১
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালত শুক্রবার Riviera town of Villeneuve-Loubet শহরটি ছাড়া-ও প্রায় আর-ও ৩০ টি শহরের সৈকতে বুরকিনি নামক পোষাক পরিধানের বিরুদ্ধে করা জরিমানা ও আইনকে বাতিল করেছে, এবং বলেছে যে এইসব শহরের মেয়রগণ তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বুরকিনি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করেছেন।
বুরকিনি হচ্ছে ইরান-বংশোদ্ভুত লন্ডন (যুক্তরাজ্য) প্রবাসী একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের করা এক ধরণের পোষাক, মুসলিম নারীরা যেনো সৈকতের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তাদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য পোষাক পরিধান করে সেই কথা মাথায় রেখে পোষাকটি করা, অর্থাৎ, নারীদের চুল ও শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বক ঢেকে রাখে, যা বিকিনি কিংবা অন্যান্য সমুদ্রসৈকতে পরিহিত পোশাকের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালতের এই আইনকে বেআইনী ঘোষণা যতোটা ধর্মীয় আচারের প্রতি সম্মান দেখানো তারচেয়ে বরং এই ঘোষণা নারী স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনীয়।
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালত শুক্রবার Riviera town of Villeneuve-Loubet শহরটি ছাড়া-ও প্রায় আর-ও ৩০ টি শহরের সৈকতে বুরকিনি নামক পোষাক পরিধানের বিরুদ্ধে করা জরিমানা ও আইনকে বাতিল করেছে, এবং বলেছে যে এইসব শহরের মেয়রগণ তাদের ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে বুরকিনি নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করেছেন।
বুরকিনি হচ্ছে ইরান-বংশোদ্ভুত লন্ডন (যুক্তরাজ্য) প্রবাসী একজন ফ্যাশন ডিজাইনারের করা এক ধরণের পোষাক, মুসলিম নারীরা যেনো সৈকতের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তাদের বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য পোষাক পরিধান করে সেই কথা মাথায় রেখে পোষাকটি করা, অর্থাৎ, নারীদের চুল ও শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বক ঢেকে রাখে, যা বিকিনি কিংবা অন্যান্য সমুদ্রসৈকতে পরিহিত পোশাকের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
ফ্রান্সের সর্বোচ্চ আদালতের এই আইনকে বেআইনী ঘোষণা যতোটা ধর্মীয় আচারের প্রতি সম্মান দেখানো তারচেয়ে বরং এই ঘোষণা নারী স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনীয়।
২
ঘটনাটি অনেকটা এইরকম: আইনের পোষাক পরিহিত চার-পাঁচজন পুলিশ অস্ত্রের মুখে একটি সৈকতে একজন মুসলিম নারীকে তার বুরকিনি পোষাক খুলতে বাধ্য করছেন এবং অনেককে এই পোষাক পরিধানের কারণে জরিমানা করেছে। ফ্রান্স সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র, এবং জনসাধারণের সম্মুখে ধর্মীয় আচার কিংবা ধর্মীয় ব্যাপার নির্দেশ করে এমন পোষাক পরার বিরুদ্ধে আইন ও নীতি রয়েছে, এবং কোনো সরকারী আধা-সরকারী কর্মচারী ধর্মীয় পোষাক পরতে পারবে না। ফ্রান্সের এইসব উপকূল বা সৈকত-প্রধান শহরে বুরকিনি ও হিজাব জাতীয় পোশাকের নিষিদ্ধকরণ সাম্প্রতিককালে ইসলামিক মৌলবাদি ও সন্ত্রাসী সংগঠন আইসিস আল কায়েদা- এদের হামলার ফলে অতিরিক্ত সতর্কতা ছাড়া-ও মূলত সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বুরকিনি ও এই ঘরনার পোষাক মূলত নারীদের দাসত্বকে (ধর্মীয় ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি) প্রতিনিধিত্ব করে, এবং ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সাথে যায় না, এই পোষাক মূলত বিপদজনক (যেহেতু আড়ালে কী বা কে লুকিয়ে আছে)।
ঘটনাটি অনেকটা এইরকম: আইনের পোষাক পরিহিত চার-পাঁচজন পুলিশ অস্ত্রের মুখে একটি সৈকতে একজন মুসলিম নারীকে তার বুরকিনি পোষাক খুলতে বাধ্য করছেন এবং অনেককে এই পোষাক পরিধানের কারণে জরিমানা করেছে। ফ্রান্স সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ একটি রাষ্ট্র, এবং জনসাধারণের সম্মুখে ধর্মীয় আচার কিংবা ধর্মীয় ব্যাপার নির্দেশ করে এমন পোষাক পরার বিরুদ্ধে আইন ও নীতি রয়েছে, এবং কোনো সরকারী আধা-সরকারী কর্মচারী ধর্মীয় পোষাক পরতে পারবে না। ফ্রান্সের এইসব উপকূল বা সৈকত-প্রধান শহরে বুরকিনি ও হিজাব জাতীয় পোশাকের নিষিদ্ধকরণ সাম্প্রতিককালে ইসলামিক মৌলবাদি ও সন্ত্রাসী সংগঠন আইসিস আল কায়েদা- এদের হামলার ফলে অতিরিক্ত সতর্কতা ছাড়া-ও মূলত সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বুরকিনি ও এই ঘরনার পোষাক মূলত নারীদের দাসত্বকে (ধর্মীয় ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতি) প্রতিনিধিত্ব করে, এবং ফ্রান্সের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সাথে যায় না, এই পোষাক মূলত বিপদজনক (যেহেতু আড়ালে কী বা কে লুকিয়ে আছে)।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য আইনবিভাগের উপর থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রভাব বিস্তার দূরে রাখা জুরুরি, বিশেষ করে ফ্রান্সের মতো রাষ্ট্র যা সাংবিধানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ এবং বহুজাতিক ও বহুসংস্কৃতির (ও বহুধর্মের)। তবে একটি রাষ্ট্র যেমন নির্ধারণ করে দিতে পারে না আপনি কোন ধর্ম পালন করবেন, কী ধর্মীয় আচরণ পালন করবেন, তেমনি রাষ্ট্রের উচিত নয় নির্ধারণ করে দেয়া যে কোন ধরণের ধর্মীয় আচরণ বা পোষাক পরিধান করা যাবে না, সেইক্ষেত্রে রাষ্ট্র ব্যক্তিগত চিন্তা, নির্বাচন, ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে।
ফ্রান্স তার ভূখণ্ডে বুরকিনি বোরকা ইত্যাদি ধর্মীয় পোষাকের নিষিদ্ধকরণ করতে পারে, কিন্তু দেখতে হবে যে এই ধরণের আইন স্বার্বজনীন কিনা, অর্থাৎ অন্যান্য ধর্মের পোষাকের ক্ষেত্রে-ও নিষেধ প্রযোজ্য কি না। দেখা গেলো যে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের (যেমন নানদের পোষাক) পোষাক সৈকতে নিষিদ্ধ নয় (যদিও মেয়ররা বলছেন এই আইন অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে-ও প্রযোজ্য, কিন্তু তারা সেইসব পরিধান করে গেলে জরিমানার শিকার হন না, কিংবা অস্ত্রের মুখে কাপড় পরিত্যাগের জন্য চাপে পড়েন না। সর্বোপরিভাবে, বুরকিনির নিষেধ বৈষম্যমূলক এবং নারীদের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা।
৩
পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশ ও সমাজে (তা পৃথিবীর যেখানেই হোক, বঙ্গদেশ বলুন কিংবা উন্নত দেশ ফ্রান্স) যেনো সবাই নির্ধারণ করে দিতে চায় নারীরা কী পরবে কী পরা উচিত, কীভাবে চলবে কেনো চলবে এইসব! কিন্তু কেনো? ইতিহাস ও সমাজ জুড়ে দেখা যায় যে ক্ষমতাবান ও লিঙ্গবাদী পুরুষরা নির্ধারণ করে দিতে চায় নারী তার শরীরের কতোটুকু অংশ দেখাবে, কিংবা দেখাবে না। নারীদের মেক-আপ পরা “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঢেকে দেয়”, কিংবা মেক-আপ না পরলে আবার নারী আবেদনময়ী হয়ে উঠেন না; উঁচু জুতো পরা নিষেধ, কিংবা উঁচু জুতো না পরা-ও “অপেশাদারিত্ব।“ এইসব নির্বাচনের নির্ধারণ কেনো কেবল নারীকেই বহন করতে হয়। একজন পুরুষ স্যুট কিংবা হিপি-জিপসী পোষাক পরবে কিনা তা নির্ধারণ যতোটা না করা হয় নারীদের ক্ষেত্রে তার হাজার গুণ বেশি হয়, কারণ হিসেবে তা হতে পারে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ইত্যাদি। অর্থাৎ, পুরুষ, এবং তাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নির্ধারণ করে দিতে চায় একজন নারী কী ধরণের পোষাক পরবে, কতোটুকু পরবে; তাই ফ্রান্সের বুরকিনি নিষেধের বিরুদ্ধে বলা এককভাবে কেবল ধর্ম-স্বাধীনতা কিংবা ধর্ম-নিরপেক্ষতার জন্য বলা নয়, বরং নারী-স্বাধীনতার জন্য বলা। একজন নারী যদি সমাজ, স্বাধীনতা ও ইতিহাস বুঝে-ও বুরকিনি পরতে চায় তবে তাকে সেই স্বাধীনতা দেয়া উচিত, তেমনি একইভাবে অন্য নারী যদি সৈকতে সময় উপভোগের জন্য বিকিনি পরতে আগ্রহী তবে তাকে-ও সেই স্বাধীনতা দেয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ও নিধার্মিক লোক হিসেবে আমি চাই না জনসম্মুখে ধর্মীয় পোষাকের উপস্থিতি, কিন্তু এই পোষাক যদি আরো দশ মানুষের মনে শান্তি বজায় রাখে এবং আমার চলার পথের অন্তরায় না হয় তবে আমি এইটুকু মেনে নিতে পারি।
পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশ ও সমাজে (তা পৃথিবীর যেখানেই হোক, বঙ্গদেশ বলুন কিংবা উন্নত দেশ ফ্রান্স) যেনো সবাই নির্ধারণ করে দিতে চায় নারীরা কী পরবে কী পরা উচিত, কীভাবে চলবে কেনো চলবে এইসব! কিন্তু কেনো? ইতিহাস ও সমাজ জুড়ে দেখা যায় যে ক্ষমতাবান ও লিঙ্গবাদী পুরুষরা নির্ধারণ করে দিতে চায় নারী তার শরীরের কতোটুকু অংশ দেখাবে, কিংবা দেখাবে না। নারীদের মেক-আপ পরা “প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ঢেকে দেয়”, কিংবা মেক-আপ না পরলে আবার নারী আবেদনময়ী হয়ে উঠেন না; উঁচু জুতো পরা নিষেধ, কিংবা উঁচু জুতো না পরা-ও “অপেশাদারিত্ব।“ এইসব নির্বাচনের নির্ধারণ কেনো কেবল নারীকেই বহন করতে হয়। একজন পুরুষ স্যুট কিংবা হিপি-জিপসী পোষাক পরবে কিনা তা নির্ধারণ যতোটা না করা হয় নারীদের ক্ষেত্রে তার হাজার গুণ বেশি হয়, কারণ হিসেবে তা হতে পারে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, পারিবারিক ইত্যাদি। অর্থাৎ, পুরুষ, এবং তাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ নির্ধারণ করে দিতে চায় একজন নারী কী ধরণের পোষাক পরবে, কতোটুকু পরবে; তাই ফ্রান্সের বুরকিনি নিষেধের বিরুদ্ধে বলা এককভাবে কেবল ধর্ম-স্বাধীনতা কিংবা ধর্ম-নিরপেক্ষতার জন্য বলা নয়, বরং নারী-স্বাধীনতার জন্য বলা। একজন নারী যদি সমাজ, স্বাধীনতা ও ইতিহাস বুঝে-ও বুরকিনি পরতে চায় তবে তাকে সেই স্বাধীনতা দেয়া উচিত, তেমনি একইভাবে অন্য নারী যদি সৈকতে সময় উপভোগের জন্য বিকিনি পরতে আগ্রহী তবে তাকে-ও সেই স্বাধীনতা দেয়া প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে একজন ধর্মনিরপেক্ষ ও নিধার্মিক লোক হিসেবে আমি চাই না জনসম্মুখে ধর্মীয় পোষাকের উপস্থিতি, কিন্তু এই পোষাক যদি আরো দশ মানুষের মনে শান্তি বজায় রাখে এবং আমার চলার পথের অন্তরায় না হয় তবে আমি এইটুকু মেনে নিতে পারি।
৪
এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বুরকিনি নিষিদ্ধকরণ ফ্রান্সের ইসলামভীতি ও অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে নির্দেশ করে। ফ্রান্সের রয়েছে ইসলামভীতি ও অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দীর্ঘ ইতিহাস, ২০০৫ থেকে বোরকা নিষিদ্ধ ফ্রান্সে। অন্যান্য আরবদেশ থেকে ভাষাগত মিলের জন্য ফ্রান্সে অনেক অভিবাসী এলে-ও ফ্রান্স চায় এইসব অভিবাসীরা ফ্রান্সের সংস্কৃতিকে মেনে নিবে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে। অর্থাৎ, অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নীতি হচ্ছে আত্তীকরণ (assimilation), মানিয়ে নেয়া বা সমঝোতানীতি (accommodation) নয়। অথচ আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা কানাডার অভিবাসীদের ইতিহাস ও নীতি (এবং নানাবিধ গবেষণা) নির্দেশ করে যে মানিয়ে নেয়া বা সমঝোতানীতি হচ্ছে উত্তম, মূল ভূখণ্ডের নীতি ও সংস্কৃতিকে অভিবাসীরা যেমন নিজেদের করে নেন তেমনি অভিবাসীদের সংস্কৃতি ও চর্চার প্রতি-ও মূল ভূখণ্ডের শ্রদ্ধা অথবা প্রশ্রয় থাকে। অভিবাসীদের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ এখানে-ও হয়, তবে ফ্রান্সে বর্ণবাদটা সাজানো হয় ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে, এই যা। তাইতো নিউ ইয়র্কে আপনি পাবেন চায়না টাউন, ইতালিয়ান টাউন ইত্যাদি নামে এক সংস্কৃতির অভিবাসীদের ছোট ছোট সমষ্টিস্থান কিংবা কানাডা তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে শিখদের তাদের মাথার পাগড়ি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, কিংবা অতি সাম্প্রতিককালে আরসিএমপি পুলিশদের ক্ষেত্রে নারী সদস্যগণ হিজাব পরতে পারবেন।
বুরকিনি নিষেধ ও সেই আইনকে বেআইনী ঘোষণাসহ ইত্যাদি বিষয়ক তুলে ধরে যে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও চর্চায় হস্তক্ষেপ করে রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে সেইসব নীতি একান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি বিরুদ্ধ হয়ে ওঠে কিনা। ধর্মের নামে নারীর স্বাধীনতায় যেমন অনাধিকার চর্চা করা উচিত নয়, তেমনি নারীর যেকোনো নির্বাচনের অধিকারে অনাধিকার চর্চা করা-ও অকাম্য। নারীকেই নারীর পোষাক নির্বাচন করতে দেন।
এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বুরকিনি নিষিদ্ধকরণ ফ্রান্সের ইসলামভীতি ও অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণকে নির্দেশ করে। ফ্রান্সের রয়েছে ইসলামভীতি ও অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ দীর্ঘ ইতিহাস, ২০০৫ থেকে বোরকা নিষিদ্ধ ফ্রান্সে। অন্যান্য আরবদেশ থেকে ভাষাগত মিলের জন্য ফ্রান্সে অনেক অভিবাসী এলে-ও ফ্রান্স চায় এইসব অভিবাসীরা ফ্রান্সের সংস্কৃতিকে মেনে নিবে নিজেদের সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে। অর্থাৎ, অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ফ্রান্সের নীতি হচ্ছে আত্তীকরণ (assimilation), মানিয়ে নেয়া বা সমঝোতানীতি (accommodation) নয়। অথচ আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা কানাডার অভিবাসীদের ইতিহাস ও নীতি (এবং নানাবিধ গবেষণা) নির্দেশ করে যে মানিয়ে নেয়া বা সমঝোতানীতি হচ্ছে উত্তম, মূল ভূখণ্ডের নীতি ও সংস্কৃতিকে অভিবাসীরা যেমন নিজেদের করে নেন তেমনি অভিবাসীদের সংস্কৃতি ও চর্চার প্রতি-ও মূল ভূখণ্ডের শ্রদ্ধা অথবা প্রশ্রয় থাকে। অভিবাসীদের প্রতি বর্ণবাদী আচরণ এখানে-ও হয়, তবে ফ্রান্সে বর্ণবাদটা সাজানো হয় ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে, এই যা। তাইতো নিউ ইয়র্কে আপনি পাবেন চায়না টাউন, ইতালিয়ান টাউন ইত্যাদি নামে এক সংস্কৃতির অভিবাসীদের ছোট ছোট সমষ্টিস্থান কিংবা কানাডা তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে শিখদের তাদের মাথার পাগড়ি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, কিংবা অতি সাম্প্রতিককালে আরসিএমপি পুলিশদের ক্ষেত্রে নারী সদস্যগণ হিজাব পরতে পারবেন।
বুরকিনি নিষেধ ও সেই আইনকে বেআইনী ঘোষণাসহ ইত্যাদি বিষয়ক তুলে ধরে যে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও চর্চায় হস্তক্ষেপ করে রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চাইলে খেয়াল রাখতে হবে সেইসব নীতি একান্ত ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতি বিরুদ্ধ হয়ে ওঠে কিনা। ধর্মের নামে নারীর স্বাধীনতায় যেমন অনাধিকার চর্চা করা উচিত নয়, তেমনি নারীর যেকোনো নির্বাচনের অধিকারে অনাধিকার চর্চা করা-ও অকাম্য। নারীকেই নারীর পোষাক নির্বাচন করতে দেন।
No comments:
Post a Comment