত্র দেখলে মনে হয় না এরাই এককালে সাম্রাজ্য কায়েম করেছিল সর্বত্র। তবে তাদের কর্মের নজির এখনও রয়ে গেছে পৃথিবীজুড়ে। বর্তমান পৃথিবীতে বড় বড় সব সংঘর্ষ ও বিবাদের পেছনে রয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব, যেমন কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ, ভারতীয় উপমহাদেশের বিভক্তি ও জাতিগত সাম্প্রদায়িকতা উসকে দেওয়া, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল বিবাদ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের বিভক্তি। সেই ব্রিটেন আজ নিজের দেশ বাঁচাতে লড়ছে। ২০০৮ সালের বিশ্ব-অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারেনি দেশটি এখনও। অবশ্য অনেক বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশ যেমন জাপান, আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা- এরাও এই মন্দা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু এই অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি অনেকদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের জনশক্তি ও অভিবাসন পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নিয়ে ব্রিটেন নাখোশ।
সাধারণ বয়স্ক শ্বেতাঙ্গদের (যারা ব্রিটেনের ত্যাগের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে) মতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকার ফলে ব্রিটেন বৈধ-অবৈধ অভিবাসনের কাছে তাদের দেশকে ‘হারাচ্ছে’, দেশের স্বকীয়তা হারাচ্ছে, তারা চায় তাদের দেশকে ফিরে পেতে, এছাড়া আছে সন্ত্রাসবাদের হুমকি, ভিনদেশি সংস্কৃতি ও মানুষের কাছে ‘ব্রিটিশ সংস্কৃতির’ কোনঠাসা হয়ে পড়া। তারা ব্রিটেন অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হিসেবে অভিবাসনকেও দায়ী করে, তাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছে অন্যরা- এমন মনোভাবও প্রকাশ পায়। ব্রিটিশরা তাদের দেশে নিজস্ব নীতি চাইবে তা স্বাভাবিক, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি সহজ মনে হলেও মনে রাখা দরকার যে, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, ৪০ বছর ধরে গড়ে ওঠা অর্থনৈতিক কাঠামো, নীতিচর্চা, জনশক্তির অবাধ যাতায়াত ব্রিটেনকে বিনিয়োগের ভালো জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক অনেকাংশে একে অন্যের পিঠ চুলকানোর মতো, দুইজনেরই লাভ-ক্ষতি এক সঙ্গে।
ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গ ত্যাগ করার বিষয়ে ও ত্যাগের পরবর্তী সম্পর্ক কেমন হবে, বিশেষ করে অর্থনীতিবিষয়ক ব্যাপারগুলো (জনশক্তির যাতায়াত কি অবাধ থাকবে? করের হার বাড়া-কমা, অভিবাসনের সুযোগ-সুবিধা, পণ্যের বিতরণ ও প্রবেশ কি শুল্কমুক্ত হবে? ইত্যাদি ইত্যাদি) নিয়ে দর-কষাকষি করবে পরবর্তী দুই বছর ধরে, কিন্তু এই কথা বলা যায় যে, এই খবরের ফলে বিনিয়োগকারীদের মনে যে অবিশ্বাস ও সংশয় জন্মেছে তার প্রভাব বিশ্ব-অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারগুলোতে বেশ অনেকদিন থাকবে। এই দুইবছর ধরে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিনির্ধারণে মতামত জানাতে পারবে না, অংশগ্রহণ করতে পারবে না এবং ব্রিটেন-সংক্রান্ত যেকোনও সিদ্ধান্ত অন্যান্য ২৭টি দেশ দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে। এমনকি বাণিজ্যবিষয়ক যেকোনও চুক্তি, নীতি ইত্যাদি। ফলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়বে ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীগণ ও সর্বোপরি অর্থনৈতিক অবস্থা হ-য-ব-র-ল হতে পারে আরও। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে ব্রিটেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই কিছুটা বেসামাল- এই সময় একজন সুদক্ষ নেতা ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দরকষাকষি কী রকম অনুকূলে হবে সেটি ভাবনার বিষয়।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য নেতারা বলছেন যে, তারা ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারবেন এবং পরিস্থিতি দ্রুত সামাল দিতে পারবেন সেই ব্যাপারে সংশয় আছে। এই খবর ইউরোপের অন্যান্য যেসব দেশ, যেমন স্পেন, ডেনমার্ক ইউনিয়ন ত্যাগ করতে চায় তাদের পালে হাওয়া দেবে অনেক। ওইসব দেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো ইউরোপে মুক্ত অভিবাসনের বিপক্ষে এবং নিজ নিজ দেশের নীতি ইউনিয়নের নীতির চেয়ে বেশি তুলে ধরতে চায়। ফলে এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় ইউনিয়ন আরও ভাঙলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেখার বিষয় ইউনিয়নের দুই বড় দেশ ফ্রান্স ও জার্মানি কিভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ব্রিটিশ রাজ্যও ভাঙতে পারে। স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের জনগণ ইউনিয়নের সঙ্গে থাকার ব্যাপারে ভোট দিয়েছে, যা মূল ইংল্যান্ডের জনগণের ইচ্ছার বিপরীত। কিছুদিন আগে স্কটল্যান্ড ব্রিটিশ রাজ্য থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য গণভোটের আয়োজন করেছিল, এই খবর সেই ইচ্ছাকে আরও উসকে দেবে, মতবিরোধের কারণে যদি স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড ইউনিয়নের সঙ্গে থাকবেই এবং ইংল্যান্ডকে ত্যাগ করবেই- এই ভাব নিয়ে থাকে তবে ব্রিটিশ রাজ্য ভাঙবে।
ব্রিটেনে বসবাসকারী অভিবাসী ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে বসবাসকারী ব্রিটিশদের অবস্থা কী হবে? তারা কি আগের মতো অবাধ যাতায়াত করতে পারবে? তাদের কাজ থাকবে? করের পরিমাণ বেড়ে যাবে? যেকোনও সমাজ কিংবা রাষ্ট্র যখন রক্ষণশীল হয়ে ওঠে তখন প্রথমদিকে ভুক্তভোগী হন সংখ্যালঘু ও অভিবাসীরা, যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে ইহুদিদের নির্যাতন, বর্তমান বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর আক্রমণ ইত্যাদি নজির আছে। কথা হচ্ছে ব্রিটেন কি আরও কঠোর অভিবাসন নীতি পাস করবে? বিদ্যমান অভিবাসীদের ভাগ্য নিয়ে সংশয় আছে, বিশেষ করে যারা চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত আছেন। মার খাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে ব্রিটেনে ও অন্যান্য দেশে অনেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী কাজ করছেন বিভিন্ন প্রকল্পে, যেগুলোর ভবিষ্যত ফান্ডিং নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে এরই মাঝে। সাম্প্রতিককালের এক জরিপে এইসব বিজ্ঞানীদের ৯২% জানিয়েছেন যে, তারা চান ব্রিটেন ইউনিয়নে থাকুক।
যদি আবার ব্রিটেন ইইউতে যুক্ত হতে চায় তবে কিভাবে হবে? নতুন কোনও শর্ত জুড়ে দেওয়া হবে? যদি অন্যান্য সদস্য দেশগুলো মেনে না নেয় এই যেমন-ইচ্ছে ত্যাগ-আগমন। এই প্রস্থান যতো না উত্তর জোগাবে তারচেয়েও বেশি প্রশ্ন জাগাবে বলা যায়।
নির্দ্বিধায় বলা যায়, আরও একবার ব্রিটিশ রাজ্য সারাবিশ্বে তার প্রভাব ফেলবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের মাধ্যমে। হয়তো এই চাকাতলে পড়ে সর্বস্ব হারাবে কোনও বিনিয়োগকারী, অনেক অভিবাসী চলে যাবে শূন্য হাতে স্বপ্নহীন, অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় বাড়ি গাড়ি করা হবে না মধ্যবিত্তদের, চাকরির বাজারে হতাশা নিয়ে দিন কাটাবে যুবক-যুবতী, কিন্তু হয়তো এই যাওয়া তেমন মন্দও নয়। ব্রিটিশরা যদি মনে করে তারা সুখী নয় তবে তাদের আত্মসুখের জন্যও এই প্রস্থান জরুরি।
বাংলাট্রিবিউনে পূর্বপ্রকাশিত
বাংলাট্রিবিউনে পূর্বপ্রকাশিত
No comments:
Post a Comment