১
একটি গল্প বলি। উনিশ বছরের তৌহিদের গল্প। পড়াশোনায় খারাপ
ছিলো না কোনো কালেই তবে মাধ্যমিকের পরে তার বাবার কাজের বদলিতে অন্য শহরে পাড়ি
জমালে তাদের পরিবার সে একা হয়ে পড়ে, আগের বন্ধুবান্ধবদের হারায়, খানিকটা বিষণ্নতায়
ভুগে, পড়াশোনায় তেমন মন বসে না। অথচ ছোটবেলা থেকে সে স্বপ্ন দেখতো সে “সুপারহিরোদের” মতো কিছুটা করে একদিন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে।
নতুন শহরে তার পরিচয় হয় এক বড় ভাইয়ের সাথে, তাদের বাসার
সামনের দোকানে আড্ডা মারে প্রায় বিকেলে, তৌহিদ খুচরো কেনাকাটার জন্য দোকানে গেলে
টুকটাক আলাপ হয়, কুশল বিনিময়। এভাবে তাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে, ততোদিন সেই বড় ভাইটি
তৌহিদের সম্পর্কে অনেক জানে। সেই বড় ভাইয়ের সাথে নামাজ পড়ে, মাঝে মাঝে ধর্মীয় বই
দেয়, তৌহিদ পড়ে, এভাবে তৌহিদকে সেই বড় ভাইটি “দ্বীনের পথে” ডাকে।
একদিন তৌহিদকে ঘরে পাওয়া যায় না। পুরোপুরি লাপাত্তা। পরিবার
অনেক খুঁজলো, পুলিশে জানালো। কোনো টিকিটি নেই তৌহিদের।
ছয় মাস পরে জঙ্গিদল কর্তৃক এক বোমাবিস্ফোরণে নিহত
অনুসারীদের ছবির সাথে তার ছবি পাওয়া যায়। পরিবার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন
প্রতিবেশিরা ভাবতে থাকে কীভাবে সেই মুখচোরা অমায়িক ছেলেটা জঙ্গীতে রূপান্তরিত হলো।
এইটা কোনো গল্প নয়। বর্তমান বাঙলাদেশের কিছু কিছু কিশোর
যুবকদের বাস্তব কাহিনি।
২
বাঙলাদেশে ছোটখাট সন্ত্রাসী-সংগঠন ও প্রতিক্রিয়াশীলরা বরাবরই
ছিলো, তবে হলি
আর্টিজান রেস্টুরেন্টে ও শোলাকিয়া হামলাকারী জঙ্গিরা সেইসব থেকে অন্য ধাঁচের,
তাদের কাজে রয়েছে “পেশাদারিত্ব” ও কৌশল পরিকল্পনা ইত্যাদি। আইসিসের মতো
একটি বহির্দেশের সংগঠন কীভাবে বাঙলাদেশের মতো একটি মুসলিম কিন্তু অতি ধর্মান্ধ নয়
(অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায়) এমন একটি দেশে এসে অনুসারী সংগ্রহ করে হামলা চালিয়ে
দেশে বৃহত্তর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সেটি অনেক ভাবনার বিষয়; ঠিক কীভাবে কীসের
প্রভাবে একটি ধর্মপ্রবণ কিংবা সাধারণ কিশোর যুবকদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে
তাদের হিংস্রপ্রবণ করে তোলে এরা? কী তাদের কৌশল? এই থেকে পরিত্রাণের জন্য আমরা কী
করতে পারি?
সাম্প্রতিক সময়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও বিজনেস ইনসাইডার নামক
দুটি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রে আইসিস, আল-কায়েদা ইত্যাদির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের
অনুসারী সংগ্রহ করে সেই বিষয়ে কিছু লেখা এসেছে (যদি-ও লেখাগুলোর লিংক দিচ্ছি না
কারণ সেগুলোতে আইসিসের সারগ্রন্থের (ম্যানুয়াল) সরাসরি লিংক রয়েছে)। আইসিসের
সারগ্রন্থটি পড়ে একজন মনোচিকিৎসক হিসেবে সহজে বুঝতে পারি যে আইসিস মূলত এক ধরণের
মানুষেরই প্রতিই লক্ষ্য স্থির করে এবং কলাকৌশলের মাধ্যমে অনুসারীদের মানসিকতার
পরিবর্তন করে।
৩
রেসিপি অনুসরণ করে আপনি খাবার বানালে যেমন তা নষ্ট না হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে তেমনি কোনো কাজ নির্দিষ্ট সারগ্রন্থ বা প্রটোকল অনুসরণ করে করলে
সাফল্য প্রায় নিশ্চিত। আইসিস আল-কায়েদা ও এইসব উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো,
যারা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে ত্রাস সৃষ্টি করছে তারা মূলত একটি সারগ্রন্থ ব্যবহার
করে তাদের অনুসারী সংগ্রহের জন্য। যদিও আল-কায়েদা এবং আইসিস এখন দুটি ভিন্ন সগঠন
(যদিও উভয়ের উদ্দেশ্য “ইসলামিক
রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠা করা),
কিন্তু এইসব জঙ্গি সংগঠনের অনুসারী সংগ্রহে কিছুটা উনিশ বিশ থাকলে-ও এরা মূলত
কমবেশি নিচের কৌশলগুলো প্রয়োগ করে এবং নির্দিষ্ট ধরণের লোকদের লক্ষ্য বানায়।
আইসিসের ৪৪ পৃষ্ঠার “রিক্রুটিং
শিল্পের একটি কোর্স” নামক
সারগ্রন্থটি ভুল ব্যাখ্যায় ভরা, হিংস্রাত্মক (“বিধর্মীদের হত্যা করা যাবে”), বর্ণবাদী, নারীবিদ্বেষী (“যৌনদাসী”) কথাবার্তায় ভর্তি, একজন স্বাভাবিক নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি কিংবা একজন
শান্তিপ্রিয় মুসলিম-ও (যারা ইসলামের মূল বিষয় সম্পর্কে অবগত) এইসবের বিরোধিতা
করবে, কিন্তু আইসিসের জোর “বিষয়ে” নয়, বরং সেই বিষয়কে উপস্থাপনে; মানুষের মনস্তত্ত্বকে কীভাবে প্রভাবিত
করা যায় সেটি জানা থাকলে তাকে দিয়ে অনেক কিছু করা যায়, আইসিসের সারগ্রন্থে তার
নজির পাবেন।
যেহেতু ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে একে
অন্যের সাথে হাজার কিলোমিটার দূরে থেকে-ও কাছে থাকতে পারে তেমনি এই বিষয়টি
সাঁপে-বর, আইসিসের মতো বিদেশি জঙ্গি সংগঠনগুলো অনুসারী সংগ্রহ করার জন্য তাদের দ্বারে
দ্বারে যেতে হয় না, আন্তর্জালে সংযোগ স্থাপন করে অন্যকে কথার জালে ফেলা যায় সহজে।
আইসিস আমেরিকা ও ইউরোপের যেসব দেশ থেকে অনুসারী সংগ্রহ করেছে দেখা গেছে তাদের
অনেকের সাথে তারা যোগাযোগ স্থাপন করেছে ফেইসবুক, টুইটার ও অন্যান্য চ্যাটিং
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, যেসব অনুসারী পরে পালিয়ে আসতে পেরেছেন কিংবা আইনরক্ষাবাহিনির
হাতে ধরা খেয়েছেন তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়।
আইসিসের সারগ্রন্থে যে বিষয়টি বারবার বলা হয় সেটি হচ্ছে “সাবধান হতে হবে কী ধরণের ধার্মিক লোকদেরকে
দ্বীনের পথে ডাকছো, কারণ অনেক ধার্মিক আমাদের দাওয়াহ (আমন্ত্রণ) প্রত্যাখান করতে
পারে এবং আমাদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।“ অর্থাৎ, একজন লোক ধার্মিক হলেই তাকে ডাকা যাবে না,
নির্দিষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের হতে হবে। ঠিক কী কী সেইসব বৈশিষ্ট্য?
সারগ্রন্থ মতে তেমন-বেশি-ধার্মিক-নয় মুসলিম যুবকরা হচ্ছে
উত্তম “অনুসারী”, সংগ্রহের জন্য। যেহেতু, “তেমন-বেশি-ধার্মিক” না হলে তাকে “সঠিক পথে গাইড করা” সহজ হবে,
অর্থাৎ, আপনি কিছু না জানলে বা কম জানলে ভালো, আপনাকে শিখিপড়িয়ে নেয়া যাবে, ঠিক
যেনো এক টুকরো মাটি, ইচ্ছে মতো চাঁচে ফেলে আকার দেয়া যাবে।
আইসিসের জিহাদিদের মতে সংগ্রহের জন্য আরো উত্তম যেসব
ছেলেমেয়ে বা লোক মোটামুটি বিচ্ছিন্নভাবে একা একা থাকে। এই ব্যাপারটি মানুষের মনস্তত্ত্বের একটি দুর্বলতাকে
ব্যবহার করার কৌশল। বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্কের গঠন এমন যে মানুষ
সামাজিকতায় আনন্দ পায়, একা থাকতে পারে না, এই কারণে বেশিদিন একা থাকলে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা
ইত্যাদি মানসিক ব্যাধির শিকার হয় অনেক মানুষ। যেহেতু যেই লোকটি একা বিচ্ছিন্ন থাকে
তাকে দলে বেড়ানো সহজ, কারণ সে মেশার জন্য উন্মন থাকে, এবং এই একা থাকা লোকটির কাজে
আপনি “একটি আশ্রয়” হিসেবে আবির্ভূত হবেন। সারগ্রন্থটি এই-ও
নির্দেশ করে যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম,
যেহেতু পড়াশোনার কারণে অনেকে নিজ বাস্তুএলাকা ছেড়ে দূরে থাকে, একা থাকে, তাছাড়া
পড়াশোনার চাপ, বন্ধুহীনতার স্ট্রেসের কারণে যে মানসিক চাপে থাকে তাই তার মনকে
প্রভাবিত করা সহজ। উল্লেখ্য, মনোবৈজ্ঞানিক অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ট্রেসের
সময় আমাদের মস্তিষ্ক নিজের সর্বোচ্চ দিতে পারে না, যে কাজটি আপনি স্বাভাবিক সময়ে
সহজে করতে পারেন স্ট্রেসের সময়ে সেই কাজটি করতে গিয়ে আপনি হিমশিম খাবেন, ভুল
করবেন। এছাড়া, যুবক বয়েসীদের মাঝে “সমাজ পাল্টানোর” একটি মনোভাব
কাজ করে, অনেকে সরকার ও প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হয়, ফলে তাদেরকে লক্ষ্য করা যায়। তবে
সারগ্রন্থটি হুঁশিয়ারি করে যে এইক্ষেত্রে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে, কারণ
অনেকক্ষেত্রে গুপ্তচর থাকে এবং তারা “আমাদের পরাজয়ের কারণ হতে পারে।“
এছাড়া, বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আগামীর
ভবিষ্যত, ফলে তাদের মাঝে নিজস্ব চিন্তাধারা ঢুকিয়ে দিতে পারলে দাওয়াহ’র বিস্তার হবে, নতুবা তারা “জড়বাদী” কিংবা অন্যান্য “রাজনৈতিক মতবাদে” প্রভাবিত হবে
এবং দ্বীনের পথে আসবে না। অর্থাৎ, আইসিস যুবকদেরকে হস্তগত করতে চায় শুধুমাত্র
তাদের “সামর্থ্যের” জন্যই নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মকে প্রভাবিত
করা জন্য। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। তবে তারা সর্তক করে যে দাওয়াহ’র ক্ষেত্রে প্রথমেই জোর না করতে, তাতে
আগ্রহী ব্যক্তি ভয় পেয়ে যেতে পারে অথবা তাদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে
পারে।
সারগ্রন্থটি আরো বলে যে প্রথম থেকেই বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের
সমস্যার কথা নিয়ে কথা না বলতে, তা না হলে যুবকটির মনে হতে পারে শুধুমাত্র তাকে
রিক্রুট করার জন্যই ফাঁদ, অথচ বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরতে হবে যে যেনো তার মনে হয়
সে মুসলমানদের “অবস্থার
উন্নতির” জন্য নিজে থেকে কিছু করতে
পারছে। অর্থাৎ, ধোঁকার আশ্রয় নেয় আইসিস। মুখে এক, অন্তরে বিষ। আল-কায়েদা কিংবা
সালাফি জিহাদিদের সম্পর্কে সরাসরি কথা বলা যাবে না, যেহেতু মিডিয়ার কারণে এই
ব্যাপারে অনেকের রিরূপ মনোভাব আছে, বরং মুজাহিদদের সম্পর্কে সাধারণভাবে কথা বলা
যাবে, কীভাবে দ্বীনের বান্দারা ইসলামের জন্য জীবন দিয়েছে সেই নিয়ে কথা বলা যাবে।
সারগ্রন্থটি মতে নিয়মিতভাবে আইসিসের বই, লেকচার, সিডি
ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে, এবং নিয়মিতভাবে তাকে এসব “গেলাতে হবে”, আলোচনা করতে হবে এই ব্যাপারে (সে আসলেই পড়ছে কিনা যাচাইয়ের জন্য), ফলে তার
মনে এইসব সবর্দা সজাগ থাকবে। তবে কোনো জিহাদি ভিডিও সাথে সাথে দেখানো যাবে না, যদি
না প্রমাণ পাওয়া যায় যে তার ঈমান আসলেই মজবুত। অর্থাৎ, নিয়মিত প্রপাগান্ডার
মাধ্যমে আইসিস বা জঙ্গি সংগঠনগুলো কিশোর যুবকদের মগজধোলাই করে, যেহেতু সে এইসবের
সংস্রবে নিয়মিত আসে, এইসব নিয়ে নিয়মিত চিন্তা করে, তার মস্তিষ্কে এই ব্যাপারে
দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন হয় এবং “প্রাইমিং (priming effect) প্রভাব” কাজ করে।
আইসিসের মতে ইসলামিক ঘটনা, ট্র্যাজেডিগুলোকে এমনভাবে
উপস্থাপন করতে হবে যে (আইসিসের দৃষ্টিকোণ থেকে) যেনো ব্যক্তির মনে সহানুভূতির
সৃষ্টি হয়, তার মনে অমুসলিমদের প্রতি ক্ষোভ জন্মে, বিধর্মীদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা
যায়। যেমন ধরুন, ফিলিস্তিন নিয়ে কথা বলা যাবে। সবাই জানে যে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের
জন্মভূমির জন্য মারা যাচ্ছে, জীবন দিচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া এটাকে অন্যভাবে
উপস্থাপন করছে, এভাবে একটি ইসলামিক রাষ্ট্রের পতন মেনে নেয়া যায় না। অর্থাৎ, একটি
ঘটনাকে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করে সহানুভূতি জাগানো, এবং অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ
জাগানো। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের পরিস্থিতির জন্য অনেকে দায়ী, এখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
থেকে শুরু করে পাশ্ববর্তী দেশগুলোর প্রভাবসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো নোংরা
রাজনীতি আছে, শুধু ধর্ম নয়, ভৌগলিক-রাজনৈতিক অনেক ব্যাপার জড়িত, কিন্তু আইসিস
ধর্মের দিক থেকে ব্যাখ্যা করে (নিজের মতো করে ব্যাখ্যা) মগজধোলাই করে এবং হিংস্রার
জন্ম দেয়।
আগ্রহী ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে,
তাকে বিপদেআপদে সাহায্য করতে হবে, তার টুকটাক প্রয়োজন মেটাতে হবে, অর্থাৎ সে যেনো
মনে করে আইসিসের লোকই সেরা বন্ধু। এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে, ঘনিষ্ঠ থাকতে হবে
(যেমন- এক সপ্তাহের বেশি যোগাযোগহীন থাকা যাবে না)। তার ব্যত্তিত্ব বা চারিত্রিক
বৈশিষ্ট্য কী তা জানতে হবে, এবং সেই অনুসারে কাজ করতে হবে। যেহেতু মানুষ তার ভালো
বন্ধুর জন্য অনেক কিছু করতে প্রস্তুত, যখন সময় হবে, এই অনুসারী-ও আইসিসের লোকটির
জন্য কিছু করতে পিছপা হবে না।
অনুসারীকে নিয়মিত ইসলামের মূল্যবোধ শেখাতে হবে, আচরণব্যবহার
শেখাতে হবে, এবং তার ভালো কাজের জন্য প্রশংসা করতে হবে। তাকে নিয়মিত বেহেশতের কথা
এবং কীভাবে দ্বীনের পথে জীবন দিলে সহজে বেহেশত পাওয়া যায় সেটি জানাতে হবে, দোযখ
নিয়ে কম কথা বলা ভালো। এটি কিন্তু দারুণ কৌশল। মানবমস্তি্স্কের শাস্তির চেয়ে
পুরস্কারের প্রতি বেশি প্রবণতা থাকে, ফলে বেহেশত এবং মৃত্যু-পরবর্তী সুখের কথা বলে
তাদেরকে উদ্দীপিত রাখা যায়। তারা-ও উদ্যমী হয়ে থাকে কিছু করার জন্য, ভালো পুরস্কার
পাওয়ার জন্য।
সারগ্রন্থ মতে যখনই টের পাওয়া যাবে লোকটি বা যুবকটি তাদের
অনুসারী তাকে জিহাদের জন্য অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে
কীভাবে পশ্চিমারা এবং মুনাফিকরা ইসলামের ক্ষতি করছে এবং এই থেকে পরিত্রাণের উপায়
তাদের সাথে যুদ্ধ করা।
মূলত এভাবে মানবিক মনস্তত্ত্বকে প্রভাবিত করে ও নির্দিষ্ট
লোকদের চিহ্নিত করে আইসিস ও জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ও
সন্ত্রাসবাদের জন্য শরিয়া আইনের কঠোর ব্যাখ্যার মাধ্যমে তৈরি করে মৃত্যুপরোয়াহীন
বাহিনি।
৪
আইসিসকে থামাতে হবে তাদের বুদ্ধিভিত্তিক ভিত্তিকে ধ্বংস
করে, দেখিয়ে দিতে হবে যে তারা ধর্মকে সঠিকভাবে তুলে ধরে না, তাদের হয়ে যুদ্ধ করলে
ইহজাগতিক ও পরলৈকিক কোনো সাফল্য নেই। আইসিস যেহেতু কিশোর যুবক স্কুল কলেজের
শিক্ষার্থী বা বয়েসীদের লক্ষ্য বানায় এই বয়েসশ্রেণির ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বিশেষ
নজর রাখতে হবে। আপনার ভাই, আপনার সন্তান, আপনার বন্ধু প্রতিবেশির স্বাভাবিক আচরণ
হঠাৎ পাল্টে গেছে কি না তা নির্ণয় করুন।
কিশোরবেলা হচ্ছে মানুষের জন্য সবচেয়ে সংকটকালীন সময়,
হরমোনের প্রভাব তখন তুঙ্গে, মস্তিষ্ক তখনো গঠন ও সংযোগস্থাপন শেষ করে নি, ফলে
কিশোরকিশোরীদের চিন্তার গভীরতা কম, চিন্তায় দূরদর্শীতা কম, তারা ঝুঁকি নিতে পিছপা
হয় না, তারা কিছু করতে চায়, তারা সমাজ পাল্টাতে চায়, কিন্তু দেখতে হবে এই চাওয়া
কীভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা হচ্ছে। অনেকে কিশোরকিশোরি এইসময় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে
(স্কুল পাল্টানো, কৈশোরের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের বিড়ম্বনা ও সংকোচে
ইত্যাদি), বিষণ্নতায় ভুগে, এইসব মানসিক ব্যাপারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের
সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করুন, কৃর্তৃসুল্ভ ব্যবহার নয়। তাদেরকে জানুন, এবং জানান।
৫
রোগ প্রতিরোধই হচ্ছে বড় উপায়। আইসিস ও জঙ্গি সন্ত্রাসবাদ বর্তমান বিশ্বের বড় সমস্যা। কিন্তু এর সমাধান সম্ভব সকলের অংশীদারে। যেহেতু আমরা এখন জানি কীভাবে এবং কোন ধরণের লোকদের তারা অনুসারী হিসেবে সংগ্রহ করে আমরা ভাবতে পারি কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়।
No comments:
Post a Comment