যখন আমরা ছেলেমানুষী বেঁচে ছিলাম দিগন্ত রঙ মেখে
চুম্বক আর অলৌকিকতার পৃথিবীতে রোদের গ্রাফিতি এঁকে
আমাদের চেতনা সারাক্ষণ উদ্দেশ্যহীন ও সীমানাহারা
বিচ্ছেদের ঘন্টা বাজতে শুরু করেছিলো মন কেমন করা
জীর্ণ কোনো পথে হেঁটে যেতাম কেউ তাকাতো শিউলি ফুলের চাহনি
আমরা যতো তারা গুনেছি কেউ ততোবার আকাশে চেয়ে-ও দেখে নি
ধোঁয়া গল্প কোলাহলে কতো বিকেল আমরা ক্ষয় করেছি দুহাতে
এখন পরষ্পরের স্মৃতি আমাদের ক্ষয় করে নিজেদের অজান্তে
ঘাস ছিলো সবুজে মাখামাখি
উজ্জ্বল আলোর কিছু জোনাকি
বন্ধুরা ছিলো চারিদিক ঘিরে
বিস্ময়ের রাত্রি ঘুরেফিরে
১
ইদানিং আবারো ডুবে আছি পিঙ্ক প্লয়েডে। মূলত High Hopes গানটিতে। উপরের লাইনগুলো গানটি থেকে অনুপ্রেরণায় লেখা। কেবলি স্মৃতিকাতুরে করে তুলছে। এর-ও আগের সপ্তাহসমূহে ডুবে ছিলাম জ্যাজ সংগীতে। মূলত জ্যাজ সিন্দাবাদের ভূতের মতো আবার মাথায় ভর করেছে জ্যাজ ফেস্টিভালের পর থেকে। মন্ট্রিয়াল আন্তর্জাতিক জ্যাজ উৎসব। মন্ট্রিয়াল ইন্টারন্যাশনাল জ্যাজ ফেস্টিভাল (Festival International de Jazz de Montréal)।
২
ঢাকাকে এককালে বলা হতো মসজিদের শহর, এখন বলা চলে ধুলো, খিস্তি আর জানজটের শহর। শহর পাল্টায়। যে মন্ট্রিয়াল এককালে নবোঢ়া ছিলো সে আজ পরিপূর্ণ- উৎসবের শহর। এই শহরে এক উৎসবের রেশ শেষ না হতেই যেনো আরেক উৎসব শুরু হয়। কী না হয়: Black & Blue Festival (পৃথিবীর বৃহত্তম গে-বেনিফিট নাচ), Canadian Grand Prix (গাড়িদৌড় বা কার-রেসিং), Fantasia International Film Festival (Festival International de Films Fantasia), Festiblues International de Montréal (ব্লুজ সংগীত উৎসব), Festival International Montréal en Arts (FIMA) (উন্মুক্ত শিল্প প্রদর্শনী), Festival International Nuits d’Afrique (আফ্রিকান সঙ্গীত মূর্ছনার রাত), Fête des enfants de Montréal (শিশুদের উৎসব, অনেকটা বাঙলাদেশের কচিকাঁচার মেলা বা শিশু একাডেমির উৎসবের মতন), Fête des Neiges de Montréal (তোমার সাথে আমার বরফ-বরফ খেলা), International Balloon Festival of Saint-Jean-sur-Richelieu (বেলুন উৎসব), International Fireworks Competition (আতশবাজি উৎসব), জাস্ট ফর লাফ, বিয়ার উৎসব- এরকম ভুরি ভুরি। গোনার জন্য আমার আঙুলে অতো কর নেই।
৩
একটা সময়ে আমি জ্যাজ আর ব্লুজ সংগীতের মধ্যকার কোনো পার্থক্য বুঝে নিতে পারতিম না- মূলত আমার কাছে একই মনে হতো; ঠিক যেমন টেকনো আর কান্ট্রি মিউজিককে দুই গ্লাসে একই বোতলের মদ মনে হতো। ২০০৮ সালে ঐচ্ছিক একটি ক্লাস নিই আমি, ইংরেজির ক্লাস হলে-ও মূলত কালোদের সংস্কৃতি, সংগীত ও ইতিহাস নিয়ে ক্লাস। ক্লাসের নামটা-ও বেশ অদ্ভূত: Ain't your blues like mine? এবং টিম ডাওর্টি আমার দেখা সেরা শিক্ষকদের অন্যতম। দুনিয়ার ঠিক উল্টো দিক থেকে আসা "চামেলী হাতে ব্যর্থ মানুষ, নিম্নমানের মানুষ" এক অভিবাসীকে তিনি চেনালেন এক দিককার সৌন্দর্য, শ্বেতাঙ্গ-কালোদের বৈরিতা; পরিচয় করিয়ে দিলেন শ্বেতাঙ্গদের ফেলে দেয়া ভাঙা গিটার, পুরানো ভায়োলিন কুড়িয়ে নিয়ে বাঁধা গান আর বুকের সমস্ত সাধনায় সমৃদ্ধ হওয়া কালোদের শিল্পের সাথে। আমি পাঠ করতে লাগলাম বিলি হলিডের (Billie Holiday) ভয়ানক শৈশব, জানতে শুরু করলাম হানিবয়ের (David Honeyboy Edwards) দুঃসহ শৈশব-কৈশোর আর উচ্ছেদের যন্ত্রণা। "The world owes me nothing" এই কথা বলা তাই হয়তো হানিবয়কেই মানায়।
৪
জ্যাজ সংগীতের জন্ম আমেরিকার নিউ অরলিন্সে। বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে। আফ্রিকান-আমেরিকান (এবং ইউরোপিয়ান) সংগীতকৌশল মিলেমিশে গেছে- সেক্সোফোন, ক্লারওনেট, বাঁশি, ভাইব্রাফোন, ট্রামপেট, পিয়ানো, গিটার, বানজো, টুবা, ডাবল বাস, বাস্ গিটার, ড্রাম কিট ইত্যাদি ব্যবহার করে সুর তোলা হয় এই মরমী সংগীতের। মূলত ব্লুজ, গসপেল, এবং র্যাগটাইমের মধ্যকার সেতু এই জ্যাজ সংগীত। পাহাড় ডিঙালে নদী অবুঝ শিশুর মতো শাখা-প্রশাখা মেলে দেয়, জ্যাজ-ও তেমনি সেই ১৯২০ সালের মূল ধারা থেকে বিভিন্ন অপভ্রংশে বিকশিত হয়েছে: সুইয়িং, ইলেক্ট্রো-জ্যাজ, জ্যাজ ফিউশন, ল্যাটিন জ্যাজ, ফ্রি জ্যাজ, কুল জ্যাজ, মোডাল জ্যাজ ইত্যাদি। আর হ্যাঁ, প্রতিভাবান শিল্পীরা নিয়মকে ভেঙে নিয়ম গড়ে তুলেন, শিল্পের বিকাশ সৌন্দর্য ও শক্তি এখানেই। জ্যাজ-ও এর বাইরে নয়: লুইস আর্মস্ট্রঙের "What a wonderful world" মতো মুগ্ধকর নিজস্বতা রয়েছে বিলি হলিডে, এলা ফিটজারাল্ড, মাইলস ডেইভিস, রবার্ট জনসনের গানে।
সময়ের আগে কী ছিলো? কিচ্ছু না। স্রেফ শূন্যতা। এই শূন্যতা ভ্যাকুয়াম-ও নয়, ভ্যাকুয়ামে প্রতি মুহূর্তে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অতিপারমাণবিক কণা সৃষ্টি হয় এবং পরস্পরকে বিলীন করে দেয়। সময়ের আগে কী ছিলো সেটা জিজ্ঞেস করলে আপনি মিষ্টি হেসে বলবেন, "আমার মুখ! I'm looking for the face I had Before the world was made." (Yeats) বাজিঙ্গা!
জ্যাজের আগে কী ছিলো? হ্যাঁ, বর্ণবৈষম্য। জ্যাজ সংগীত নিজের শরীরে মাতৃগর্ভে গভীর মমতায় শিশুকে আগলে রাখার মতো করে বহন করছে আফ্রিকান আমেরিকানদের ইতিহাস, বিস্তৃতি ও সংস্কৃতিকে। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলে-ও বর্ণবৈষম্য তখনো ছিলো সমাজের প্রতি পদে পদে। কোনো বারে, রাস্তার কোণে জড়ো হয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা গাইতো- কাঠের ভঙ্গুর গিটার নিয়ে, ধর্মী সংগীত বা নিগ্রো গসপেল। এভাবে ক্রমে সংগীতের রূপান্তর ঘটে জ্যাজের জন্ম। র্যাগটাইমকে জ্যাজের পূর্বসূরি বলা চলে। সেই যে ভদ্র ভাবুক চেহারার স্কট জপলিন যে গান গাইতো!
ক্রমে নিউ অরলিন্সের ক্লাব, ব্রথেলগুলোতে জ্যাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জ্যাজের প্রথম দিককার টোনে সুইয়িং রিদম বেশি ছিলো- ফলে শ্রোতাদের নাচ-প্রবণ করে তুলতো। অনেক গানের সুর, কথা রচনা করা হতো তাৎক্ষণিক, প্রচলিত গানের ক্ষেত্রে যেমন চর্চা, অনুশীলন ইত্যাদি থাকে তেমন নয়, অর্থাৎ শিল্পীর স্বাভাবিকতা ফুটে ওঠে।
বলুন তো কতো সালে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে লিপ্ত হন? পারলেন না! ইতিহাস রসকসহীন বলেই আমরা মনে রাখতে চাই না। আমি জানি জ্যাজের ইতিহাস আপনি-ও মনে রাখবেন না, তাই ইতিহাসের ইতি এখানেই টানবো। তার আগে জানিয়ে দিই অশোক খ্রীষ্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৩) সালে কলিঙ্গ যুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জয় লাভ করেন। আরো জানিয়ে দিতে চাই আজকালকার জ্যাজের অবস্থা।
৫
আজকালকার জ্যাজ ক্রমশ উত্তরাধুনিক কবিতার মতো লাগামছাড়া হয়ে উঠছে- এতো বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা আর অপভ্রংশ বিস্তারিত হচ্ছে যে মনে হয় কাউবয় ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে না, ঘোড়াই নিরুদ্দেশ ট্র্যাকে নিয়ে যাচ্ছে কাউবয়কে। তবে উত্তরাধুনিক অনেক কবিই যেমন শেকড়ের টান অনুভব করেন এবং কেবল দৃশ্যকল্প-নির্ভর কবিতা না লিখে আদি ও আধুনিকতার সঙ্কর সৃষ্টি করেন তেমনি অনেক জ্যাজ গায়ক ক্লাসিক জ্যাজের সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধন সৃষ্টি করছেন। যেমন: মারালিস ব্রাদার।
অপভ্রংশগুলোর মধ্যে স্মুথিং জ্যাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাঙ্ক জ্যাজ ও এম-বেইজ জ্যাজ-ও কম যায় না। জ্যাকয়িম জয়নার, সিনডি ব্রেইডলে, নীলস্, বনি জেমস, ডেইভ কজ্ - এদেরকে আপনি স্মুথিং জ্যাজের জাদুকর বলতে পারেন। এদের অনেকে স্যাক্সোফোনিস্ট ও টেম্পোবাদক। স্মুথিং জ্যাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ রেডিও ইস্টিশনগুলো। পাঙ্ক জ্যাজের জন্মভূমি বলা চলে লন্ডন আর নিউ ইয়র্ক সিটিকে। সংগীতদল পপ গ্রুপ ফ্রি জ্যাজের সাথে রেগের (reggae) সংমিশ্রণ ঘটায়। পাঙ্ক জ্যাজের পুরোধা জন জমের কথা না বললে অবিচার করা হবে। এম-বেইজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের দিকে, যখন স্টিভ কোলম্যান, গ্রাহাম হেইনেস, ক্যাসান্দ্রা উইলসন, গেরি অ্যালেন, গ্রেগ ওসবি মিলে নিউ ইয়র্কে নতুন ধরণের সুর ও গান সৃষ্টির জন্য জড়ো হয়। সমসাময়িক আফ্রিকান-আমেরিকান গ্রুভ সংগীত ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের সাথে ঐতিহ্যবাহী সংগীতের মেলবন্ধন করে ওরা। এভাবেই এম-বেইজের সূচনা (Carr et, পৃ-৫০০)।
জ্যাজ সংগীতের জন্ম আমেরিকার নিউ অরলিন্সে। বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে। আফ্রিকান-আমেরিকান (এবং ইউরোপিয়ান) সংগীতকৌশল মিলেমিশে গেছে- সেক্সোফোন, ক্লারওনেট, বাঁশি, ভাইব্রাফোন, ট্রামপেট, পিয়ানো, গিটার, বানজো, টুবা, ডাবল বাস, বাস্ গিটার, ড্রাম কিট ইত্যাদি ব্যবহার করে সুর তোলা হয় এই মরমী সংগীতের। মূলত ব্লুজ, গসপেল, এবং র্যাগটাইমের মধ্যকার সেতু এই জ্যাজ সংগীত। পাহাড় ডিঙালে নদী অবুঝ শিশুর মতো শাখা-প্রশাখা মেলে দেয়, জ্যাজ-ও তেমনি সেই ১৯২০ সালের মূল ধারা থেকে বিভিন্ন অপভ্রংশে বিকশিত হয়েছে: সুইয়িং, ইলেক্ট্রো-জ্যাজ, জ্যাজ ফিউশন, ল্যাটিন জ্যাজ, ফ্রি জ্যাজ, কুল জ্যাজ, মোডাল জ্যাজ ইত্যাদি। আর হ্যাঁ, প্রতিভাবান শিল্পীরা নিয়মকে ভেঙে নিয়ম গড়ে তুলেন, শিল্পের বিকাশ সৌন্দর্য ও শক্তি এখানেই। জ্যাজ-ও এর বাইরে নয়: লুইস আর্মস্ট্রঙের "What a wonderful world" মতো মুগ্ধকর নিজস্বতা রয়েছে বিলি হলিডে, এলা ফিটজারাল্ড, মাইলস ডেইভিস, রবার্ট জনসনের গানে।
সময়ের আগে কী ছিলো? কিচ্ছু না। স্রেফ শূন্যতা। এই শূন্যতা ভ্যাকুয়াম-ও নয়, ভ্যাকুয়ামে প্রতি মুহূর্তে ধনাত্মক ও ঋণাত্মক অতিপারমাণবিক কণা সৃষ্টি হয় এবং পরস্পরকে বিলীন করে দেয়। সময়ের আগে কী ছিলো সেটা জিজ্ঞেস করলে আপনি মিষ্টি হেসে বলবেন, "আমার মুখ! I'm looking for the face I had Before the world was made." (Yeats) বাজিঙ্গা!
জ্যাজের আগে কী ছিলো? হ্যাঁ, বর্ণবৈষম্য। জ্যাজ সংগীত নিজের শরীরে মাতৃগর্ভে গভীর মমতায় শিশুকে আগলে রাখার মতো করে বহন করছে আফ্রিকান আমেরিকানদের ইতিহাস, বিস্তৃতি ও সংস্কৃতিকে। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলে-ও বর্ণবৈষম্য তখনো ছিলো সমাজের প্রতি পদে পদে। কোনো বারে, রাস্তার কোণে জড়ো হয়ে কৃষ্ণাঙ্গরা গাইতো- কাঠের ভঙ্গুর গিটার নিয়ে, ধর্মী সংগীত বা নিগ্রো গসপেল। এভাবে ক্রমে সংগীতের রূপান্তর ঘটে জ্যাজের জন্ম। র্যাগটাইমকে জ্যাজের পূর্বসূরি বলা চলে। সেই যে ভদ্র ভাবুক চেহারার স্কট জপলিন যে গান গাইতো!
ক্রমে নিউ অরলিন্সের ক্লাব, ব্রথেলগুলোতে জ্যাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। জ্যাজের প্রথম দিককার টোনে সুইয়িং রিদম বেশি ছিলো- ফলে শ্রোতাদের নাচ-প্রবণ করে তুলতো। অনেক গানের সুর, কথা রচনা করা হতো তাৎক্ষণিক, প্রচলিত গানের ক্ষেত্রে যেমন চর্চা, অনুশীলন ইত্যাদি থাকে তেমন নয়, অর্থাৎ শিল্পীর স্বাভাবিকতা ফুটে ওঠে।
বলুন তো কতো সালে সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধে লিপ্ত হন? পারলেন না! ইতিহাস রসকসহীন বলেই আমরা মনে রাখতে চাই না। আমি জানি জ্যাজের ইতিহাস আপনি-ও মনে রাখবেন না, তাই ইতিহাসের ইতি এখানেই টানবো। তার আগে জানিয়ে দিই অশোক খ্রীষ্টপূর্ব ২৬১ (মতান্তরে খ্রীষ্টপূর্ব ২৬৩) সালে কলিঙ্গ যুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে জয় লাভ করেন। আরো জানিয়ে দিতে চাই আজকালকার জ্যাজের অবস্থা।
৫
আজকালকার জ্যাজ ক্রমশ উত্তরাধুনিক কবিতার মতো লাগামছাড়া হয়ে উঠছে- এতো বেশি পরীক্ষানিরীক্ষা আর অপভ্রংশ বিস্তারিত হচ্ছে যে মনে হয় কাউবয় ঘোড়াকে নিয়ন্ত্রণ করছে না, ঘোড়াই নিরুদ্দেশ ট্র্যাকে নিয়ে যাচ্ছে কাউবয়কে। তবে উত্তরাধুনিক অনেক কবিই যেমন শেকড়ের টান অনুভব করেন এবং কেবল দৃশ্যকল্প-নির্ভর কবিতা না লিখে আদি ও আধুনিকতার সঙ্কর সৃষ্টি করেন তেমনি অনেক জ্যাজ গায়ক ক্লাসিক জ্যাজের সাথে আধুনিকতার মেলবন্ধন সৃষ্টি করছেন। যেমন: মারালিস ব্রাদার।
অপভ্রংশগুলোর মধ্যে স্মুথিং জ্যাজ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। পাঙ্ক জ্যাজ ও এম-বেইজ জ্যাজ-ও কম যায় না। জ্যাকয়িম জয়নার, সিনডি ব্রেইডলে, নীলস্, বনি জেমস, ডেইভ কজ্ - এদেরকে আপনি স্মুথিং জ্যাজের জাদুকর বলতে পারেন। এদের অনেকে স্যাক্সোফোনিস্ট ও টেম্পোবাদক। স্মুথিং জ্যাজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণ রেডিও ইস্টিশনগুলো। পাঙ্ক জ্যাজের জন্মভূমি বলা চলে লন্ডন আর নিউ ইয়র্ক সিটিকে। সংগীতদল পপ গ্রুপ ফ্রি জ্যাজের সাথে রেগের (reggae) সংমিশ্রণ ঘটায়। পাঙ্ক জ্যাজের পুরোধা জন জমের কথা না বললে অবিচার করা হবে। এম-বেইজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালের দিকে, যখন স্টিভ কোলম্যান, গ্রাহাম হেইনেস, ক্যাসান্দ্রা উইলসন, গেরি অ্যালেন, গ্রেগ ওসবি মিলে নিউ ইয়র্কে নতুন ধরণের সুর ও গান সৃষ্টির জন্য জড়ো হয়। সমসাময়িক আফ্রিকান-আমেরিকান গ্রুভ সংগীত ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের সাথে ঐতিহ্যবাহী সংগীতের মেলবন্ধন করে ওরা। এভাবেই এম-বেইজের সূচনা (Carr et, পৃ-৫০০)।
৬
যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলো না- এবছর পণ করেছি যেভাবেই হোক যাবোই জ্যাজ ফেস্টিভ্যালে। জুলাইয়ের ৩০ তারিখে রওয়ানা দিলাম বিকেলে। প্লাস দঅ আর্ত (place de arts) মেট্রো (সাবওয়ে) থেকে নামলেই হাঁটাপথ, গাড়ি নিয়ে আসলে সমুদয় বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। উৎসব উপলক্ষে দিন দশেক ধরে আশপাশের অনেক রাস্তা গাড়ি না চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। হতেই হবে। কারণ:
যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলো না- এবছর পণ করেছি যেভাবেই হোক যাবোই জ্যাজ ফেস্টিভ্যালে। জুলাইয়ের ৩০ তারিখে রওয়ানা দিলাম বিকেলে। প্লাস দঅ আর্ত (place de arts) মেট্রো (সাবওয়ে) থেকে নামলেই হাঁটাপথ, গাড়ি নিয়ে আসলে সমুদয় বিপদে পড়ার সম্ভাবনা আছে। উৎসব উপলক্ষে দিন দশেক ধরে আশপাশের অনেক রাস্তা গাড়ি না চলাচলের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত। হতেই হবে। কারণ:
- ৩০ টি দেশ থেকে ৩০০০ হাজারের-ও অধিক শিল্পী অংশ নেয়।
- ৫০০ এর অধিক কনসার্ট, এগুলোর মধ্যে ৪০০ বিনামূল্যে।
- প্রায় ২.৫ মিলিয়ন দর্শক, এদের মধ্যে ৩৪ ভাগ হলো বহিরাগত দর্শক।
- ৪০০ তালিকাভুক্ত সাংবাদিক
- ১০ টি বহিরাঙ্গন স্টেইজ
- ১০ টি কনসার্ট হল।
ত্রিশ বছর ধরে ফি বছর আয়োজন করা এই উৎসব ২০০৪ সালে ঢুকে গেছে গিনিস বুকে, পৃথিবীর বৃহত্তম জ্যাজ সংগীত উৎসব হিসেবে (Tourist Guide).
৭
অ্যালেইন সিমার্ড (Alain Simard) ১৯৭০ সালের দিকে কসমস প্রডাকশনের সাথে কাজ করতে লাগলেন মন্ট্রিয়ালে বিভিন্ন শিল্পীদের জড়ো করার জন্য। ১৯৭৭ সালে সিমার্ড আন্দ্রে মেনার্দ ও ডেনিস ম্যাকক্যান এর সাথে যোগ দিয়ে স্পেক্ট্রা সিন নামে একটি সংস্থা গড়ে তুলেন, মূল উদ্দেশ্য ছিলো মন্ট্রিয়ালে একটি গ্রীষ্মকালীন উৎসবের আয়োজন করা যেখানে সারা পৃথিবী থেকে শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন।
স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটে দুই বছর পরেই ১৯৭৯ সালে। তবে টাকাকড়ির অভাবে বিশাল কোনো যজ্ঞের আয়োজন করা যায় নি, কেবল থিয়েটার-সেন্ত-দেনিসে দুই রাতের প্রদর্শনী হয়।
তবে আজকের জ্যাজ উৎসব বলে যেটাকে জানি তার সমাবেশ ঘটে ১৯৮০ সালে, সিবিসি রেডিও থেকে অ্যালেইন দঅ গ্রোসবোয়া ও রেডিও-ক্যুবেকের অর্থায়নে। ১২০০০ হাজার দর্শক শ্রোতা নিয়ে সূচনা হয় প্রথম উৎসবের, আজ-ও বিকশিত। উৎসবের ইতিহাস সম্পর্কে একটি চমৎকার স্মৃতিচারণ দেখতে পাবেন এখানে।
মূলত জ্যাজ উৎসব বলা হলে-ও আরো বিভিন্ন ঘরানার সংগীত কনসার্ট হয়। আছে ব্লুজ, সোল, হিপ-হপ, ল্যাটিন জ্যাজ, ব্রাজিলিয়ান সংগীত, আফ্রিকান, রেগেই, সমসাময়িক সংগীত, ইলেক্ট্রোনিকা ইত্যাদি।
৮
আমাদের দেশের শিল্পীরা-ও তো অংশ নিতে পারে! লোকগীতি, পল্লিগীতি, বাউল গান, লালন গান, আদিবাসী সংগীত- প্রভৃতির রয়েছে সুদীর্ঘ সমৃদ্ধ ইতিহাস, জড়িয়ে আছে অনেক নৈপথ্য টানাপোড়েন, ঠিক জ্যাজের ইতিহাসের মতন। সংগীতের লয়টা-ও কাছাকাছি। দেশিয় সংস্কৃতি, বিশেষ করে সংগীতকে আরো ব্যাপকভাবে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার অনন্য সুযোগ হতে পারে এই উৎসব। আগস্ট থেকে কনসার্টের জন্য তালিকা-নিবন্ধন শুরু হয়। যেকোনো দল বা শিল্পী নিয়মানুসারে অংশগ্রহণ করতে পারেন। আমি অপেক্ষায় রইলাম কোনো একদিন বাঙলা শুনবো বলে...
৯
কনসার্ট স্টেইজ
চত্বর
নীড়
পথিক ও পথ
মেয়াও
শুধু গান আর গান
অবহেলা
টুংটাং
তোমার কৌশল দেখাও
দেখো দেখো আমাদের মজা দেখো
জ্যাজ ফেস্টিভালের মহানায়কেরা
- Dave Brubeck
- Stéphane Grappelli
- Leonard Cohen
- Miles Davis
- Keith Jarrett
- Oliver Jones
- Ella Fitzgerald
- John McLaughlin
- Antonio Carlos Jobim
- Pat Metheny
- Chick Corea
- Diana Krall
- Tony Bennett
- Vic Vogel
- Herbie Hancock
- Paco de Lucia
- Astor Piazzolla
- Ray Charles
- Aretha Franklin
- Charlie Haden
- Oscar Peterson
- Wynton Marsalis
- Uzeb
- B.B King
Festival International de Jazz de Montréal timeline
এবারের পুরস্কৃত শিল্পীগণ
এবার উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের উল্লেখযোগ্য অনেকের জীবনী পাবেন এখানে।
তথ্য সহায়িকা
About - Festival International de Jazz de Montréal. Montreal International Jazz Festival. ২০১১. Montreal Jazz Festival 32nd Anniversary Album Souvenir, 2011.
Yeats, William Butler। Before the World Was Made। http://quotations.about.com/cs/poemlyrics/a/Before_The_Worl.htm
Carr, Ian, Fairweather, Digby, Priestley, Brian। The Rough Guide Jazz, ২য় সং., ২০০০। পৃ-৫০০।
The Birth of Jazz। http://www.montrealjazzfest.com/history/Default.aspx
Carr, Ian, Fairweather, Digby, Priestley, Brian। The Rough Guide Jazz, ২য় সং., ২০০০। পৃ-৫০০।
The Birth of Jazz। http://www.montrealjazzfest.com/history/Default.aspx
Montreal International Jazz Festival (Festival International de Jazz de Montréal). Montreal Tourist Guide. http://montreal.streetviewtours.com/montreal-festivals-events/montreal-international-jazz-festival
No comments:
Post a Comment