০
মাঝরাত্রে ঘুম ভাঙলে আর সুখ লাগে না। মেঘ দেখা যায় না যে মেঘ খাবো! তারাগুলো ভীষণ নারীবাদি, কেবল নিজেদের মেলে ধরে। ওরা কি মেঘবালকের মাঠে যাবে না?
অনেকগুলো মেষ আছে, অনেকগুলো গাভী। ঘাসের, শিশিরের ওম নিয়ে তারা লাইনে দাঁড়ায়। খামারী লোকগুলো দুধ দুয়ে নেয়। দুধের রঙ মেঘসাদা।
হুঁশ, হুশ।
'একটু-ও যাবো না।'
'না গেলে সরে দাঁড়া।'
১
রাত কী আজ গেছে উত্তরের বনে, জলের ধারে। ওখানে দু'টি ব্যাঙ খেলা করে। ব্যাঙগুলো আদর পায় নি। সবাই কেবল হঙস-হঙসী নিয়ে লিখলো। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি মাছ শিকারে নামি। জলের গন্ধ মাতৃস্তন আঘ্রাণ।
রাতখেকো লোকেরা ভালবাসে সিগারেট, টিভি নিয়ন্ত্রক,
অথবা তারার জামাত
কতিপয় মাকড়সাদের কাছে পেলবশয্যা যদি চুলের
অরণ্যে বিলি-কাটা-রাত
কই নাতো। সিগারেট খেয়েছিলিম বড়জোর তিন কী চারবার। একবার সপ্তম শ্রেণীতে। জ্যাঠামশাইদের ঘরটা ছিল টিনের। সে ঘরের চালে শীতকালে শীমের মাঁচা করা হতো। শীমের বাকলের ভিতরে ফাঁকা। আমরা পাড়াতো ছেলেরা মিলে ধুমপানের আসর জমালাম। বাড়ির পিছনে বরই গাছে নিচে, নালিঘাসের জামাতে। দূরে একটা বকুলফুল গাছ ছিল। সকালে দৌড় লাগে; গোছা গোছা কুড়িয়ে এনে মালা গাঁথে।
বকুল আমি হাতে নিই না। অসহ্য ঘ্রাণ।
শীমফুলে মালা দিয়েছিলিম একজনকে।
মেয়েটা জন্মান্ধ ছিল।
একদিন পাগল হয়ে রাস্তায় উজান দিল।
কেউ কেউ......কেউ কেউ বলে তাকে...।
২
চুলে বিলি কাটতে পারে নিধি। মেয়েটার হাত অসম্ভব পেলব। তবে তাকে বায়না দিতে হয়- চকলেট, দুধেলা চকলেট। এটুকু বয়েসে সে বিনিময় শিখে গেছে।
রাত হলে মাছেরা কি ঘুমায়? আজ কোন মাছ পাচ্ছি না বড়শিতের আঙটিতে!
এমন রাতে কি অবনী বাড়িতে থাকে না? দেখো, দরজা আর খিড়কী ঘুমের অবশে এঁটে আছে।
"অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া"
৩
অবনীদের দু'টি পেয়ারা গাছ। একটা-ও কমলার ঝাঁড় নেই। কাজি পেয়ারা। ডাসা ডাসা। ওদের খামারের বিদেশী গাভীগুলোর ওলানের মতো। অবনী দরজায় কুকুর রাখতে নেই।
ফয়সলের মুখে নিশ্চয় শুনেছ যে গেল ছুটিতে তোমার বাড়ির সামনে কী লঙ্কাকাণ্ড হলো! কুকুর ভয় লাগে। কুকুরের অনেক শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি। শয়তান আর কুকুরের মাঝে পার্থক্য হলো শয়তান অমঙ্গলম আর কুকুর বন্ধুবৎসল।
একেকজন একেকটা রূপক ব্যবহার করে। আমি করি বিড়াল। আর গন্ধ তো সবকিছুরই আছে। সবকিছুর যেমন ঘুম আছে আধোআধো।
তবে সর্তক থাকবো। কড়া বেজে গেছে।
"কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’"
৪
সরিষার ক্ষেতে বেড়া টেনে কে দিয়েছে কড়া এঁটে! আমি তো উড়তে পারি না সুদর্শনের ঘুড়ি, আমি তো গাছে চড়তে পারি না প্রিয় হনুমান। উফ, ঝলসে দাও, পুড়িয়ে দাও। দরজার গঠন হয়ে পাহারা দিবো বাড়ি।
যেখানে ধান-পাকা-রঙ শীতের আভাস
সে দেশে জলের ধারে বসে ফেলেছি ছিঁপি
মাছ শিকারে গিয়ে চুপি চুপি অলুব্ধ বাতাস
এবঙ আমি কথায় কথায় মাঠের গন্ধ মাপি
৫
করম দোষে বারবার সন্তরণ। যমুনা কি একেকটি বিন্দু নদী। কার গাল গড়িয়ে পড়ে বুকপকেটে। বুকপকেটে একটি স্বপ্ন। স্বপ্ন আর ঘুম পরষ্পরের পাহারাদার।
"বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’"
৬
বৃষ্টিশব্দ বিষাদের নামতাপাঠ। কার ছাতায় ঝুলে ঝুলে টুপটাপ হচ্ছো ধুলির স্নান। গাভীরা মেঘ খায় না। বোকা। আমি খাই। আমি ঘাস খেতে পারি না। ঘাসেরা সূর্যকে দেবতা মানে। শিশির সাজিয়ে পূজো দেয়। আমি সূর্য হবো।
পরাঙ্মুখ। অবনী, মানুষের ভিড় ঘাসদের মতো। অবনী, মানুষ কি পরাঙ্মুখী? তবে কেন কপাটে রাখি করস্পর্শ। দুয়ারে...দুয়ারে....বৃষ্টি লাগিয়ে আনি বর্ষা। টিনের চালে বর্ষা যদি দাদরাতাল।
"দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?'"
বুক যেন হৃদপিণ্ডের দুয়ার। শিনায় শিনায় জমে আছে পাপ। অন্যপাপ। অবনী, বুক চেপে ধরে......বাড়িতে কই তুমি?
৭
মারিয়া প্রচুর সিগারেট খায়। ধোঁয়া পান করে। উইডস। গাঞ্জা। সে পাহারাদার নেই এমন ভাঁড়ার। আমি চিনি। আমি মাঝি চিনি, দাঁড় চিনি। আমি নিজেকে জানি না।
আমাকে চিনে তবে সম্পর্কের চুক্তিপত্রগুলো, আমার বিবরণ ধরে আছে আমার রচনা ও সম্পর্ক।
মারিয়া সিগারেটের বন্ধু চায়। একা একা সিগারেট টানতে সুখ নেই। মারিয়া কি অবনীদের বাড়ি চিনে?
অন্ধকার ও ঘাসের গন্ধ পরষ্পর সমান
চন্দনে মৌ জমলে দুর্হৃদ চাচাতো বোন
আজ বিপুল রাতে সবাই জেগে জেগে জঙশন
বালিশের আরশে চৌকস ঘুম ঘরান্তর আহবান
৮
অবনী তোমার বালিশে চন্দনের সুরভী। তোমাদের আদিপুরুষ কি ফরাসী? হবে হয়তো.... মসুরীডালের ক্ষেতের আইল ধরে চলে গেছে রেললাইন....মেঠো ইঁদুরের ট্রেন। ওগো, জঙশনে টিকিট নিয়ে আছি। মাস্টার ইস্টিশিন ছেড়েছে ভূতের গ্রামে।
"আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’"
ওগো, লাল পতাকা।
ওলে, সবুজ জামা।
বাঙলাদেশ।
অবনী, বাঙলাদেশ তোমার বাড়ি।
আমি মরে গিয়ে তোমার বাড়ি আছি।
অবনী, অন্দরমহলের আছো আজ রাতে। বেশ। হৃদয়ের অন্দরমহলের কাঁসার শব্দ নিয়ে আসছে ঘুম।
"সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া"
আজ তবে না ঘুমালে-ও আছো।
৯
রাতে মাছ শিকারে গিয়ে বিক্রি দিয়ে আসি
তিন পাটি ঘুম ও মাকড়সার জাল
আমি ও আমার বিশ্বস্ত শয়তানের পিছে
ঘুরে অবিনাশী ছায়ার রুমাল
১৭/১২/২০০৯
মাঝরাত্রে ঘুম ভাঙলে আর সুখ লাগে না। মেঘ দেখা যায় না যে মেঘ খাবো! তারাগুলো ভীষণ নারীবাদি, কেবল নিজেদের মেলে ধরে। ওরা কি মেঘবালকের মাঠে যাবে না?
অনেকগুলো মেষ আছে, অনেকগুলো গাভী। ঘাসের, শিশিরের ওম নিয়ে তারা লাইনে দাঁড়ায়। খামারী লোকগুলো দুধ দুয়ে নেয়। দুধের রঙ মেঘসাদা।
হুঁশ, হুশ।
'একটু-ও যাবো না।'
'না গেলে সরে দাঁড়া।'
১
রাত কী আজ গেছে উত্তরের বনে, জলের ধারে। ওখানে দু'টি ব্যাঙ খেলা করে। ব্যাঙগুলো আদর পায় নি। সবাই কেবল হঙস-হঙসী নিয়ে লিখলো। তাদের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটিয়ে আমি মাছ শিকারে নামি। জলের গন্ধ মাতৃস্তন আঘ্রাণ।
রাতখেকো লোকেরা ভালবাসে সিগারেট, টিভি নিয়ন্ত্রক,
অথবা তারার জামাত
কতিপয় মাকড়সাদের কাছে পেলবশয্যা যদি চুলের
অরণ্যে বিলি-কাটা-রাত
কই নাতো। সিগারেট খেয়েছিলিম বড়জোর তিন কী চারবার। একবার সপ্তম শ্রেণীতে। জ্যাঠামশাইদের ঘরটা ছিল টিনের। সে ঘরের চালে শীতকালে শীমের মাঁচা করা হতো। শীমের বাকলের ভিতরে ফাঁকা। আমরা পাড়াতো ছেলেরা মিলে ধুমপানের আসর জমালাম। বাড়ির পিছনে বরই গাছে নিচে, নালিঘাসের জামাতে। দূরে একটা বকুলফুল গাছ ছিল। সকালে দৌড় লাগে; গোছা গোছা কুড়িয়ে এনে মালা গাঁথে।
বকুল আমি হাতে নিই না। অসহ্য ঘ্রাণ।
শীমফুলে মালা দিয়েছিলিম একজনকে।
মেয়েটা জন্মান্ধ ছিল।
একদিন পাগল হয়ে রাস্তায় উজান দিল।
কেউ কেউ......কেউ কেউ বলে তাকে...।
২
চুলে বিলি কাটতে পারে নিধি। মেয়েটার হাত অসম্ভব পেলব। তবে তাকে বায়না দিতে হয়- চকলেট, দুধেলা চকলেট। এটুকু বয়েসে সে বিনিময় শিখে গেছে।
রাত হলে মাছেরা কি ঘুমায়? আজ কোন মাছ পাচ্ছি না বড়শিতের আঙটিতে!
এমন রাতে কি অবনী বাড়িতে থাকে না? দেখো, দরজা আর খিড়কী ঘুমের অবশে এঁটে আছে।
"অবনী বাড়ি আছো
দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া"
৩
অবনীদের দু'টি পেয়ারা গাছ। একটা-ও কমলার ঝাঁড় নেই। কাজি পেয়ারা। ডাসা ডাসা। ওদের খামারের বিদেশী গাভীগুলোর ওলানের মতো। অবনী দরজায় কুকুর রাখতে নেই।
ফয়সলের মুখে নিশ্চয় শুনেছ যে গেল ছুটিতে তোমার বাড়ির সামনে কী লঙ্কাকাণ্ড হলো! কুকুর ভয় লাগে। কুকুরের অনেক শ্রবণশক্তি, ঘ্রাণশক্তি। শয়তান আর কুকুরের মাঝে পার্থক্য হলো শয়তান অমঙ্গলম আর কুকুর বন্ধুবৎসল।
একেকজন একেকটা রূপক ব্যবহার করে। আমি করি বিড়াল। আর গন্ধ তো সবকিছুরই আছে। সবকিছুর যেমন ঘুম আছে আধোআধো।
তবে সর্তক থাকবো। কড়া বেজে গেছে।
"কেবল শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছো?’"
৪
সরিষার ক্ষেতে বেড়া টেনে কে দিয়েছে কড়া এঁটে! আমি তো উড়তে পারি না সুদর্শনের ঘুড়ি, আমি তো গাছে চড়তে পারি না প্রিয় হনুমান। উফ, ঝলসে দাও, পুড়িয়ে দাও। দরজার গঠন হয়ে পাহারা দিবো বাড়ি।
যেখানে ধান-পাকা-রঙ শীতের আভাস
সে দেশে জলের ধারে বসে ফেলেছি ছিঁপি
মাছ শিকারে গিয়ে চুপি চুপি অলুব্ধ বাতাস
এবঙ আমি কথায় কথায় মাঠের গন্ধ মাপি
৫
করম দোষে বারবার সন্তরণ। যমুনা কি একেকটি বিন্দু নদী। কার গাল গড়িয়ে পড়ে বুকপকেটে। বুকপকেটে একটি স্বপ্ন। স্বপ্ন আর ঘুম পরষ্পরের পাহারাদার।
"বৃষ্টি পড়ে এখানে বারোমাস
এখানে মেঘ গাভীর মতো চরে
পরাঙ্মুখ সবুজ নালিঘাস
দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?’"
৬
বৃষ্টিশব্দ বিষাদের নামতাপাঠ। কার ছাতায় ঝুলে ঝুলে টুপটাপ হচ্ছো ধুলির স্নান। গাভীরা মেঘ খায় না। বোকা। আমি খাই। আমি ঘাস খেতে পারি না। ঘাসেরা সূর্যকে দেবতা মানে। শিশির সাজিয়ে পূজো দেয়। আমি সূর্য হবো।
পরাঙ্মুখ। অবনী, মানুষের ভিড় ঘাসদের মতো। অবনী, মানুষ কি পরাঙ্মুখী? তবে কেন কপাটে রাখি করস্পর্শ। দুয়ারে...দুয়ারে....বৃষ্টি লাগিয়ে আনি বর্ষা। টিনের চালে বর্ষা যদি দাদরাতাল।
"দুয়ার চেপে ধরে–
‘অবনী বাড়ি আছো?'"
বুক যেন হৃদপিণ্ডের দুয়ার। শিনায় শিনায় জমে আছে পাপ। অন্যপাপ। অবনী, বুক চেপে ধরে......বাড়িতে কই তুমি?
৭
মারিয়া প্রচুর সিগারেট খায়। ধোঁয়া পান করে। উইডস। গাঞ্জা। সে পাহারাদার নেই এমন ভাঁড়ার। আমি চিনি। আমি মাঝি চিনি, দাঁড় চিনি। আমি নিজেকে জানি না।
আমাকে চিনে তবে সম্পর্কের চুক্তিপত্রগুলো, আমার বিবরণ ধরে আছে আমার রচনা ও সম্পর্ক।
মারিয়া সিগারেটের বন্ধু চায়। একা একা সিগারেট টানতে সুখ নেই। মারিয়া কি অবনীদের বাড়ি চিনে?
অন্ধকার ও ঘাসের গন্ধ পরষ্পর সমান
চন্দনে মৌ জমলে দুর্হৃদ চাচাতো বোন
আজ বিপুল রাতে সবাই জেগে জেগে জঙশন
বালিশের আরশে চৌকস ঘুম ঘরান্তর আহবান
৮
অবনী তোমার বালিশে চন্দনের সুরভী। তোমাদের আদিপুরুষ কি ফরাসী? হবে হয়তো.... মসুরীডালের ক্ষেতের আইল ধরে চলে গেছে রেললাইন....মেঠো ইঁদুরের ট্রেন। ওগো, জঙশনে টিকিট নিয়ে আছি। মাস্টার ইস্টিশিন ছেড়েছে ভূতের গ্রামে।
"আধেকলীন হৃদয়ে দূরগামী
ব্যথার মাঝে ঘুমিয় পড়ি আমি
সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া
‘অবনী বাড়ি আছ?’"
ওগো, লাল পতাকা।
ওলে, সবুজ জামা।
বাঙলাদেশ।
অবনী, বাঙলাদেশ তোমার বাড়ি।
আমি মরে গিয়ে তোমার বাড়ি আছি।
অবনী, অন্দরমহলের আছো আজ রাতে। বেশ। হৃদয়ের অন্দরমহলের কাঁসার শব্দ নিয়ে আসছে ঘুম।
"সহসা শুনি রাতের কড়ানাড়া"
আজ তবে না ঘুমালে-ও আছো।
৯
রাতে মাছ শিকারে গিয়ে বিক্রি দিয়ে আসি
তিন পাটি ঘুম ও মাকড়সার জাল
আমি ও আমার বিশ্বস্ত শয়তানের পিছে
ঘুরে অবিনাশী ছায়ার রুমাল
১৭/১২/২০০৯
No comments:
Post a Comment