পঞ্চম অধ্যায়: সার্বিক তত্ত্ব (The Theory Of Everything)
মহাবিশ্ব সম্পর্কে সবচেয়ে অবোধগম্য বিষয় হচ্ছে যে মহাবিশ্ব আসলে বোধগম্য।
আলবার্ট আইনস্টাইন
মহাবিশ্ব বোধগম্য কারণ এটি কিছু বৈজ্ঞানিক নিয়মাবলি দ্বারা পরিচালিত হয়; অর্থাৎ, এর আচরণের প্রতিরূপ তৈরি করা যাবে। কিন্তু সেই প্রতিরূপ কিংবা নিয়মাবলিই বা কী কী? মহাকর্ষই সর্বপ্রথম বল যেটিকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছিলো। ১৬৮৭ সালে প্রকাশিত নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র মতে, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু অন্য প্রতিটি বস্তুকে নিজ ভরের সমানুপাতিক বলে আকর্ষণ করে। সূত্রটি সেই সময়ের বোদ্ধামহলে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলো, কারণ এটি প্রথমবারের মতো নির্দেশ করে যে মহাবিশ্বের অন্তত একটি বিষয়কে নির্ভুলভাবে নিরূপণ করা সম্ভব এবং সেটি করার জন্য সূত্রটি গাণিতিক কলাকৌশল বাতলেছিলো। সুনির্দিষ্ট কিছু প্রাকৃতিক নিয়মাবলি বিদ্যমান- এই ধারণা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে গ্যালিলিওর ধর্মীয় মতবাদের বিরুদ্ধাচরণ করার বিতর্ককে আবার জিইয়ে তোলে। যেমন, বাইবেলে জশুয়ার প্রার্থনার গল্পে বর্ণিত আছে যে সে প্রার্থনা করেছে যেনো সূর্য ও চাঁদ নিজ গতিপথে থেমে যায়, ফলে সে কেনানের এমোরাইটদের সাথে লড়াই শেষ করার জন্য বাড়তি দিনের আলো পাবে। জশুয়ার পুস্তক মতে, প্রার্থনার কারণে সূর্য প্রায় একদিন স্থির হয়ে ছিলো। এখন আমরা জানি যে এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন থেমে যাওয়ার কথা। পৃথিবী যদি থেমেও যায়, তবে নিউটনের সূত্র অনুযায়ী বন্ধনমুক্ত সবকিছু পৃথিবীর আগের বেগে (বিষুবরেখা সংলগ্নে ঘন্টায় ১,১০০ মাইল বেগে) ছুটতে থাকার (এবং ছিটকে বের হয়ে আাসার) কথা, ফলে বিরাট মাশুল গুণতে হতো বটে। এইসব কিছু অবশ্য নিউটনকে দুশ্চিন্তায় ফেলে নি, কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে ঈশ্বর ইচ্ছে করলে মহাবিশ্বের কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ করতে পারেন, এবং করেছিলেন-ও বটে।