বাবার কোনো স্মৃতি নেই আমার। ছোট্ট বাচ্চাদের খেলনা রোবট কিংবা বহুমুখী
ট্যাবলেট থাকে, আমার সেইসব-ও ছিলো না, আমি বড় হয়েছি কেবল সংখ্যার শূন্যতার
ভেতরে, শ্রোডিঙ্গারের বেড়ালের অস্তিত্ব-অনস্তিত্বকে সঙ্গী করে! মা আমাকে
খুব সূক্ষ্মভাবে পরিচালিত করে বড় করেছে, আমি এখন ভেবে ভেবে বের করতে পারি।
মাকে বাবা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে উত্তর দিতো না, কেবল একপলক দৃষ্টে
তাকিয়ে থাকতো, যেনো প্রশ্ন করে আমি অপরাধী, যেনো মা কোনো সিজোফ্রেনিক। অথচ
অন্য কোনো বিষয়ে প্রশ্ন দাখিল করলে মা আমাকে উত্তর দিতে চেষ্টা করতো, একজন
নৃ-বৈজ্ঞানিক হিসেবে যতোটুকু দিতে পারা যায়, না পারলে নিজের টেম্কো খরচ করে
কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারের থেকে আমার জন্য জেনে নিতো। আমি মাসের প্রথম
সপ্তাহেই আমার বরাদ্দকৃত টেম্কো খরচ করে ফেলতাম। আপনি এই জেনে আমাকে
ডানপিটে বলতে পারেন। তবে আমি চিরকাল বাঁ হাতে লিখেছি, মায়ের বাঁ কাঁধে
চড়েছি, বাম...।
আমার অতিবেগুনি রশ্মিতে চোখব্যথা করলে আর বিরাট মাথাটাকে বহন করতে করতে
ক্লান্ত হয়ে যেতে চাইলে আমি নিজেকে নবম মাত্রায় কল্পনা করতাম। কল্পনা করতাম
আমি হকিং রেডিয়েশন, আমাকে অঙ্ক কষে সবাই ধরবে, কিংবা আমি কৃষ্ণগহ্বর হয়ে
সব আলো খেয়ে ফেলছি এবং নিজেকে আরো কালো করছি! আমি বাবা-মার সাথে
হাইপার-ডাইভ খেলতে থাকতাম যেনো। এখানে এসে আমার চিন্তা বাবার দিকে ঘুরে
যায়। এখন সামরিক কর্মকর্তা কেমন হয়? সে কি ত্রিকোণমিতি-ফাংশন অস্ত্র নিয়ে
ঘুরে সারাদিন, মাঝে মাঝে কুক্কুরোড়া (কুকুর ও ঘোড়া জিনপ্রকৌশলে সৃষ্ট
তীক্ষ্ম ঘ্রাণশক্তিসম্পন্ন অথচ দীর্ঘপথ দৌড়তে পারা প্রাণী) নিয়ে মধ্যরাতে
বেরিয়ে পড়ে? বাবার কি মোচ ছিলো? আমি জুলপি আর মোচ আঁকতে পারতাম না, কেবল
খুদে সাপের লেজ অথবা মাকড়সার হাতের মতন আঁকতাম, ম্যাডাম বকে দিতো আমি না কি
বেশি কল্পবৈজ্ঞানিক চলচ্চিত্র দেখি। বাবা কি আমার জন্যই মাকে ছেড়ে
গিয়েছিলো?
আন্তর্সৌরজগত জিনপ্রকৌশল কেন্দ্রে যোগ দেয়ার আগে আমি কিছু কাজ সেরে
নিলাম। তাবৎ বীর্যালয়গুলোর প্রদক-তালিকা ঘেটে বাবাকে খুঁজে পেলাম, বাবা
কোনো এক আশ্চর্য কারণে বীর্য ও নিজের মস্তিষ্ক দান করে গেছেন বিজ্ঞানের
জন্য। তার মস্তিষ্কের একটি কপি-ও আমি হাত করে নিলাম কেন্দ্রীয় কম্পু হ্যাক করে, অল্পের জন্য তো ধরাই পড়ে গিয়েছিলিম!
প্রথম ছয় মাস আমি মনোযোগ দিয়ে সবার মন যুগিয়ে রাতদিন কাজ করে গেলাম,
যেবার আমার চাকুরি পাকাপোক্ত হলো সেদিন থেকে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে একটি
বিশেষ প্রকল্প গড়ে তুললাম অনেক গোপনে। বাবাকে গড়বো। ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে
তার স্পার্ম আর দানকৃত দেহ থেকে। মনোদৈহিক আচরণের জন্য তার মস্তিষ্ক
বিশ্লেষণ করে গড়ে তুলতে লাগলাম প্রায় অবিকল বাবাকেই, যারা অন্যতম মুদ্রাদোষ
ছিলো বাচ্চাদের পানি খেয়ে মুখ মোছার মতো করে মুখে হাত বোলানো এবং গালে হাত
দিয়ে বসে নখ কাটা। আমি প্রায় সফল।
আমি বাবাকে গড়ে তুলবো। এবং মারবো। এবং মেরে ফেলবো। এবং ধ্বংস করবো। আমি
তাকে বুঝিয়ে দেবো পিতৃহীন শৈশবের হাহাকার এবং আমার মায়ের
আদিমহাবিশ্বশূন্যতা...
No comments:
Post a Comment