কৃপাহত্যার বলিরেখা ফুটেছে বেওয়ারিশ ত্বকে,
লোমকূপে দ্বিতীয় প্রণয়ের সোঁদা গন্ধ;
মৃত্যু চাই।
বকুলফুলের বনে। বাষ্পীয় সময় উবে
যায়, জলদাগ তুলে রাখে দেয়াল। রঞ্জনের
সকল উপাদান তোমার হাতে তুলে দিলাম চকিত। কেবল
আমার
অঘোর
মৃত্যু
চাই।
০
মেহগনি বাকলে রোদ লেগে চিকচিক করছে। রাখাল মাঠের ওম খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে- তাহার নাম খড়। তাহার থলের ভিতরে বাতাসের বাঁধুনি।
ওই, তোমার গাঁয়ের নাম কি নিশানগর? রাত হলে জোনাকগন্ধে নেশায় চুরচুর? আমি আসছি তবে, আমার আলখেল্লার আবড়ালে তোমার জন্য আনব একটি জলটোপর; তোমার আর নদী দেখার সাধ জাগবে না। চৈতী তুমি কি আমার অনুপস্থিতি ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখ? তারা গুণো?
ওগো ঘাস, তুমি গাঁয়ের কাচারীতে ঠাঁই দিও আমারে; আমার আছে জলটোপর- তাতে শ্বেতপদ্মের আঙুলদাগ, শালুকের আবেশ।
১
'ভাইজান, রাইত হইছে। বাড়ি যান। আর কিতাব পড়ি কাম নাই।'
'আরেকটু থাকি? আপনার চা-টা শেষ করুন, ওটুকু সময়ই।'
'মাঙ্গীপাড়ায় গিয়ে এসব পাঠ করেন। আমার টাইম নাই। কল্কি না দিলে সোহাগ নাই।'
আমি অর্জুন হয়ে যাই। আমার হাতে বখতিয়ারের তলোয়ার।
'চুপ হালা। সবুইজ্জ্যারে কইয়া তোর নকরী কাইল্কাই ছুডায় দিতাম হারি। যা সবুজরে ডাক দে।'
সে গিরগিটি। তার রঙ এখন নীল। সে দরজার দিকে চাহে।
২
খিড়কীর তন্দ্রা ভাঙিয়ে দিই। দ্বার খুলে দেয় পরিচিত নারী, তার চলনে ঘুমের অক্ষর খসে পড়ে। আমি কি স্লেটপ্রিয়শিশু হয়ে রবো?
'খেয়ে নিও।'
'তুমি?'
'ভালো লাগছে না, মাথাটা ভারভার।'
আমি তাকে কাছে টেনে আনি, পাশে বসিয়ে তার মুখে ক্লান্তির গঠন দেখি। আদর করে খাইয়ে দিই (সে যেমন আমার খুকিটাকে খাইয়ে দেয়), আজ ভীষণ ইচ্ছে।
'কেমন আছে ও?'
'ব্যথা উঠেছিল। অনেক কাঁদল। পরে ঔষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।'
শুনে আমি নীলবক হয়ে যাই; মাছরাঙা হেসে উঠে অতিথী বাতাসে।
'তোমার ঘুমপাড়ানিয়া গান আজকাল কাজ করে না।'
'হুঁ।'
আমরা খাওয়া শেষে পরষ্পরের আঙুল ধরে তাকে দেখে আসি; সে ঘুমিয়ে কাদা। অথচ আমরা পুতুল তৈরীর কৌশল ভুলে গেছি।
৩
সবুজের কাছে টাকা চাইতে ইচ্ছে করছে না, অথচ না চেয়ে-ও উপায় নেই। টাকার কোন বন্দোবস্ত হয় নি। সবুজ তো কম করল না! প্রতি সপ্তাহে উষিকে ডাক্তারের কাছে নিতে হয় ঢাকায়। গাড়ি লাগে। সবুজ তার পুরাতন ফোর্ডটা দিয়েছে বুধবারের জন্য। এই যেমন আমরা যেখানে থাকি- সেটা-ও তার সম্পদ; বিনিময়ে আমি কী করি! কিছুই না। খামার বাড়ি দেখাশোনার কোন অভিজ্ঞতাই আমার নেই।
সবুজ কেন এমন অকাতরে বিলিয়ে যাচ্ছে? ঋণ? আমি তো এককালীন কিছু টাকা দিয়েছিলাম যখন আমার সামর্থ্য অটুট ছিল। অবশ্য টাকাগুলো না পেলে তার ফরাসি দেশগমন হতো না, হয়তো হতো না এমন রাজ্যবিস্তার।
সবুজের কাছে আমার নীলের প্রবাহ; আমার আস্তিনে সূর্য কেঁদে রোদ হয়ে রয়।
উষির জন্মদিনটা ঠিকঠিক মনে আছে। উন্মন বর্ষা। রফিকদার হাতে ম্যাগের জন্য কবিতা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম; পুরো নগ্ন সড়কে আমি আর শহুরে কুকুর ছাড়া কেউ ছিল না, বর্ষা সবার ত্বকে ধরা দিতে চায় না বোধহয়! সেই সময় হঠাৎ ভ্রাম্যফোন বেজে উঠে, এমন ক্ষণে পৃথিবী দূরের টেউটিন- যার কাছে গেলে বৃষ্টি সুশীল হয়ে যায়। তবু-ও পরিচিত নাম্বার দেখে শুনে যাই- মেয়ে হয়েছে। তবে অবস্থা বেগতিক। কী যে দিন গিয়েছিল। মেয়েটা শ্বাস নিতে পারতো না, অক্সিজেন দেয়ার কথা বলল ডাক্তার- অথচ অক্সিজেন নেই মফস্বল হাসপাতালে! টিকে যায়, আমরা-ও। বছর দুয়েক পর বিষয়গুলো ধরা পড়ে। জন্মলগ্নক্ষণে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কে সেরিব্রাল পক্ষাঘাত (Cerebral palsy) ঘটে। ফলাফল চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইয়ের মতো নিরস- মেয়েটা নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কথা বলতে পারে না, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ তো দূরে থাক! উন্নতির আশা নেই বললেই চলে! মারে, তুই কিছু না করতে পারলে কী হয়েছে! তোর বাবা তো পারে, মা পারে। তোকে একদিন শিশির দেখাতে নিয়ে যাব- মেখে মেখে অমৃত খাবি। সেদিন তুই নিজেই পারবি!
জোনাকি (মানে আমার বউটাকে আদর করে মাঝে মাঝে এ'নামে ডাকি) অনেকগুলো গান গেয়ে রেকর্ডিং করে রেখেছিল। সে আগে গান গাইতো; উষি যখন গর্ভে তখন একা একা গান তুলতো- মেয়েকে শুনাবে বলে! মেয়ে এখন নীল চোখা সাদা বিড়াল!
'দোস্ত, কাল রাতে তোর কাছে এসেছিলাম। দারুয়ানটা মেলা ঝামেলা করল!'
'রাতে আমাকে যেন বিরক্ত না করা হয় সেরকম বলা আছে।'
'ওহ্! কিছু জোগাড় হলো? কালকে একটা স্পেশাল টিট্রমেন্ট করবে বলেছে, ব্যথা নাকি কমার সম্ভবনা আছে।'
'এখনো নয়....একটু ঝামেলায় আছি ব্যাটা।'
আমি দেয়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। পাশে এসে দাঁড়ায় বিষণ্ণ টিকটিকি। ছোটবেলায় টিকটিকির লেজ খসিয়ে আমরা খেলতাম; ফড়িং এর ডানা খসিয়ে। পাশে এসে দাঁড়ায় বিমূক ফড়িং। আমি তাদের অস্বীকার করে সুতোয় ঝুলে থাকি।
৪
'আমরা কি কোন পাপ করেছিলাম? তুমি বা আমি?'
'না। ঈশ্বর পাপ করেছিল। আমি হয়তো করব শীঘ্রই।'
জোনাকি চোখ তুলে তাকায়, আলো নেচে উঠে সরলস্পন্দনে।
'আমি একবার ইস্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলিম। বাসায় বলেছি লাইব্রেরীতে গিয়েছি।' জোনাকি সোফায় গা এলিয়ে বসে।
'জোনাকি, আমি বাঘ হতে পারি নি, তুমি-ও হতে পারো নি। উষিটা-ও। তাই। আমরা দাঁড়কাক হয়ে আছি।'
৫
এখনো আলো ফুটে উঠে নি, সূর্যের শিশুআলো নিয়ে পৃথিবী এখন মাতৃউষা। বাইরে এসে দাঁড়াই, আঙুলে লেগে আছে গতরাতের দাম্পত্য-অহঙ; আমি পকেটে হাত লুকাই, আমি পকেটে ভোর লুকাই।
গ্যারেজের সঙ্গীহীন জানালাটা বন্ধ, দরজাটা হা করে আছে আমার প্রবেশের জন্য। ভিতরে গাড়ি, ইঞ্জিন চালু করে বসি একটু। বাতাসে তেল পোড়ার স্বাভাবিক গন্ধ।
দরজাটা বন্ধ করে উষিকে আনতে যাই। জোনাকি ঘুমিয়ে। এসব দিনে তার ভীষণ মন খারাপ হয় বলে তাকে ঘুমেলা করে রাখি। উষি চোখ মেলে আছে।
উষিকে সাবধানে গাড়িতে এনে শুয়ে দিই। আমি দরজাটায় খিড়কী লাগিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়াই। আলো ফুটতে শুরু করেছে। সুপাচ্যরোদ!
আমি দ্রুত পা বাড়াই। বাসা ছাড়িয়ে।
======================================
আমার নাম উষি। মা-বাবা ডাকে। যদি-ও আমি কখনো সাড়া দিই নি! ভিতরে ভিতরে দিই, আব্বু-আম্মু জানে না। এটা অবশ্য নতুন কিছু না, আমার ব্যথা লাগলে চোখ বন্ধ করে একটা দৃশ্য বানিয়ে নিই। সেখানে সবাই কথা বলে, হাঁটে, গায়। আমি দেখি।
বাবা বোধহয় কিছু ফেলে এসেছে ঘরে। গাড়ির ইঞ্জিন ঘড়ঘড় শব্দ করে চলছে, দরজা বন্ধ থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখছি না। আমি একটা দৃশ্য বানিয়ে নিচ্ছি।
শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। হয়ত ব্যথাটা আরো বাড়বে; আমি তাড়াতাড়ি দৃশ্য বানাতে মনোযোগ দিলাম- ব্যথার আগে দৃশ্যটা বানাতে হবে। আমার চোখ লেগে আছে, নয়নে ঘুমের দৃশ্য।
ঘুমের দৃশ্য।
ঘুম।
রচনাকাল: সেপ্টেম্বর, ২০০৯ [আনুমানিক]
লোমকূপে দ্বিতীয় প্রণয়ের সোঁদা গন্ধ;
মৃত্যু চাই।
বকুলফুলের বনে। বাষ্পীয় সময় উবে
যায়, জলদাগ তুলে রাখে দেয়াল। রঞ্জনের
সকল উপাদান তোমার হাতে তুলে দিলাম চকিত। কেবল
আমার
অঘোর
মৃত্যু
চাই।
০
মেহগনি বাকলে রোদ লেগে চিকচিক করছে। রাখাল মাঠের ওম খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে নিয়ে বাড়ি ফিরে- তাহার নাম খড়। তাহার থলের ভিতরে বাতাসের বাঁধুনি।
ওই, তোমার গাঁয়ের নাম কি নিশানগর? রাত হলে জোনাকগন্ধে নেশায় চুরচুর? আমি আসছি তবে, আমার আলখেল্লার আবড়ালে তোমার জন্য আনব একটি জলটোপর; তোমার আর নদী দেখার সাধ জাগবে না। চৈতী তুমি কি আমার অনুপস্থিতি ছাদে গিয়ে চাঁদ দেখ? তারা গুণো?
ওগো ঘাস, তুমি গাঁয়ের কাচারীতে ঠাঁই দিও আমারে; আমার আছে জলটোপর- তাতে শ্বেতপদ্মের আঙুলদাগ, শালুকের আবেশ।
১
'ভাইজান, রাইত হইছে। বাড়ি যান। আর কিতাব পড়ি কাম নাই।'
'আরেকটু থাকি? আপনার চা-টা শেষ করুন, ওটুকু সময়ই।'
'মাঙ্গীপাড়ায় গিয়ে এসব পাঠ করেন। আমার টাইম নাই। কল্কি না দিলে সোহাগ নাই।'
আমি অর্জুন হয়ে যাই। আমার হাতে বখতিয়ারের তলোয়ার।
'চুপ হালা। সবুইজ্জ্যারে কইয়া তোর নকরী কাইল্কাই ছুডায় দিতাম হারি। যা সবুজরে ডাক দে।'
সে গিরগিটি। তার রঙ এখন নীল। সে দরজার দিকে চাহে।
২
খিড়কীর তন্দ্রা ভাঙিয়ে দিই। দ্বার খুলে দেয় পরিচিত নারী, তার চলনে ঘুমের অক্ষর খসে পড়ে। আমি কি স্লেটপ্রিয়শিশু হয়ে রবো?
'খেয়ে নিও।'
'তুমি?'
'ভালো লাগছে না, মাথাটা ভারভার।'
আমি তাকে কাছে টেনে আনি, পাশে বসিয়ে তার মুখে ক্লান্তির গঠন দেখি। আদর করে খাইয়ে দিই (সে যেমন আমার খুকিটাকে খাইয়ে দেয়), আজ ভীষণ ইচ্ছে।
'কেমন আছে ও?'
'ব্যথা উঠেছিল। অনেক কাঁদল। পরে ঔষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি।'
শুনে আমি নীলবক হয়ে যাই; মাছরাঙা হেসে উঠে অতিথী বাতাসে।
'তোমার ঘুমপাড়ানিয়া গান আজকাল কাজ করে না।'
'হুঁ।'
আমরা খাওয়া শেষে পরষ্পরের আঙুল ধরে তাকে দেখে আসি; সে ঘুমিয়ে কাদা। অথচ আমরা পুতুল তৈরীর কৌশল ভুলে গেছি।
৩
সবুজের কাছে টাকা চাইতে ইচ্ছে করছে না, অথচ না চেয়ে-ও উপায় নেই। টাকার কোন বন্দোবস্ত হয় নি। সবুজ তো কম করল না! প্রতি সপ্তাহে উষিকে ডাক্তারের কাছে নিতে হয় ঢাকায়। গাড়ি লাগে। সবুজ তার পুরাতন ফোর্ডটা দিয়েছে বুধবারের জন্য। এই যেমন আমরা যেখানে থাকি- সেটা-ও তার সম্পদ; বিনিময়ে আমি কী করি! কিছুই না। খামার বাড়ি দেখাশোনার কোন অভিজ্ঞতাই আমার নেই।
সবুজ কেন এমন অকাতরে বিলিয়ে যাচ্ছে? ঋণ? আমি তো এককালীন কিছু টাকা দিয়েছিলাম যখন আমার সামর্থ্য অটুট ছিল। অবশ্য টাকাগুলো না পেলে তার ফরাসি দেশগমন হতো না, হয়তো হতো না এমন রাজ্যবিস্তার।
সবুজের কাছে আমার নীলের প্রবাহ; আমার আস্তিনে সূর্য কেঁদে রোদ হয়ে রয়।
উষির জন্মদিনটা ঠিকঠিক মনে আছে। উন্মন বর্ষা। রফিকদার হাতে ম্যাগের জন্য কবিতা দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম; পুরো নগ্ন সড়কে আমি আর শহুরে কুকুর ছাড়া কেউ ছিল না, বর্ষা সবার ত্বকে ধরা দিতে চায় না বোধহয়! সেই সময় হঠাৎ ভ্রাম্যফোন বেজে উঠে, এমন ক্ষণে পৃথিবী দূরের টেউটিন- যার কাছে গেলে বৃষ্টি সুশীল হয়ে যায়। তবু-ও পরিচিত নাম্বার দেখে শুনে যাই- মেয়ে হয়েছে। তবে অবস্থা বেগতিক। কী যে দিন গিয়েছিল। মেয়েটা শ্বাস নিতে পারতো না, অক্সিজেন দেয়ার কথা বলল ডাক্তার- অথচ অক্সিজেন নেই মফস্বল হাসপাতালে! টিকে যায়, আমরা-ও। বছর দুয়েক পর বিষয়গুলো ধরা পড়ে। জন্মলগ্নক্ষণে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কে সেরিব্রাল পক্ষাঘাত (Cerebral palsy) ঘটে। ফলাফল চিকিৎসা বিজ্ঞানের বইয়ের মতো নিরস- মেয়েটা নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কথা বলতে পারে না, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ তো দূরে থাক! উন্নতির আশা নেই বললেই চলে! মারে, তুই কিছু না করতে পারলে কী হয়েছে! তোর বাবা তো পারে, মা পারে। তোকে একদিন শিশির দেখাতে নিয়ে যাব- মেখে মেখে অমৃত খাবি। সেদিন তুই নিজেই পারবি!
জোনাকি (মানে আমার বউটাকে আদর করে মাঝে মাঝে এ'নামে ডাকি) অনেকগুলো গান গেয়ে রেকর্ডিং করে রেখেছিল। সে আগে গান গাইতো; উষি যখন গর্ভে তখন একা একা গান তুলতো- মেয়েকে শুনাবে বলে! মেয়ে এখন নীল চোখা সাদা বিড়াল!
'দোস্ত, কাল রাতে তোর কাছে এসেছিলাম। দারুয়ানটা মেলা ঝামেলা করল!'
'রাতে আমাকে যেন বিরক্ত না করা হয় সেরকম বলা আছে।'
'ওহ্! কিছু জোগাড় হলো? কালকে একটা স্পেশাল টিট্রমেন্ট করবে বলেছে, ব্যথা নাকি কমার সম্ভবনা আছে।'
'এখনো নয়....একটু ঝামেলায় আছি ব্যাটা।'
আমি দেয়ালের ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি। পাশে এসে দাঁড়ায় বিষণ্ণ টিকটিকি। ছোটবেলায় টিকটিকির লেজ খসিয়ে আমরা খেলতাম; ফড়িং এর ডানা খসিয়ে। পাশে এসে দাঁড়ায় বিমূক ফড়িং। আমি তাদের অস্বীকার করে সুতোয় ঝুলে থাকি।
৪
'আমরা কি কোন পাপ করেছিলাম? তুমি বা আমি?'
'না। ঈশ্বর পাপ করেছিল। আমি হয়তো করব শীঘ্রই।'
জোনাকি চোখ তুলে তাকায়, আলো নেচে উঠে সরলস্পন্দনে।
'আমি একবার ইস্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলিম। বাসায় বলেছি লাইব্রেরীতে গিয়েছি।' জোনাকি সোফায় গা এলিয়ে বসে।
'জোনাকি, আমি বাঘ হতে পারি নি, তুমি-ও হতে পারো নি। উষিটা-ও। তাই। আমরা দাঁড়কাক হয়ে আছি।'
৫
এখনো আলো ফুটে উঠে নি, সূর্যের শিশুআলো নিয়ে পৃথিবী এখন মাতৃউষা। বাইরে এসে দাঁড়াই, আঙুলে লেগে আছে গতরাতের দাম্পত্য-অহঙ; আমি পকেটে হাত লুকাই, আমি পকেটে ভোর লুকাই।
গ্যারেজের সঙ্গীহীন জানালাটা বন্ধ, দরজাটা হা করে আছে আমার প্রবেশের জন্য। ভিতরে গাড়ি, ইঞ্জিন চালু করে বসি একটু। বাতাসে তেল পোড়ার স্বাভাবিক গন্ধ।
দরজাটা বন্ধ করে উষিকে আনতে যাই। জোনাকি ঘুমিয়ে। এসব দিনে তার ভীষণ মন খারাপ হয় বলে তাকে ঘুমেলা করে রাখি। উষি চোখ মেলে আছে।
উষিকে সাবধানে গাড়িতে এনে শুয়ে দিই। আমি দরজাটায় খিড়কী লাগিয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়াই। আলো ফুটতে শুরু করেছে। সুপাচ্যরোদ!
আমি দ্রুত পা বাড়াই। বাসা ছাড়িয়ে।
======================================
আমার নাম উষি। মা-বাবা ডাকে। যদি-ও আমি কখনো সাড়া দিই নি! ভিতরে ভিতরে দিই, আব্বু-আম্মু জানে না। এটা অবশ্য নতুন কিছু না, আমার ব্যথা লাগলে চোখ বন্ধ করে একটা দৃশ্য বানিয়ে নিই। সেখানে সবাই কথা বলে, হাঁটে, গায়। আমি দেখি।
বাবা বোধহয় কিছু ফেলে এসেছে ঘরে। গাড়ির ইঞ্জিন ঘড়ঘড় শব্দ করে চলছে, দরজা বন্ধ থাকায় অন্ধকারে কিছু দেখছি না। আমি একটা দৃশ্য বানিয়ে নিচ্ছি।
শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। হয়ত ব্যথাটা আরো বাড়বে; আমি তাড়াতাড়ি দৃশ্য বানাতে মনোযোগ দিলাম- ব্যথার আগে দৃশ্যটা বানাতে হবে। আমার চোখ লেগে আছে, নয়নে ঘুমের দৃশ্য।
ঘুমের দৃশ্য।
ঘুম।
রচনাকাল: সেপ্টেম্বর, ২০০৯ [আনুমানিক]
No comments:
Post a Comment